Advertisement
E-Paper

বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, জামাইষষ্ঠী থেকে কাজে ফিরে নিজের মাথায় গুলি করলেন কৃষ্ণনগরের কনস্টেবল

সোমবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার ১০ মাইল এলাকায় নাকা চেকিংয়ের সময়ে ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সার্ভিস রিভলভার দিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালান পুলিশ কনস্টেবল বিভাস ঘোষ। এখন তিনি এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫ ১৪:০৯
Police Constable

(উপরে) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কনস্টেবল বিভাস ঘোষের পরিবারের মহিলারা। (নিচে) গুলিবিদ্ধ কনস্টেবলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।

রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। ঘুমচোখে ফোন ধরেছিলেন পুলিশ কনস্টেবল বিভাস ঘোষের বোন। ফোনের ও প্রান্ত থেকে দাদার এক সহকর্মী জানালেন, মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন বিভাস। শুনেই ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসেন যুবতী। সঙ্গে সঙ্গে যুবতী ছুটে যান মায়ের কাছে। অন্তঃসত্ত্বা বৌমার স্বাস্থ্যের কথা কথা তাঁকে কিছু জানতে দেননি শাশুড়ি। ছেলের খোঁজ নিতে রাতে এক প্রতিবেশীর কাছে যান প্রৌঢ়া। সেই বাড়ির মেয়ে বিয়ে করেছেন বেলঘরিয়ায়। কৃষ্ণনগরে বাপের বাড়ি এসেছিলেন জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে। ছেলের খোঁজ পাওয়ার জন্য তাঁকেই ধরেন বিভাসের মা। তত ক্ষণে পাড়ায় চাউর হয়ে গিয়েছে, ‘টুবাই (বিভাসের ডাকনাম) নিজেকে গুলি করেছে!’ কী হল হঠাৎ? কেন এমন কাণ্ড ঘটালেন ২৮ বছরের যুবক? প্রশ্ন সকলের।

সোমবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুলিশ জেলার গোপালনগর থানার ১০ মাইল এলাকায় নাকা চেকিংয়ের সময়ে ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সার্ভিস রিভলভার দিয়ে নিজের মাথায় গুলি চালান পুলিশ কনস্টেবল বিভাস। রাতেই বনগাঁ হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে তাঁকে। ওই যুবকের শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। কৃষ্ণনগরের যুবকের পরিবার সূত্রে খবর, জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। সোমবার বেথুয়াডহরি থেকে কর্মস্থলে ফেরেন এবং কাজে যোগ দেন। তার পরেই এই অঘটন! পরিবারের দাবি, রাতেই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বিভাস। শরীরের যত্ন নিতে বলেন তাঁকে। তার পরেই কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গেলেন বিভাস, কারও মাথায় ঢুকছে না।

কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা বিভাস। স্থানীয় হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে কৃষ্ণনগরের একটি স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পর বিজ্ঞানের স্নাতক হিসাবে কলেজ পাশ করেন। পরিবার সূত্রে খবর, বিভাসের স্বপ্ন ছিল স্কুলশিক্ষক হবেন। সে জন্য করিমপুরের একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে বিএড-ও করেছিলেন। পাশাপাশি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। বছর তিনেক আগে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর ওই চাকরিতেই যোগ দেন। কর্মক্ষেত্র উত্তর ২৪ পরগনা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বেথুয়াডহরির বাসিন্দা মৌসুমিকে বিয়ে করেন বিভাস। মৌসুমি এখন অন্তঃসত্ত্বা। বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠী। তাই ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন বিভাস। বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি ঘুরে সোমবার বিকেলে কৃষ্ণনগর থেকে ৪টা ২০ মিনিটের শিয়ালদহ লোকাল ধরে কর্মক্ষেত্রে যান। আর রাতেই জানা যায়, তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন!

কনস্টেবলের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ দাবি করেছেন মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বিভাস। পরিবার অবশ্য তা মানতে চায়নি। তাদের দাবি, পড়াশোনার চাপে একটা সময়ে মানসিক উদ্বেগে ভুগতেন বিভাস। তখন কিছু ওষুধ খেতে হত। কিন্তু কয়েক বছর তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। পারিবারিক জীবনে কোনও অশান্তি বা ঝঞ্ঝাট ছিল না বলেই দাবি করা হয়েছে। বিভাসের মা মামণি ঘোষের কথায়, ‘‘ছোট থেকে ও পড়াশোনায় ভাল। মাধ্যমিকের সময় অতিরিক্ত পড়াশোনা করত। তখন এক বার ডাক্তারবাবু নার্ভের ওষুধ দিয়েছিলেন। কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সে সব। এখন ওর কোনও অসুবিধা নেই। কোনও ওষুধই খেতে হত না।’’

প্রায় একই কথা বলছেন বিভাসের স্ত্রী মৌসুমি। তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের আগে থেকে আমাদের পরিচয়। আমি বলেছিলাম, বিয়েতে আমার বাবা মা টাকা-পয়সা দেবে না কিন্তু। ও তখন বলেছিল, ‘আমার মা-বাবা টাকা চাইলে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাব।’ অশ্রুসজল চোখে ওই বধূ বলেন, ‘‘আমার খুব যত্ন নিয়েছে। কিন্তু নিজে কোনও অসুবিধার মধ্যে আছে কি না, জানায়নি।’’

বার বার ফোন আসছে বিভাসের আত্মীয়দের কাছে। কয়েক জন এসএসকেএম হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন মা ও স্ত্রী। বাড়ির কেউ জানেন না, কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন বিভাস।

Police constable Shoot West Bengal Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy