Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভাত নিয়ে রাজনীতি, অভিযোগ

তাদের অভিযোগের মূলে রয়েছে শান্তিপুর ব্লক প্রশাসন-পরিচালিত ‘কমিউনিটি কিচেন’ বা যৌথ রান্নাঘর, যা গত বুধবার থেকে চৌধুরীপাড়ায় চালু হয়েছে। দু’বেলা সেখানে গরম ভাত, ডাল, শাক, তরকারি রান্না করে প্রায় গোটা গ্রামকে বিনা পয়সায় খাওয়ানো হচ্ছে।

চৌধুরীপাড়ায় প্রশাসনের তরফে চালু যৌথ রান্নাঘর। নিজস্ব চিত্র

চৌধুরীপাড়ায় প্রশাসনের তরফে চালু যৌথ রান্নাঘর। নিজস্ব চিত্র

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

ভাত খাওয়ানোর রাজনীতি চালিয়ে শাসক দল চৌধুরীপাড়ার মানুষের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের মরিয়া চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলল বিরোধী দলগুলি।

তাদের অভিযোগের মূলে রয়েছে শান্তিপুর ব্লক প্রশাসন-পরিচালিত ‘কমিউনিটি কিচেন’ বা যৌথ রান্নাঘর, যা গত বুধবার থেকে চৌধুরীপাড়ায় চালু হয়েছে। দু’বেলা সেখানে গরম ভাত, ডাল, শাক, তরকারি রান্না করে প্রায় গোটা গ্রামকে বিনা পয়সায় খাওয়ানো হচ্ছে। এর আগে কখনও চৌধুরীপাড়া এমন যৌথ রান্নাঘর দেখেনি। মঙ্গলবার রাত থেকে বিষমদে এলাকায় একের পর এক মৃত্যু শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনিক তৎপরতায় রান্নাঘর শুরু হয়ে যায়। প্রায় ৯০০ লোকের বাস এই এলাকায়। তার মধ্যে কম করেও পাঁচশো লোক প্রতিদিন দু’বেলা এখানে খাওয়াদাওয়া করছেন।

শান্তিপুরের প্রান্তিক গ্রাম চৌধুরীপাড়া। মূলত নিম্নমধ্যবিত্ত, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের বাস সেখানে। এলাকার একাধিক চোলাই ভাটিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল অনেকেরই। সম্প্রতি সেখানে বিষমদে ১২ জনের মৃত্যু হওয়ার পর ক্ষোভে ছড়িয়েছিল এলাকায়। অভিযান চালিয়ে ভাটি বন্ধ করার কিছু দিনের মধ্যেই সেগুলি চালু হয়ে যেত বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগ এনেছিলেন। বিরোধীদের দাবি, সেই ক্ষোভে প্রলেপ দিতেই এলাকায় যৌথ রান্নাঘর বসিয়ে বাসিন্দাদের দু’বেলা বিনা পয়সায় পেট ভরে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। কারণ, লোকসভা ভোটের আগে শাসক দল এলাকায় কোনও সমস্যা চাইছে না। যদিও প্রশাসনিক কর্তা বা শাসক দলের নেতা—কেউই অভিযোগ মানতে চাননি।

বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন, “প্রশাসনের ব্যর্থতা থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে। সেটা ঢাকাচাপা দিতে আর মানুষের রাগ সামলাতে ওরা এখন ভাত খাওয়াচ্ছে। এটা ভাতের রাজনীতি।” সিপিএমের শান্তিপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সৌমেন মাহাতো-র কথায়, “শুধু বিনা পয়সায় ভাত খাওয়ালেই হবে না। এলাকার উন্নয়নে জোর দিতে হবে প্রশাসনকে।”

এর পাল্টা এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এতগুলি মৃত্যু মর্মান্তিক। প্রশাসন সেখানে দাঁড়িয়ে সুস্থ পরিবেশ ফেরানোর চেষ্টা করছে, আর বিরোধীরা তা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে। মানুষ এটা বোঝে। তাই বিজেপি-র প্রতিনিধিদের এলাকায় মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল।’’ শান্তিপুরের বিডিও সুমন দেবনাথ বলেন, “অনেক বাড়িতে একমাত্র উপার্জনকারী মারা গিয়েছিলেন। বহু পরিবারে মানুষ অসুস্থদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটোছুটি করছিলেন। তাঁদের বাড়ি হাঁড়ি চড়েনি। বাচ্চারা অভুক্ত ছিল। গ্রামবাসীদের কথা ভেবেই কমিউনিটি কিচেন চালু করা হয়েছিল।”

গ্রামের মধ্যেই প্রাথমিক স্কুল। তার সামনে ছোট রাস্তা। এক পাশে ছটপুজোর জন্য ম্যারাপ বাঁধা হয়েছিল। তার ত্রিপল, কাপড় খুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁশ খোলা হয়নি। সেখানেই একটা আচ্ছাদন দিয়ে চলছে খাওয়াদাওয়া। রান্না হচ্ছে চৌধুরীপাড়া প্রাথমিক স্কুলের বারান্দায়। এলাকারই দশ জন রান্নার কাজ করছেন। এলাকার মানুষই পরিবেশনে হাত লাগাচ্ছেন। প্রতিদিন দুপুর একটা নাগাদ খাওয়াদাওয়া শুরু হচ্ছে। রাতের খাওয়া শুরু হচ্ছে আটটা নাগাদ। প্রথম দিন মেনুতে ছিল খিচুড়ি আর তরকারি। এর পর থেকে দুই বেলাই দেওয়া হচ্ছে ভাত, ডাল, শাক, চচ্চড়ি, আলু ফুলকপির তরকারি বা বাঁধাকপির তরকারি। স্থানীয় বাসিন্দা সাহেব মাহাতো, সন্ধ্যা মাহাতোরা বলছেন, “এমন ঘটনা ঘটার পর এলাকার কারওরই রান্না করার মানসিকতা ছিল না। এটা করে ভালই হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Community Kitchen TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE