Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আসাননগর

মদের পেটিতে ‘বল’, ফাটল খেলতে যেতেই

কখনও বাঁশবাগান তো কখন ঝোপেঝাড়ে, কখনও আবার মাঠেঘাটে, বোমা উদ্ধারের ঘটনা লেগেই রয়েছে। কখনও তুষের হাঁড়িতে লুকিয়ে রাখা তো কখনও বালতির মধ্যে কেরোসিন চোবানো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

কখনও বাঁশবাগান তো কখন ঝোপেঝাড়ে, কখনও আবার মাঠেঘাটে, বোমা উদ্ধারের ঘটনা লেগেই রয়েছে। কখনও তুষের হাঁড়িতে লুকিয়ে রাখা তো কখনও বালতির মধ্যে কেরোসিন চোবানো।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে একের পর এক বোমা উদ্ধারের ঘটনায় ছোটদের নিয়ে ভয় দানা বাঁধছিলই বাসিন্দাদের মনে। শনিবার সত্যি হল সেটাই। সকালে আসাননগর কলেজ মাঠের কাছে বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা ফেটে জখম হল দু’টি শিশু।

আর পাঁচটা দিনের মতোই সকালে রান্না চাপিয়েছিলেন চন্দনা অধিকারী। পাশে বই স্লেট নিয়ে পড়তে বসেছিল বছর ছ’য়েকের পাপাই। কিছুক্ষণ পরে পাশের বাড়ির বন্ধু নীলেশ আসায় বই ফেলে খেলতে বেরিয়ে যায় পাপাই। এর পরই আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। রান্না ঘরের পাশেই ছোট্ট একটা ফাঁকা জায়গায় খেলছিল দু’জনে। শব্দটা শুনে রান্না ফেলে ছুটে যান চন্দনাদেবী। দেখেন দু’জনের শরীরই ভেসে যাচ্ছে রক্তে। আতঙ্কে চোখ দু’টো যেন বেরিয়ে আসছে দুই খুদের। সঙ্গে সঙ্গে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় আসাননগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মাথায় ও পায়ে আঘাত লেগেছে দু’টি শিশুরই। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

ঠিক কী ঘটেছিল? চন্দ‌নাদেবী বলেন, ‘‘বাচ্চা দু’টো ঘরের পাশেই খেলছিল। তখনই ঘটনাটা ঘটে।’’ তিনি বলেন, ‘‘একটা মদের পেটির ভিতরে বোমাটা রাখা ছিল। ওরা সেটা বুঝতে পারেনি। পেটিতে পড়ে থাকতে দেখে বাচ্চারা যেমন করে, খেলাচ্ছলে জিনিসটা দেখেছিল।’’ আসলে বোমাটাকে বল ভেবে খেলতে গিয়েছিল দুই বন্ধু। তখনই প্রচন্ড শব্দে সেটা ফেঁটে যায়।

কিন্তু বোমাটা ঠিক কী ভাবে রান্নাঘরের কাছে এল, তা পরিষ্কার নয় কারও কাছেই। তবে এলাকার মানুষের অভিযোগ, এই কলেজ মাঠে প্রতি দিন সন্ধ্যের পরে স্থানীয় কিছু যুবকের ঠেক বসে। মদ খাওয়া চলে। ভোটের সময় কোন রাজনৈতিক দল তাদের হয়তো ব্যবহারও করেছে। ভোটের সময় কাজে না লাগায়, তাঁরাই হয়তো মদের বাক্সের ভিতরে ওই বোমা রেখে দিয়েছিল।

চন্দনাদেবী বলেন, ‘‘ভাবুন এক বার। অল্পের জন্য বাচ্চা দু’টো বেঁচে গেল। এর থেকেও তো বড় কোনও ক্ষতি হতে পারত? যারা এমনটা করে, তাদের ঘরে কি সন্তান নেই। এক বারও কি এমন কাজ করার আগে তাদের মুখটা ভেসে উঠল না।’’ একই ভাবে আতঙ্কিত নীলেশের পরিবারও।

এ বারের নির্বাচনে আসাননগর ছিল অন্যতম উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা। সমাজবিরোধীদের দৌরাত্মও এখানে বেশি। সেই হিসেবে ভোটের আগে বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য যে কোনও দলই এদের ব্যবহার করতে পারে বলেই মনে করছেন এলাকার মানুষ। আর তাদের কাছে যে বোমা মজুত থাকবে সেটা বলাই বাহুল্য। এর আগেও রানাঘাটের আশতলা, আনুলিয়া, কল্যাণীর মাঝেরচর এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। বল ভেবে খেলতে গিয়ে আহত হয়েছে একাধিক শিশু। মারাও গিয়েছে। কিন্তু তাতেও সম্বিত ফেরেনি বড়দের। ভোটের ‘খেলায়’ জেতার নেশায় তারা মজুত করেছে বোমা।

কিন্তু বারবার একই ঘটনা সত্ত্বেও পুলিশের হুশ ফেরে না কেন? জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এটা সম্ভব নাকি? মাঠে-ঘাটে-জঙ্গলে পড়ে থাকা বোমা খুঁজে বের করতে গেলে কী বিরাট পরিকাঠামো লাগবে সেটা অনুমান করতে পারছেন? তার ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। মানুষ সচেতন না হলে, এটা কোনও ভাবেই আটকানো সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

asanagar bomb blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE