মাকে খুন করে মৃতদেহের সঙ্গে একই ছাদের তলায় দেড় দিন কাটিয়ে ছিল কল্যাণী বি ব্লকের বসু দম্পতি। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, সেই দেড় দিনে বাড়িতে রান্নাবান্না করে খেয়ে-ঘুমিয়ে আয়েশেই কাটিয়েছিল আনন্দ এবং নীতা। পুরো ঘটনা জানার পর কার্যত তাজ্জব বনে গিয়েছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, বেশ কয়েক মাস আগে দিদির কঙ্কালের সঙ্গে একই ঘরে ছ’ মাস কাটিয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আনন্দ বসুর কোনও মিল নেই। সে ঠাণ্ডা মাথাতেই মা অপর্ণা বসু (৭৫) কে খুন খুন করেছে।
শুধু মা-ই নয়, আনন্দ বসুর বাবার মৃত্যুতেও এখন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে পুলিশ। এতদিন জানা ছিল যে, বছর পাঁচেক আগে আনন্দের বাবা অরুণ বসু বিষ পান করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। কিন্তু, অপর্নাদেবীর আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের ধারণা, সেই মৃত্যুতেও রহস্য রয়েছে। অভিযোগ, বাবার আত্মহত্যায় আনন্দের প্ররোচনা ছিল। অথবা জোর করে তাঁকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। যদিও জেরায় এখনও পর্যন্ত সে কথা সে স্বীকার করেনি। মঙ্গলবার আনন্দের তিন প্রতিবেশী কল্যাণী থানায় এসে অপর্ণার খুনের ঘটনায় তথ্য জানাতে চান। পুলিশ তাঁদের আদালতে নিয়ে যায়। তাঁরা বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। যদিও এই খুনের ঘটনায় আনন্দের স্ত্রী নীতার প্রত্যক্ষ ভাবে সামিল থাকার কোনও প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আনন্দের বাবা ছিলেন, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়র। একটি বড় বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন তিনি। কল্যাণী ছাড়াও মধ্য কলকাতায় তাঁর একটি বড় বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে যার বাজার মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। বরাবরই বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত আনন্দ। পুলিশকে আনন্দ জানিয়েছিল, সে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে। কিন্তু, পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, সে কিছুই করে না। একটি লালবাতি লাগানো গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায়। কোথাও নিজেকে আইএএস, কখনও আইপিএস অফিসার বলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয়। তবে এই পরিচয়ে কোথাও সে কারওর সঙ্গে প্রতারণা করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অপর্ণাদেবীর আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাবার কাছে প্রচুর টাকা দাবি করত আনন্দ। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে ছেলের হুমকি এবং চাপে টাকা দিতে বাধ্য হতেন অরুণবাবু। টাকা না দিলে বাবাকে রীতিমতো মারধর করা হত। যে দিন তিনি আত্মহত্যা করেন, সেদিনও আনন্দ বাবাকে মারধর করেছিল।
বাবার মৃত্যুর পর এ বার টাকার জন্য আনন্দ মায়ের উপর চাপ তৈরি করতে থাকে। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, অপর্নাদেবী টাকা দিতে না চাইলে, তাঁকেও মারধর করত আনন্দ। কিছুদিন ধরেই সে কলকাতার বাড়িটি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য অপর্নদেবীকে চাপ দিচ্ছিল। অপর্নাদেবী কখনও কলকাতার বাড়িতে ছেলের কাছে থাকতেন। আবার কখনও কল্যাণীর বাড়িতেও থাকতেন। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ছেলে-বউমার সঙ্গে কল্যাণীর বাড়িতে এসেছিলেন অপর্নাদেবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy