Advertisement
১৮ মে ২০২৪
গ্রেফতার এক

গয়না দিতে না পারায় স্বামী-ছেলেকে বিষ খাওয়ালো স্ত্রী!

স্বামী ও এগারো মাসের শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। স্বামী স্বপন কুণ্ডু শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর অঙ্কন নামে ওই শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০০:১৩
Share: Save:

স্বামী ও এগারো মাসের শিশু সন্তানকে বিষ খাইয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। স্বামী স্বপন কুণ্ডু শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর অঙ্কন নামে ওই শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। শনিবার রাতে শান্তিপুরের লক্ষ্মীতলা এলাকার ঘটনা।

রবিবার স্বপনবাবুর মা শিপ্রাদেবী বৌমা, তাঁর বাবা বিপদভঞ্জন সিংহ ও দাদার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে জলের ভিতরে বিষ মিশিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবারেই পুলিশ বিপদভঞ্জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই মহিলা এখন সন্তানের সঙ্গে রয়েছেন। শিশুটি সুস্থ হলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। আর এক অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে পেশায় একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক স্বপনবাবুর বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। স্বপনবাবুর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীর চাহিদা প্রচুর। সেই চাহিদা পূরণ না করতে পারার কারণে অশান্তি লেগেই থাকত। এ দিনের ঘটনাও সেই একই কারণে বলে দাবি স্বপনবাবুর।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, দিন কয়েক ধরে একটা নোয়া বাঁধানো নিয়ে স্বপনবাবুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর অশান্তি চলছিল। কিন্তু স্বপনবাবুর পক্ষে সেটা এই মুহূর্তে কিনে দেওয়া সম্ভব নয় বলাতেই অশান্তি আরও বাড়ে। এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে ছেলে অঙ্কনের শরীর খারাপ হয়। তাকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওষুধ দিয়ে রাতেই চিকিৎসক ছেড়ে দেন। শনিবার স্বপনবাবুর স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যান।

স্বপনবাবুর অভিযোগ, ‘‘শনিবার সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়িতে ছেলে-বউকে আনতে গিয়েছিলাম। স্ত্রীকে এক গ্লাস জল আনতে বলি। ছেলে আমার কোলেই ছিল। স্ত্রী জল এনে দিলে ছেলেকে একটু জল দিয়ে আমি নিজেও খাই। তারপরেই গলা-পেট জ্বালা করতে শুরু করে। ছেলেও নেতিয়ে পড়ে। আমার স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাকে আর আর ছেলেকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।’’

ওই ঘটনার পরে দু’জনকেই প্রথমে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ও পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটি এখনও বিপন্মুক্ত নয়।

যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বপনবাবুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। স্বপনবাবুর শাশুড়ির দাবি, ‘‘বিয়ের পরেও পড়াবে বলে আমার মেয়েকে স্বপন বিয়ে করেছিল। কিন্তু গত বছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে আমরা ওকে কলেজেও ভর্তি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা পড়াল না।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য ওরা মেয়ের উপরে নানা ভাবে অত্যাচার করত। এর আগেও একবার পাড়ার লোকজন বসে সমস্যা মিটিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও ওদের অত্যাচার থামেনি। আমাদের ফাঁসানোর জন্য জামাই এমন কাণ্ড করেছে।’’

পড়শিরা অবশ্য এমন ঘটনায় হতবাক। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হত ঠিকই। কিন্তু সেই কারণে যে ওই মহিলা তাঁর স্বামী-সন্তানকে বিষ খাওয়াবে, এটা মানতে পারছেন না অনেকেই। স্থানীয় এক পড়শি বলছেন, ‘‘নেহাতই স্বামীর উপর রাগ করে নিজের সন্তানকে কি কেউ বিষ খাইয়ে মারতে পারে? কোথাও কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে না তো? ছেলেটি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মেয়েটি যে ভাবে পাগলের মতো কান্নাকাটি করছিল তা দেখে আমরা ধন্দে পড়ে গিয়েছি। তবে পুলিশের উচিত তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা সামনে আনা।’’

রানাঘাটের এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরাও গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jwellery killed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE