হাসপাতালে সাহেব। —নিজস্ব চিত্র
খিলখিলিয়ে উঠছে ছেলেটা।
এ কোল থেকে ও কোলে ফিরছে আর কারণে, অকারণে খিলখিলিয়ে উঠছে।
হাসির ঢেউ গিয়ে আছড়েছে ‘মায়েদের’ মুখেও। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে এক মায়ের আলতো বকুনি, ‘‘দুষ্টু।’’
ছেলের বয়স মেরেকেটে দু’মাস। এই বয়সেই মন কেড়েছে মায়েদের। তার এমনই ‘ক্যারিশমা’ যে, ফাঁক পেলে তার সঙ্গে দু’দণ্ড আলাপ করে যাচ্ছেন হাসপাতালের তাবড় তাবড় চিকিৎকও।
এ ভাবেই ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে হেসেখেলে দিন কাটছে ‘সাহেব’-এর।
১৪ নভেম্বরের রাতে এক দল লোক আসন্নপ্রসবা এক মহিলাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। নাম জিজ্ঞাসা করায় ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে ওই প্রসূতি নাম বলেছিলেন—‘রিনা’। ওই রাতেই এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিস্থিতি বিচার করে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
তারপর থেকে সদ্যোজাতের ঠাঁই হয় ডোমকল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। সুপার প্রবীর মাণ্ডির জানান, প্রথমে ওই শিশুকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন তাঁরা। তখনই সব দেখে এগিয়ে আসেন হাসপাতালের নার্সেরা। তাঁরাই ওই শিশুর দেখভালের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। সবাই মিলে শিশুর নাম রাখেন —‘সাহেব’।
তবে নিয়ম মেনে জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউই সাহেবকে কাছ ছাড়া করতে নারাজ। সাহেবকে ছাড়ার কথা উঠলে মন ভার হয়ে ওঠে ওই হাসপাতালের নার্স প্রকৃতি পাল, মুন্নি শর্মা, বীথিকা ঘোষদের। তাঁদের কথায়, ‘‘মাস দেড়েকে সকলেই আমরা ওর মা হয়ে উঠেছি। ওকে ছাড়তে হবে ভাবলে গলার কাছে কষ্টটা দলা পাকিয়ে ওঠে।’’
তাই সুপারের কাছে প্রকৃতির আকুতি, ‘‘স্যার, কিছু একটা করুন না, যেন সাহেব কাছেই থাকে। ওর কোনও অসুবিধা হতে দেব না।’’ মায়ের আকুতিতে সাড়া দেয় ছেলেও। কম্বলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা দুই হাত দিয়ে আরও জাপ্টে ধরে মাকে।
মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy