Advertisement
E-Paper

বিয়ে করবে না, প্রধানের কাছে বালিকা

পাশের ইটলে গ্রামে কিশোরীর বাবার একটি সেলুন আছে। পেশার সূত্র ধরেই তিনি নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরির বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে কিশোরীর বিয়ের ঠিক করেন। পাত্রেরও বেথুয়াডহরি বাজারে সেলুন আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৩২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আর পাঁচটা দিনের মতোই সকালবেলা কালীরহাট বাজারে দলীয় কার্যালয় খুলে বসেছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। দু-চার জন দলীয় কর্মীও সবে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। তখনই কাঁচুমাচু মুখে এসে দাঁড়ায় দুই কিশোরী। তাদেরই এক জন বলে, “আমায় বিয়ে দিতে চাইছে। আমি বিয়ে করব না। পড়তে চাই।”

কথাটা শোনার পর এক মুহূর্ত দেরি করেননি চক দিকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ইন্দ্রজিৎ দাস। ফোন করেন কোতোয়ালি থানায়। খবর পেয়ে চলে আসে পুলিশ। কিশোরী আর তার বান্ধবীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা হয় থানায়। ফোন করে ডেকে পাঠানো হয় কিশোরীর পরিবারকে। আর থানায় বসে পুলিশ অফিসারদের সামনেই কিশোরী বাবা-মাকে জানিয়ে দেয়, “আমি কোনও ভাবেই বিয়ে করব না। আমি পড়তে চাই।”

পাশের ইটলে গ্রামে কিশোরীর বাবার একটি সেলুন আছে। পেশার সূত্র ধরেই তিনি নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরির বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে কিশোরীর বিয়ের ঠিক করেন। পাত্রেরও বেথুয়াডহরি বাজারে সেলুন আছে।

ঘটনার সূত্রপাত দিন সাতেক আগে। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে পাত্রী দেখতে আসেন ওই যুবক। আগে থেকে নাবালিকা কিশোরীকে কিছুই জানানো হয়নি বলে তার দাবি। পাত্রপক্ষের সামনে কিছু না বললেও পরে তীব্র প্রতিবাদ করে চক দিকনগর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ওই নাবালিকা। জানিয়ে দেয় কোনও মতেই সে এখনই বিয়ে করতে রাজি নয়। সে পড়া শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু কোনও কথাই শুনতে নারাজ ছিল মেয়েটির পরিবারের লোকজন। উল্টে শুরু হয় মানসিক চাপ দেওয়া। নাবালিকাকে ঘরের ভিতরে আটকে রাখা হয় বলে তার অভিযোগ।

শনিবার একপ্রকার মরিয়া হয়েই সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে টিউশন পড়তে যাওয়ার নাম করে। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়ে সে গোটা বিষয়টি খুলে বলে তার পাড়াই বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রভা মণ্ডলকে। সবটা শুনে প্রভা তাকে পরামর্শ দেয় পঞ্চায়েত প্রধানকে বিষয়টি জানাতে। প্রভাই তাকে নিয়ে আসে প্রধানের কাছে।

এ দিন কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসারের ঘরে বসে প্রভা বলে, “আমাদের গ্রামে আশাকর্মীরা আমাদের নিয়ে বসেছিলেন একদিন। সেখানে তাঁরা জানিয়েছিলেন যে আটারো বছরের আগে কোনও মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে আমরা যেন প্রধান বা পুলিশকে খবর দিই। আমি সেটাই করেছি। কোনও ভাবেই নাবালিকা বিয়ে হতে দেওয়া যাবে না।”

আর বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ওই নাবালিকা বলে, “আমরা তিন বোন। আমিই বড়। সবাই বলছে আমি বিয়ে না করলে নাকি বোনেদের সমস্যা হবে। কিন্তু আমার জীবনটা তো নষ্ট করে দিতে পারি না।”

তার পরেই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলে ওঠে, “স্যর, বাবা-মাকে ভাল করে বলে দেবেন যেন আমায় বিয়ে না দিয়ে পড়তে দেয়।”

আর দেড়টা বছর পার করে দিতে পারলেই তো কন্যাশ্রীর এককালীন টাকা পাওয়া যাবে। তার উপরে নাবালিকা মেয়ে বিয়ে দেওয়াও বেআইনি কাজ। তার পরেও কেন এখনই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলেন? প্রশ্ন শুনে কিছুটা থতমত খেয়ে যান কিশোরীর বাবা। বলেন, “একটা ভাল ছেলে পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই রাজি হয়ে গেলাম। তবে এমন ভুল আর হবে না।”

সবটা শুনে প্রধান ইন্দ্রজিৎ দাস বলছেন, “ভাগ্যিস ওরা অমার কাছে এসেছিল!”

Child Marriage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy