অভিযোগের ধাক্কায় অমর হয়ে উঠছেন তিনি!
কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ‘আয়া রাজ’ তাঁর প্রশ্রয়েই— দলের অন্দরে কান পাতলেই এমন কথা শোনা যায়, শাসক দলের স্থানীয় কাউন্সিলর অমর রায় সম্পর্কে।
অথচ, সেই আয়ারাই রবিবার রাতে তাঁর বাড়ি ঘিরে শুধু বিক্ষোভই নয়, রীতিমতো ভাঙচুরও চালাল।
আয়াদের তোলাবাজির দাপটে এক সময় নাভিশ্বাস উঠেছিল ওই হাসপাতালের রোগীদের। চাপের মুখে সেই আয়ারা লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়ে ছিলেন যে, তৃণমূলের ওই কাউন্সিলের কড়া নির্দেশ মেনেই তাদের ‘তোলা’ আদায় করতে হয়। যার সিংহ ভাগ যায় অমরের কাছে।
কিন্তু, ছবিটা বদলাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই আয়াতন্ত্রই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরল অমরের কাছে। রবিবার মাঝরাতের ওই ঘটনায় আয়াদের সঙ্গেই সামিল হন পাড়াপড়শিও বলে জানা গিয়েছে।
আয়াদেরই এক জন জানাচ্ছেন, কিছু দিন ধরেই অমর এবং তার দুই ছেলে বহিরাগতদের নিয়ে এসে ধমকানি-শাসানি দিচ্ছিল, রবিবার এক জনের গায়ে হাত উঠতেই ফেটে পড়েন তারা। অভিযোগ, বিক্ষোভ দেখাতে গেলে দলবল নিয়ে পাল্টা তাদের ওপর চড়াও হয় অমর রায়ের চার পুত্র। অমরের এক ছেলে শূন্যে গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়েই পুলিশ অমরের ছোট ছেলে প্রীতম এবং তার এক সঙ্গীকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত সাত বছর ধরে আয়া রাজ চলছে অমরের হাত ধরে। এলাকার মহিলাদের তিনি আয়া হিসেবে কাজের সুযোগ করে দিতেন বলে অভিযোগ, বিনিময়ে মোটা টাকা দিতে হত তাঁকে। এ ছাড়াও রোজ রোগী প্রতি ২০ টাকা করে দিতে হত তাঁকে। বখশিসেরও বখরা না দিয়ে রেহাই ছিল না। সেই জন্য নিজের কয়েকজন আয়াকে নজরদারির দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
অমরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় অবশ্য আয়াদের কাজে লাগিয়ে তোলা আদায়ই নয়, রয়েছে চিকিৎসক নিগ্রহ থেকে সরকারি হাসপাতালে ওষুধ-কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকা এবং অ্যাম্বুল্যান্স সিন্ডিকেট তৈরিরও।
ক্রমাগত অভিযোগ আসতে থাকায় পুজোর আগে ওই হাসপাতালে এসে অমরকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মুকুল রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের কোনও সমর্থক দলনেত্রীর নির্দেশ বিরুদ্ধ কিছু করলে আমি তো বটেই, দলও তার পাশে নেই।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরী দত্ত আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, ‘‘অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।’’
আর অমর রায়? এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কারা য়ে আমার বাড়িতে হামলা চালাল জানি না। তার কারণও বুঝতে পারছি না। আর পুলিশই বা কেন আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গেল তা-ও বুঝতে পারছি না।’’