Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Sutapa Chowdhury

সুতপা হত্যাকাণ্ডে প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্তের ফাঁসির আর্জি আদালতে, সাজা ঘোষণা বৃহস্পতিবার

গত বছর ২ মে মুর্শিদাবাদের মেসে ফিরছিলেন কলেজছাত্রী সুতপা চৌধুরী। তাঁর পিছু নেন সুশান্ত চৌধুরী। মোট ৪২ বার সুতপার শরীরে কোপ মারেন তিনি। আঙুল কেটে যায় তাঁর নিজের। কিন্তু থামেননি সুশান্ত।

What court says about Sushanta Chowdhury the convicted of Sutapa Chowdhury murder case

সুতপা চৌধুরী এবং সুশান্ত চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ১৮:১৬
Share: Save:

বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ করেছেন সুশান্ত চৌধুরী। বহরমপুরের কলেজছাত্রী খুনে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সুশান্তের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানালেন সরকারি পক্ষের আইনজীবী। চাওয়া হল ফাঁসি। অন্য দিকে, সুশান্তের আইনজীবীর দাবি, আবেগের বশে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তাঁর মক্কেল। তাঁর বয়স কম। তাঁকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হোক। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বুধবার আদালত জানিয়েছে বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা হবে।

বহরমপুরের কলেজছাত্রী খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক, ঘটনার মূল অভিযুক্ত সুশান্ত। মঙ্গলবারই আসামিকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) এবং ২৮এ (অস্ত্র আইনে)-তে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। বুধবার সাজা ঘোষণার শুনানি শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কোনও মহিলাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না, এটাই আসামির মানসিকতা। তাই তিনি প্রত্যাখ্যাত হয়ে কখনও সুতপাকে নকল বন্দুক নিয়ে ভয় দেখিয়েছেন, কখনও খুন করার জন্য ছুরি কিনে তাঁকে আক্রমণ করতে গিয়েছেন।’’

উল্লেখ্য, খুনের ১৫ মাসের মাথায় সুতপা হত্যাকাণ্ডের শুনানিতে মঙ্গলবার বহরমপুরের তৃতীয় দ্রুত নিষ্পত্তি (ফাস্ট ট্র্যাক) আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক সুশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন। শুনানিতে ছিলেন সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় ও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ। ৩৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মৃতার বাবা-সহ সাক্ষ্য দেন ২০২২ সালের ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সাংবাদিক, একটি ই-কমার্স সংস্থার কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং পুলিশ। গোরাবাজার এলাকার বাসিন্দা তথা ওই ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বান্টি ইসলাম আদালতে বলেন, ‘‘চোখের সামনে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখে চার দিন ঘুমোতে পারিনি। অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা হওয়া উচিত। যদি ফাঁসি না হয় তা হলে মেয়েটির উপর চরম অবিচার হবে।’’ এর পর বুধবারের শুনানিতে সরকার পক্ষের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাই কোর্ট এবং উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টের একাধিক রায় তুলে ধরে আসামির ফাঁসির সাজার আর্জি জানান। অন্য দিকে, সুশান্তের আইনজীবী বলেন, ‘‘দু’জনের মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না। পুরোটাই আবেগের বশে করেছেন আসামি। তাই তাঁর সাজা ফাঁসি নয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক।

উল্লেখ্য, গত বছর ২ মে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের শহিদ সূর্য সেন রোড দিয়ে মেসে ফিরছিলেন সুতপা। সিসি ক্যামেরাতে দেখা যায় তাঁকে অনুসরণ করছেন এক যুবক। পরে ওই যুবকের পরিচয় সামনে আসে। তিনি সুশান্ত। মেসের দরজার সামনেই সুতপার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপান ছাত্রীকে। এমন নৃশংস ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। পর দিনই গ্রেফতার হন সুশান্ত। জানা যায়, সুতপার পূর্বপরিচিত তিনি। সম্পর্কের জটিলতার জেরে খুন করেন প্রেমিকাকে।

ঘটনার ৭৫ দিনের মাথায় বহরমপুর আদালতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। অভিযুক্ত সুশান্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন)-সহ একাধিক ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালতে জমা পড়ে ৩৮৩ পাতার চার্জশিট। তাতে ৫৪ জন সাক্ষীর বয়ান ছিল।

সুতপার পরিবারের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকেই একাধিক বার তাঁদের মেয়ের উপর চাপ দিয়েছেন সুশান্ত। অন্য দিকে, পুলিশি তদন্তে উঠে আসে সুতপার উপর রাগ ও হতাশা থেকে এই খুন করেন অভিযুক্ত। পাশাপাশি পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বার বার মিথ্যা বয়ান দেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও সুশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সুশান্তর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুতপা চৌধুরীর। সুতপা সেই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসায় এই কাণ্ড ঘটান অভিযুক্ত। অভিযুক্ত সুশান্তকে খুনের পর নিজের চোখে পালাতে দেখেন দুই সাক্ষী। জানা যায়, খুনের পর পাঁচিল টপকে পালিয়েছিলেন তিনি। এর পর মেসে যান। সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তদন্তে উঠে আসে খুনের লক্ষ্যে সে দিন সন্ধ্যা ৬টায় মেস থেকে বেরিয়েছিলেন অভিযুক্ত। তিনি মেসে ফিরে আসেন সন্ধ্যা ৭টায়। তার পর পালানোর চেষ্টা করেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, সুতপার দেহে ছিল ৪২টি আঘাতের চিহ্ন। আঘাত গুরুতর ছিল বলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রত্যক্ষদর্শীরা সুতপাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখান বলে সুশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরে জানা যায়, সেটি একটি খেলনা বন্দুক। যে ই-কমার্স সংস্থার মাধ্যমে ওই খেলনা কিনেছিলেন সুশান্ত, সেই সংস্থার এক কর্তাও মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন আদালতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE