রং-তুলি: দেওয়াল দিয়ে যায় চেনা। ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
হলুদ কাস্তের উপরে লালচে হাতুড়ি, আড়াআড়ি ফেলে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আব্দুল ওদুদ।
দেওয়াল জুড়ে তখন অনন্ত গোধূলিবেলা। পিছন থেকে দেখলে মনে হবে, বিস্তীর্ণ ইজেলের সামনে স্থির এক শিল্পী।
লালটা কি আরও একটু গাঢ় হবে, নাকি হলুদটা চেপে দেব!
সেই সব দেওয়াল রাঙা দিনগুলো কোথায় চুরি করে নিয়ে গিয়েছে দশ-বারো বছরের ডিজিটাল-ভারত!
একটু বাড়িয়ে বললাম কি? সিপিএমের প্রবীণ নেতা হাসছেন, ‘‘কথাটা খাঁটি। তবে ক্ষমতায় থাকলে আমরাও হয়ত আপত্তি জানাতাম!’’ ডিজিটাল-ভারতে আপত্তি তোলে কার সাধ্য? নিজের এক চিলতে উঠোনের কোণায় চুপ করে বসে জালালুদ্দিন বলছেন, ‘‘বছরে এক-দু’খানা ভোট, দিব্যি বাঁচিয়ে রেখেছিল জানেন। বছর দশেক আগে, সেই যে ডিজিটাল না কি যেন ছাই, এসে সব গিলে খেল!’’
ভোট এলেই তখন, রাজনীতির দাদারা হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন জালাল, আব্দুলের বাড়িতে। এ বেলা দেওয়ালে হাত ফুটিয়ে ও বেলায় কাস্তে ধরতেও বাধা ছিল না তাঁদের। জালালা বলছেন, ‘‘দিনে আটশো টাকাও নগদ আয় করেছি।’’
তা নিয়ে, আমরা-তোমরার আস্তিন গোটানোও ছিল না তেমন। বরং ছবিটা ছিল উল্টো, সিপিএমের নেতা বাড়িতে এসে হাত কচলে অনুরোধ করছেন তো রাতে এসে হত্যে দিয়ে পড়ছেন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি।
লম্বা ডায়েরিতে দিনক্খন লিখে, সে এক তৃপ্তির সময় ছিল আব্দুল ওদুদের। মিলত বায়নার আগাম টাকাও। সময়টা বদলে যেতে শুরু করল ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে। ফ্লেক্স, ফেস্টুন, পোস্টার— দখল করে নিল সেই সব উদার দেওয়ালের হাতের কারুকার্য। জালালুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘তখন নিজেকে শিল্পী বলে মনে হত। আমাদের হাতের লেখা দাঁড়িয়ে দেখত এলাকার মানুষ। কোনও দিন ফাঁকা পেতাম না। মাসে দু’একটা দিন ছুটি নিলেও মানুষ হাজির হয়ে যেত বাড়িতে।’’ আর এখন অনেকের মাসে দু’একটা কাজ জোটে বটে তবে তা দিয়ে দশ জনের সংসারে পেট চলে না।
সেই হারানো ছবিটা ফের নতুন করে ফিরেছে যেন এ বার। দুয়ারে পুরভোট। জালাল বলছেন, ‘‘এ বার দেখছি ফের কদর হচ্ছে আমাদের। দিনে শ’পাঁচেক টাকা আয়ও করছেন কেউ কেউ।’’ কেন? ব্যাখ্যাটা দিচ্ছেন, বাম-কংগ্রেস জোটের এক কর্মী, ‘‘বামেদের দিন ফুরিয়েছে, সেই বোলবোলাও নেই, টাকাও নেই। ফলে সস্তায় দেওয়াল লিখানোর দিকে ফের ঝুঁকেছে দলীয় নেতারা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy