Advertisement
E-Paper

অনাত্মীয়ের হাতেই ক্ষতে প্রলেপ পেলেন ভবঘুরে

কুন্দন, হাসানুজ্জামান, তোতন-রা ঠিক করে ফেলেছেন, দিন কয়েকের মধ্যে তাঁরাই নিয়ে যাবেন বহরমপুরে। ইতিমধ্যে পরিচয় জানার জন্য ওই যুবকের ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশের কাছেও ছবি দিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। অনাত্মীয় মানুষগুলি লাগাতার কথা বলে তথ্য জানার চেষ্টা করেছেন যুবকের থেকে।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৯
চিকিৎসা শুরুর আগে। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা শুরুর আগে। নিজস্ব চিত্র

রঘুনাথগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া গঙ্গা ব্যারাজের সদর রাস্তার ধারে পড়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে যুবক।

তাঁর পায়ে দগদগে ঘা’য়ের উপর মাছি ভনভন করছে, দীর্ঘদিনের স্নান না-করায় গা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। চুলে ধুলো-নোংরা জমে জট পাকিয়ে গিয়েছে। পরনের লুঙ্গি, জামা তেল চিটচিটে, কালো।

আশপাশ দিয়ে প্রতিদিন কর্মব্যস্ত মানুষের ঢল চলেছে। পড়ে থাকা যুবকের দিকে তাকানোর সময় নেই কারও। চোখ পড়লেও কিছু লোক এড়িয়ে গিয়েছেন, ঘেন্নায় নাকে কাপড় দিয়েছেন। অসংখ্য দোকানও রয়েছে। দোকানদারেরাও গ্রাহ্য করেননি। কেন লোকটি পড়ে রয়েছে, তাঁর শরীর অসুস্থ কিনা— খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনই বোধ করেননি। উল্টে কেউ-কেউ ‘যত রাজ্যের পাগল এসে জুটেছে’ বলে মুখ ঝামটা দিয়েছেন।

কিন্তু পাশ কাটাতে গিয়েও থমকেছিলেন কয়েক জন। মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিতে পারেননি তাঁরা। সহানুভূতি, যত্নবোধের সঙ্গে একটা দায়িত্ববোধ তাঁদের পা আটকেছিল। কাঞ্চনতলা স্কুলের শিক্ষক হাসানুজ্জামান বাপ্পা, বিএড পড়ুয়া রাহুল ঘোষ এবং চাকরির পরীক্ষার পড়াশোনায় ব্যস্ত কুন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে গত শুক্রবার বিকেলে তাঁরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন কাজে রঘুনাথগঞ্জে গিয়েছিলেন। প্রায় একসঙ্গেই তাঁদের চোখ পড়েছিল মাটিতে পড়ে থাকা ভবঘুরের দিকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাঁরা। যুবককে কোনও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বাস স্ট্যান্ড থেকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল বড় জোর ৩০০ মিটার। হাসানুজ্জামান ওই যুবককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন “হাসপাতালে যাবে?” খানি ক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তার পর ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন তিনি।

তিন জনে মিলে ওকে তুলে ধরতেই একটি টোটো এসে দাঁড়িয়েছিল পাশে। টোটোচালক তোতোন শেখ নেমে হাত লাগিয়েছিল তাঁদের সঙ্গে। নিজের টোটোয় সবাইকে বসিয়ে সোজা চলে গিয়েছিলেন জঙ্গিপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। অনেক জোর করেও তাঁকে ভাড়া নেওয়ানো যায়নি। হাসপাতালে তখন ডিউটি করছিলেন শল্য চিকিৎসক ড্যানিয়েল মোস্তাফি। ভবঘুরের অবস্থা দেখে একটুও দেরি করেননি তিনি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে এক্স-রে হয়। তাতেই ধরা পড়ে, যুবকের ডান পায়ের ‘ফিমার বোন’ দু’ টুকরো! কী করে ওই যুবক এই যন্ত্রণা সহ্য করছিলেন তা ভেবে বিস্মিত হয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্লাস্টার হয় পায়ে। অস্থি বিশেষজ্ঞ শৌভিক সাহা তাঁকে পরীক্ষা করেন। তিনি জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে। সে ব্যবস্থা জঙ্গিপুর হাসপাতালে নেই। যেতে হবে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে।

কুন্দন, হাসানুজ্জামান, তোতন-রা ঠিক করে ফেলেছেন, দিন কয়েকের মধ্যে তাঁরাই নিয়ে যাবেন বহরমপুরে। ইতিমধ্যে পরিচয় জানার জন্য ওই যুবকের ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশের কাছেও ছবি দিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। অনাত্মীয় মানুষগুলি লাগাতার কথা বলে তথ্য জানার চেষ্টা করেছেন যুবকের থেকে।

কথা শুনে তাঁদের মনে হয়েছে, সম্ভবত ঝাড়খণ্ড থেকে কোনওভাবে চলে এসেছেন ওই যুবক। ঝাড়খণ্ড প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে পুলিশ। আনাত্মীয় কিছু মানুষের মানবিক ছোঁয়ায় হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ঘরও মিলবে ভবঘুরের।

Vagabond Missing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy