Advertisement
E-Paper

কাদায় গাঁথা গরুর গাড়ি টেনে তুলল গ্রামের লোকজন

পালকি বাহকদের ‘হুম হুম হুমনা’র তালেই গরুর গাড়ির কনভয় থেকে ভেসে আসছে বিয়ের গীত। সাবেক রানিনগর থানার গোকুলপুর গ্রাম থেকে কাদায় মোড়া কাঁচা রাস্তা মাড়িয়ে গরুর গাড়ি’ চলেছে বহরমপুর থানার নওদাপাড়া গ্রামে।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সামনে তিনটি ঘোড়া, কাদায় লটপট করছে তারা। তার পরে, জনা দশেকের নাচের দল। পিছনে পালকিতে বর আর নিতবর। বাহকেরা নাগাড়ে টাল সামলে ‘হুম হুম হুমনা’ বলে চলেছেন।

পিছনে চলেছে গোটা বারো গরু গাড়ির কনভয়। শ্রাবণ মাস। বৃষ্টি বাদলের উপর ভরসা নেই। সব ক’টি গরুর গাড়ির উপর টোপর, মানে ছই দেওয়া। পুরুষ বরযাত্রীর গরুর গাড়ি টোপরের দুই মুখ খোলা। মহিলাদের গাড়ির টোপরের দুই মুখে কিন্তু শাড়ি দিয়ে পর্দা টাঙানো।

পালকি বাহকদের ‘হুম হুম হুমনা’র তালেই গরুর গাড়ির কনভয় থেকে ভেসে আসছে বিয়ের গীত। সাবেক রানিনগর থানার গোকুলপুর গ্রাম থেকে কাদায় মোড়া কাঁচা রাস্তা মাড়িয়ে গরুর গাড়ি’ চলেছে বহরমপুর থানার নওদাপাড়া গ্রামে। হঠাৎ হইহই চিৎকার। বছর পঞ্চাশেক আগের সেই দুর্ঘটনা আজও গোকুলপুর গ্রামের রহমান মোড়লের মনে ঝলসে ওঠে—

গ্রামীণ গীতকারদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছে ‘আরে ছুড়ি নাচনী কাকে নাচন দেখালি/ আমি কি নাচন জানি নে, বাপের ভয়ে নাচি নে।। ‘আরে ছুড়ি নাচনী কাকে নাচন দেখালি/ আমি কি নাচন জানি নে, চাচার ভয়ে ভয়ে নাচি নে।। আরে ছুড়ি নাচনী কাকে নাচন দেখালি/ আমি কি নাচন জানি নে, ভাই-এর ভয়ে নাচি নে।।‘আরে ছুড়ি নাচনী কাকে নাচন দেখালি/ আমি কি নাচন জানি নে, মাজার ব্যথায় নাচি নে।।’ মাজার ব্যথায় নাচ বন্ধ হল।’’ তবে সেটা মানুষের নয়। দুলকি চালের গরুর গাড়ির নাচ।

প্রায় কোমর সমান কাদা। তার উপরে বৃষ্টি নেমেছে অঝোরে। আর আধ ঘণ্টা যেতে পারলেই কনের বাড়ি পৌঁছে যেত বর ও বরযাত্রী’। এক হাঁটু কাদার রাস্তায় এক পাশের সরু এক ফালি পথ হাঁটার যোগ্য। সেই পথ দিয়ে পালকি, ঘোড়া নাচ ও খান বারো গরুর গাড়ি পার হয়েছে। গীতিকারদের গাড়ির চাকা কিন্তু কাদায় পুঁতে গিয়েছে। দু’টি গরুর একটি কাদায় শুয়ে পড়েছে। কাদার মধ্যে গাড়িটি এক দিকে হেলে পড়েছে। কাদায় ডুবে যাওয়ার আতঙ্কে গীত বন্ধ। রহমান মোড়ল বলেন, ‘‘তখন গ্রাম সমাজ আজকের মতো দলীয় রাজনৈতিক বিবাদে দীর্ণ ছিল না। ফলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাঁশ কাঁধে সেই গাড়ি তুলে দেন নওদাপাডা গ্রামের নতুনপাড়ার এক দল জোয়ান ছেলে।’’

পালকি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, নৌকার মতো বিয়ের বাহন হিসাবে একদা হাতির চল ছিল। আর্থিক কারণে অনেকেই বাস্তবে হাতি ভাড়া করতে না পারলেও মনের জগতে বাসনা পূরণ করতেন। তার প্রমাণ মেলে গ্রামীন বিয়ের গীতে। একটি গানের প্রথন দু’টি লাইন, ‘‘এত না সোহাগের বেটি আমার জান কারে সুপিবো। ওই যে হস্তি-সোয়ারে আসছে গো লবাব জান তাকে সুপিবো...।’

লোকসংস্কৃতির গবেষক শক্তিনাথ ঝায়ের ‘মুসলমান সমাজের বিয়ের গীত’ গন্থের একটি গানে সেকালে বিয়ে করে মশাল জ্বেলে হাতির পিঠে বরের বাড়ি ফেরার উল্লেখ মেলে— ‘ঐ আসছে ঐ আসছে হস্তি মশাল জ্বেলে মা/ বুবু দিব না।/ ফুটো ঘটিটা বাহির কর বহিন বিদায় করি মা/ বুবু দিব না।।’

সেই সবে অতীতে বড় বেশি ধুলো পড়েছে। রাস্তা পাকা হয়েছে, ভলভো বাসে বরযাত্রী ছুটছে। শুধু কান পাতলে এখনও গরুর গাড়ির কেঁচোড় কোঁচড় শোনা যায় বুঝি এখনও!

Marriage Murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy