ফাইল চিত্র।
এ লড়াই শ্বশুর-জামাইয়ের। এ লড়াইয়ে কেউ কাউকে সূচ্যগ্র জমি ছাড়েন না। এ লড়াইয়ে হেরে যাওয়া মানে পুরোপুরি ‘ইজ্জত কা সওয়াল’।
দিনের শেষে ফুটবলের যে লড়াই উৎসবের চেহারা নেয়। তেহট্টের সীমান্ত ঘেঁষা বেতাই নতুনপাড়ায যে উৎসবকে লোকে অকাল জামাইষষ্ঠী বলেই জানেন। এ বারেও স্বাধীনতা দিবসের সকাল থেকে গ্রামের মাঠে ভেঙে পড়েছিল গোটা গ্রাম। জামাইরা তাতিয়ে গেলেন খেলোয়াড়দের। গ্রামে পা দেওয়ার পরেই শিবির বদল করে মেয়েরা নিলেন বাবার পক্ষ। উঠতি যুবকেরা জামাইবাবুদের সমর্থনে গলা ফাটালেন। আর শাশুড়িরা?
খেলা শেষ না হতেই বাড়ি ফিরে হেঁশেল সামলাতে সামলাতে বলছেন, ‘‘সেই কত দূর থেকে কাজ ফেলে বাবাজীবনেরা ছুটে এসেছেন। ওরাই জিতুক!’’ যা শুনে কপট রাগ দেখিয়ে শ্বশুরমশাইদের বক্তব্য, ‘‘দেখছেন তো, এই একটা ব্যাপারে এলাকার সব ঘরে ঘরে বিভীষণ দেখতে পাবেন।’’
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দিন-রাতের নক আউট ফুটবল প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে বুধবার সকালে। খেলার শেষে অবশ্য হাসছেন শ্বশুরমশাইরা। কারণ, ফাইনালে শ্বশুরদের সমর্থিত দল বেতাই এবিসিডি ক্লাব ৩-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে জামাইদের ক্লাব বেতাই বি আর অম্বেডকর ক্লাবকে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দলকে ট্রফি ও নগদ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
বাবাজীবনেরা বলছেন, ‘‘খেলায় হার-জিত থাকবেই। এ বার আমারা হেরে গেলাম। পরের বার এর বদলা নেব।’’ পাশ থেকে আর এক জনের বক্তব্য, ‘‘মাঠে হারলেও বাড়িতে শান্তি আছে। কারণ, স্ত্রী তো শ্বশুর মশাইয়ের পক্ষ নিয়েছিল!’’
বেতাই নতুনপাড়া মিতালি সঙ্ঘের পরিচালনায় ৪৩ তম ফুটবল প্রতিযোগিতায় ১৬টি দল যোগ দিয়েছিল। খেলার জন্য কাশ্মীর থেকে শ্বশুরবাড়ি আসেন বিএসএফ জওয়ান স্বপন মল্লিক। স্ত্রী রিমা বলেন, “জামাইষষ্ঠীতে প্রতি বার আসা হয় না। ১৫ অগস্ট আমরা চলে আসি। ও তো নিজেও ভাল ফুটবল খেলত।’’ সেই খেলার টানেই স্বপন বিমানে কলকাতা হয়ে বেতাই এসেছিলেন। গুজরাত থেকে এসেছিলেন আর এক জামাই সুভাষ বিশ্বাসও। বুধবার তাঁরা কর্মক্ষেত্রে ফিরেছেন। কিন্তু গ্রামীণ ফুটবলের সঙ্গে জামাইরা জড়িয়ে পড়লেন কী ভাবে? গ্রামের প্রবীণ আশুতোষ দাস জানান, বছর বিশেক আগে ১৬ দলেরই খেলা ছিল। সে বার একটি দল শেষ মুহূর্তে আসেনি। তখন তড়িঘড়ি জামাইদের নিয়ে একটি দল তৈরি করা হয়েছিল। সে বার থেকেই খেলাটা ক্রমশ শ্বশুর ও জামাইদের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্বশুর-জামাই সম্পর্কের ওঠাপড়ায় ফুটবলের ভূমিকা কম নয়। ইসলামপুরের সেই ঘটনা আজও সবার মনে আছে। জামাই ভাল ফুটবলার। খেলার মরসুমে শ্বশুর একটা ফুটবল দল তৈরি করেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, জামাই তাঁর দলেই খেলবেন। কিন্তু প্রস্তাব পাঠাতেই জামাই জানিয়ে দেন, তিনি তাঁর ক্লাব ছাড়বেন না। সেই গণ্ডগোল সালিশি সভায় গড়িয়েছিল। এখন হাসতে হাসতে সেই শ্বশুর বলছেন, ‘‘সে বার ফুটবলে নিয়ে আবেগের বেগটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল।’’ বছর কয়েক আগে রানিনগরের গণ্ডগোল তো আবার ‘অফসাইড-কাণ্ড’ হিসেবেই পরিচিত। সে বার শ্বশুরের গ্রামে খেলতে এসেছে জামাইয়ের দল। অফসাইড নিয়ে মাঠে শুরু হয় তুমুল গণ্ডগোল। জামাইয়ের সম্মান বাঁচাতে দল ভুলে শ্বশুরমশাই জামাইয়ের দলের পক্ষ নেন। গোটা গ্রাম রে রে করে ওঠে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ফুটবলেরই জয় হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy