ভাঙা গাড়ির সামনে ফিরোজা বেগম। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বিধায়কের সরকারি অ্যাম্বাসেডর গাড়ির সামনে এসে ফিল্মি কায়দায় সশব্দে ব্রেক কষে থামল ঝকঝকে স্করপিও। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তা থেকে ছিটকে নামল জনা কয়েক, হাতে খেটো বাঁশ, উইকেট। তার পর থমকে থাকা বিধায়কের গাড়ির কাচের উপর নেমে এল আক্রমণ।
ভেঙে-তুবড়ে কাচ-ভাঙা গাড়িতে থরথর করে কাঁপছেন মহিলা বিধায়ক। তাঁর সঙ্গে থাকা সরকারি দেহরক্ষী ততক্ষণে উধাও।
তিনি ফিরোজা বেগম, মুর্শিদাবাদের রানিনগর কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক। রক্তাক্ত ফিরোজাকে সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কাঁপতে কাঁপতে সেখানেই ফিরোজার অভিযোগ, ‘‘আমাকে খুন করতে চেয়েছিল। এর পিছনে রয়েছে রানিনগরে ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আমিনুল হাসান।’’
কিন্তু কেন? ফিরোজা বলছেন, ‘‘নির্বাচনে হারাতে পারেনি, দলবদলের প্রশ্নেও স্পষ্ট না বলে দিয়েছিলাম। তার পর থেকেই আমাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ আমিনুল অবশ্য সে সব ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন, বলছেন, ‘‘বিধায়ককে এলাকায় দেখতেই পাওয়া যায় না। দলের কর্মীদেরই ফিরোজার উপরে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরাই বিধায়কের উপরে হামলা চলিয়েছিল। এখন নাটক করছেন উনি।’’ সোমবার, বেলডাঙ্গা ব্লক অফিসে ঢোকার মুখে আক্রান্ত হয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক সফিউজ্জামান। মঙ্গলবার সেই তালিকায় উঠল ফিরোজার নাম।
আরও পড়ুন: নগ্ন করে নিগ্রহ চিত্র-সাংবাদিককে
কংগ্রেসের দাবি, এ দিন প্রায় তিন কিলোমিটার তাড়া করে তাঁর অ্যাম্বাসেডর গাড়ি আটকে হামলা চালায় শাসকদলের লোকজন। গাড়ির ভাঙা কাচের টুকরোয় ফিরোজার মাথা, পিঠ, হাত রক্তাক্ত হয়ে যায়। তবে ওই আক্রমণের সময়ে ফিরোজার চালক ও নিরাপত্তা রক্ষী পালিয়ে গিয়েছিল কেন? প্রশ্ন উঠেচে তা নিয়েও।
এ দিন আমিনুল-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে দৌলতাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ফিরোজা বেগম। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। ফিরোজা বলছেন, “আমাদের এক কর্মী আলতাফ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তির তাঁকে দেখতেই বহরমপুর যাচ্ছিলাম।” সেই সময়ে ভৈরব সেতুর কাছে তাঁর গাড়ির আটকায় ওই ছুটন্ত স্করপিও। তার পরেই বাঁশ-লাঠি-লোহার রড নিয়ে ওই হামলা। তাঁর দাবি, ‘‘গাড়ি ভাঙচুর করেই থেমে থাকেনি, ওরা নির্দেশ দিল ‘নেমে আয়!’ তার পর বাঁশ পেটা করল আমায়।’’ ফিরোজার দাবি, বছর খানেক আগে, রানিনগরেও একই ভাবে তৃণমূলের লোকজন তাঁর উপরে হামলা চালিয়েছিল।
এ দিন বহরমপুরের বিধায়ক কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘এই দূর্বৃত্তায়নের জবাব দেবে মানুষই।’’ যা শুনে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলছেন, “ফিরোজা গোলমাল পাকাতে চেয়েছিলেন বলেই স্থানীয় মানুষ উত্তেজিত হয়ে তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেছে।”
মনোনয়নের ভাঙচুরের তালিকায় এ দিন জায়গা করে নিয়েছে চাপড়াও। সেখানে ব্লক জুড়ে অবিরাম সন্ত্রাসের ধারা এ দিনও বজায় ছিল। বিরোধীদের দাবি, বিভিন্ন দলীয় দফতরে ঢুকে এ দিনও ভাঙচুর ও মারধর করেছে তৃণমূল। শান্তিপুরেও একই ভাবে বিরোধীদের মেরে হাসপাতালে ভর্তি করেছে তৃণমূল। কল্যাণী থেকেও এসেছে মারধরের অভিযোগ, তবে সব জায়গা থেকেই তৃণমূলের তরফে পাল্টা জানানো হয়েছে, ‘বিরোধীদের মিথ্যে অভিযোগ।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy