E-Paper

লগ্নি সংস্থার মালিক নেই, দাঁড়িয়ে শুধু অসম্পূর্ণ  অট্টালিকা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুভ্রকান্তির কথায় বিশ্বাস করে তাঁর সংস্থায় টাকা জমা করেছিলেন এলাকার অনেকেই। কালীনারায়ণপুর বাজারে এখন বন্ধ পড়ে রয়েছে তাঁর অফিস।

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪৭
শুভ্রকান্তির অসমাপ্ত ইমারত। শনিবার কালীনারায়ণপুরে।

শুভ্রকান্তির অসমাপ্ত ইমারত। শনিবার কালীনারায়ণপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

প্রথমে একটি শেয়ার কেনাবেচার সংস্থায় চাকরি। তার পর নিজের শেয়ার কেনাবেচার সংস্থা খোলা। আর সেখান থেকেই পা রাখা অর্থলগ্নির কারবারে।

গত কয়েক বছরের মধ্যে এই ভাবেই ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন নদিয়ার কালীনারায়ণপুরের বাসিন্দা শুভ্রকান্তি নাগ ওরফে বাবাই। তাঁর সঙ্গে এই কারবারে জড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূলের সুপ্রকাশ দেবনাথও। দু’জনেই আপাতত বেপাত্তা।

শনিবার রানাঘাট ১ ব্লকের কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুর পঞ্চায়েত অফিস ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখনো খাড়া রয়েছে শুভ্রকান্তির নির্মীয়মাণ অট্টালিকার একাংশ। কয়েক কাঠা এলাকা নিয়ে সুবিশাল ইমারত তৈরি হচ্ছিল সেখানে। সেই কাজ অবশ্য বন্ধ অনেক দিনই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি এখানে এই নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছিলেন শুভ্রকান্তি। সেখান থেকে কিছুটা এগোলেই তাঁর পৈতৃক বাড়ি। সেটি অবশ্য তৈরি এই সব কারবারের বহু আগে। বড় ফটক পার করে ভিতরে সুবিশাল বাড়ি। শুভ্রকান্তির বাবা-কাকারা এখনও সেখানেই থাকেন। এ দিন অবশ্য ডাকাডাকি করেও সাড়া মেলেনি কারও।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুভ্রকান্তির কথায় বিশ্বাস করে তাঁর সংস্থায় টাকা জমা করেছিলেন এলাকার অনেকেই। কালীনারায়ণপুর বাজারে এখন বন্ধ পড়ে রয়েছে তাঁর অফিস। তবে অফিস থেকে পৈতৃক বাড়ি, সর্বত্রই বৈভবের ছাপ স্পষ্ট। এলাকার একটি দুর্গাপুজাতেও শুভ্রকান্তির সক্রিয় ভূমিকা ছিল। গত কয়েক বছর ধরেই পঞ্চায়েত অফিসের বিপরীতে পাঁচিল ঘেরা মাঠে ওই দুর্গাপুজোয় জমকালো ‘থিম’ হয়েছে। এক সময়ে আয়োজক ক্লাবের সম্পাদক পদে ছিলেন শুভ্রকান্তি। পুজোয় টাকাও ঢালতেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েত অফিসের বিপরীতে এই বিরাট মাঠ শুভ্রকান্তিদের পরিবারের। এক প্রান্তে একটি গ্যারাজ। বেপাত্তা হওয়ার আগে দিন কয়েক শুভ্রকান্তের সঙ্গে এখানেই ছিলেন সুপ্রকাশ। এখন অবশ্য সেটি তালাবন্ধ। মাঠের পাঁচিলের একাধিক দরজাতেও তালা। ভিতরে এখনও দাঁড়িয়ে পুজোমণ্ডপের বাঁশের কাঠামোর একাংশ। আয়োজক ক্লাবের কেউ এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের দাবি, শুভ্রকান্তি কয়েক বছর যাবৎ ক্লাবের কোনও পদে নেই। মাঠটি তালাবন্ধ থাকায় মণ্ডপ খোলা যাচ্ছে না।

কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের প্রধান সুপ্রকাশ দেবনাথ গত নভেম্বরে এলাকা ছাড়ার সময় জানিয়েছিলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছেন। যদিও এর পর থেকে তাঁর আর হদিস নেই। শুভ্রকান্তির সংস্থায় পরিচালন সমিতির অন্যতম পদাধিকারী ছিলেন এই সুপ্রকাশ। কালীনারায়ণপুরের দেবনাথ পাড়ার বাড়িতে বর্তমানে রয়েছেন শুধু সুপ্রকাশের দাদা তপন দেবনাথ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তান। তপন এলাকায় একটি ছোটখাটো হোটেল চালান। ও দিম তিনি বলেন, "ভাই সেই ভাবে কোনও কাজকর্ম করত না। কখনও-সখনও আমার হোটেলে গিয়ে হয়তো বসত। তা-ও নিয়মিত নয়। আমার সঙ্গে পরের দিকে তেমন কথা হত না। বাড়িতেও বেশি থাকত না, রাতে তো নয়ই।” তাঁর দাবি, “বাড়ি ছাড়ার আগে ভাই বলে যায়, চিকিৎসার জন্য ভেল্লোর যাচ্ছে। তার পর থেকে আর কোনও যোগাযোগ নেই।"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalinarayanpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy