Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জিন্‌স-শার্টে ‘ইউনিফর্ম’ বানিয়ে স্কুলে শিক্ষকেরা

পোশাক বিতর্কে নাম জড়িয়ে স্কুলের শিক্ষিকাদের আদালত অবধি যেতে হয়েছে। শিক্ষকদের অবশ্য কখনওই পোশাক নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি। তবু শিক্ষক দিবসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এ বার থেকে সব শিক্ষক নির্দিষ্ট পোশাক পরেই স্কুলে আসবেন।

‘ইউনিফর্ম’ পরে স্কুলে শিক্ষকেরা। ছবি: নিজস্ব চিত্র।।

‘ইউনিফর্ম’ পরে স্কুলে শিক্ষকেরা। ছবি: নিজস্ব চিত্র।।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৯
Share: Save:

পোশাক বিতর্কে নাম জড়িয়ে স্কুলের শিক্ষিকাদের আদালত অবধি যেতে হয়েছে। শিক্ষকদের অবশ্য কখনওই পোশাক নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি। তবু শিক্ষক দিবসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এ বার থেকে সব শিক্ষক নির্দিষ্ট পোশাক পরেই স্কুলে আসবেন।

যেমন ভাবা তেমনই কাজ।

আপাতত রোজ নতুন বানানো নীল জিন্‌স আর গোলাপি চেক কাটা সাদা শার্ট পরে আসছেন নদিয়ার মুরুটিয়া থানার কেচুয়াডাঙা বিধানচন্দ্র বিদ্যানিকেতনের শিক্ষকেরা।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক উদয় সিহি বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা চেক জামার সঙ্গে কালো প্যান্ট-স্কার্ট পরলেও শিক্ষকদের নির্দিষ্ট পোশাক ছিল না। কোনও ছাত্র বা ছাত্রী ইউনিফর্ম পরে স্কুলে না এলে তাদের বলতে গিয়ে আমরাও অনেক সময়ে পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়তাম।’’

উদয়বাবু জানান, সেই অস্বস্তি থেকেই বেশ কিছু দিন আগে সকলে মিলে একটা নির্দিষ্ট পোশাকের কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। এ ব্যাপারে পাকা সিদ্ধান্ত হতেই বারো জন শিক্ষক এবং ছ’জন পার্শ্বশিক্ষক প্রত্যেকে প্রায় পনেরোশো টাকা খরচ করে পোশাক বানিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক উত্তম মণ্ডল বা সরোজ রক্ষিতের কথায়, “সরকারের দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের কথা থেকেই আলোচনাটা শুরু হয়েছিল। শিক্ষকদের একটা পোশাক করলে কেমন হয়, তা নিয়ে কথা হতে-হতেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল।’’

নতুন পোশাকে দিব্যি আনন্দ পেয়েছেন প্রবীণ শিক্ষকেরাও। প্রবীণ শিক্ষক হারানচন্দ্র ঘোষের কথায়, “এনসিসি অফিসার হিসাবে ইউনিফর্মের গুরুত্ব আমি বুঝি। এক বছরের মধ্যেই আমি অবসর নেব। তার আগে ছাত্র ও জুনিয়র শিক্ষকদের কাছে এমন একটা পোশাকের প্রস্তাব শুনে রাজি হয়ে যাই। শেষ সময়ে এমন একটা কাজ করতে পেরে আমি খুব খুশি। একই পোশাকে স্কুলের সব শিক্ষককে দেখতেও ভাল লাগছে।”

করিমপুর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক তথা ওই স্কুলের সরকারি প্রতিনিধি মহম্মদ গিয়াসুদ্দিন বলেন, “পোশাক নিয়ে তো কোনও সরকারি নিয়ম নেই। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে সবাই মার্জিত ও রুচিসম্মত পোশাক প্রত্যাশা করে। ওই স্কুলের শিক্ষকেরা যদি সকলে তেমন পোশাক পরেন, সে তো ভালই হল।”

শিক্ষিকাদের জন্য অবশ্য এখনও কোনও পোশাকবিধি নেই। উদয়বাবু বলেন, ‘‘ওঁরা চাইলেও এমন কিছু করতে পারেন। কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।” স্কুলের শিক্ষিকা দুলালি মণ্ডল বা মৌসুমি দফাদারেরা বলেন, “শিক্ষকদের এই পোশাকে স্কুলের চেহারাই বদলে গিয়েছে। আমরাও ভাবছি, এমন কোনও নির্দিষ্ট পোশাক পরে আসা যায় কি না। কারণ, নিয়মশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে পোশাকের একটা ভুমিকা তো থাকেই।”

শালীনতার নামে শিক্ষিকাদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার ফতোয়া নিয়েই বারবার প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আর ওঁরা নিজেরাই ভাবছেন পোশাকবিধি করলে কেমন হয়।

ফারাকটা এখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

teacher Uniform nadia school student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE