Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

আদালতে কর্মবিরতি, ভোগান্তি চরমে

আদালতে মামলার পাহাড় জমার প্রতিবাদ নাকি আসলে গরমে ছুটি কাটানোর অজুহাত। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আদালতে যে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ওই আদালতের আইনজীবীরা, তার উদ্দেশ্য নিয়েই উঠে যাচ্ছে প্রশ্ন! মঙ্গলবার থেকে টানা সাত দিনের কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জঙ্গিপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন। এর ফলে ওই আদালতে ১২টি এজলাস টানা সাত দিন বন্ধ থাকবে। যদিও আইনজীবীদের একাংশের দাবি, দিনের পর দিন এই আদালতে মামলার পাহাড় জমছে। ভুক্তভোগী হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০১:০৮
Share: Save:

আদালতে মামলার পাহাড় জমার প্রতিবাদ নাকি আসলে গরমে ছুটি কাটানোর অজুহাত।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আদালতে যে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ওই আদালতের আইনজীবীরা, তার উদ্দেশ্য নিয়েই উঠে যাচ্ছে প্রশ্ন! মঙ্গলবার থেকে টানা সাত দিনের কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জঙ্গিপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন। এর ফলে ওই আদালতে ১২টি এজলাস টানা সাত দিন বন্ধ থাকবে। যদিও আইনজীবীদের একাংশের দাবি, দিনের পর দিন এই আদালতে মামলার পাহাড় জমছে। ভুক্তভোগী হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। তারই প্রতিবাদে তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু, আইনজীবীদেরই আর এক অংশ জানিয়ে দিয়েছেন, এই গরমের দুপুরে আদালতে কাজ করা খুব মুশকিল হচ্ছে। হাইকোর্টে গরমের ছুটি থাকলেও, নিম্ন আদালতে তা নেই। সব আদালতেই এটা চালু হওয়া দরকার।

ফলে, কর্মবিরতির আসল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যে গরমের কারণ দেখিয়ে বীরভূম, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় একই ভাবে কর্মবিরতির পথে হেঁটেছেন আইনজীবীরা। আর আইনজীবীদের এমন সিদ্ধান্তে ঘোর আতান্তরে পড়ছেন বিচার প্রার্থীরা। এই রোদে-গরমে দূরদুরান্ত থেকে আদালতে এসে হয়রান হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বহু মানুষ। জঙ্গিপুর আদালতেও সেই ছবিটা আলাদায় হয়নি। এ দিন জঙ্গিপুর আদালতে এসে ঘুরে গিয়েছেন বহু বিচারপ্রার্থী। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের উপকার করতে গিয়ে তো আইনজীবীরা আরও বড় বিপদে ফেলে দিলেন। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেল। প্রচণ্ড গরমে এমনিতেই বেলা ১১টার পরে বাইরে থাকা যাচ্ছে না। কর্মবিরতির খবর আগাম না জানায় এই রোদে-গরমে বাধ্য হয়েই এ দিন আদালতে এসেছিলেন বহু বিচারপ্রার্থী। আদালতে কোনও কাজ না হওয়ায় তাঁরা বাড়ি ফিরে যান।

জঙ্গিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ সিংহ জানান, কয়েক হাজার মামলার পাহাড় জমেছে জঙ্গিপুরের এসিজেএম আদালতে। আদালতে কেসের দিন পড়ছে তিন থেকে চার মাস অন্তর। বিচারক না থাকায় বন্ধ হয়ে রয়েছে একটি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। একজন সাব জজ ‘সেশন ক্ষমতার অধিকার’ না পাওয়ায় মামলা করতে পারছেন না। ফলে আদালতে এসে হয়রান হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এসিজেএমের সঙ্গে বার বার কথা বলেও কোনও লাভ হয়নি। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আদালতের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ সাদেক রিটু জানান, বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সরকারি আইনজীবীরাও। তাই তাঁরাও বারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আদালতে কাজ করতে পারছেন না। তবে তিনি মেনে নিচ্ছেন যে, এই কর্মবিরতির ফলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেল। মামলাও বিলম্বিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘এই গরমে দুপুরে আদালতে কাজ করাও খুব মুশকিল হচ্ছে। হাইকোর্টে গরমের ছুটি থাকলেও নিম্ন আদালতে তা নেই। সব আদালতেই এটা চালু হওয়া দরকার।’’ আইনজীবীরা জানান, জঙ্গিপুর এসিজেএম আদালতে প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার মামলা আসে। জঙ্গিপুরে এই মুহূর্তে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি মামলা পড়ে রয়েছে। তাই এই কর্মবিরতিতে আখেরে সেই মামলার চাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বহু আইনজীবী।

অসহ্য গরম ও প্রচণ্ড দাবদাহে বিচারপ্রার্থী ও সাক্ষীদের কথা মাথায় রেখে গত সোমবার থেকে ল’ক্লার্কস অ্যাসোসিয়েশনের বোলপুর মহকুমা কমিটির ডাকে বোলপুর আদালতেও কর্মবিরতি পালন হচ্ছে। আর তাদের ডাকা এই কর্মবিরতিকে সমর্থন জানিয়েছে বোলপুর বার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি দেবকুমার দত্ত ও সম্পাদক শ্যামসুন্দর কোনার জানান, ল’ ক্লার্কসদের জন্য বসার কোন জায়গা নেই। কাঠ ফাটা রোদে বিচারপ্রার্থী থেকে শুরু করে আদালতে আসা লোকজনদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। ল’ ক্লার্কস অ্যাসোসিয়েশনের বোলপুর মহকুমা কমিটির সভাপতি মনোরঞ্জন দাস এবং সম্পাদক বিপিন কুমার মৃধা জানান, নানুর, ইলামবাজার, লাভপুর এবং বোলপুর নিয়ে মোট চারটি ব্লকের লক্ষ লক্ষ বিচারপ্রার্থীরা দূরদুরান্ত থেকে আসেন। বোলপুর আদালত চত্বরে তাঁদের জন্য নেই কোনও পানীয় জল, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। সময়মতো পাওয়া যায় না সারটিফায়েড কপিও। অবিলম্বে এই সমস্যাগুলির সমাধান চেয়ে সোমবার থেকে আদালতে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।

গরমের যুক্তি দেখিয়ে আইনজীবীরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন বাঁকুড়া জেলা আদালত এবং পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর আদালতেও। সোমবার থেকেই সাত দিনের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। কর্মবিরতির আওতায় রাখা হয়েছে পুলিশ ফাইলকেও। রঘুনাথপুর বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, গরমে আদালতের কাজ সকালে হলেও বাস্তবে আইনজীবীদের দুপুর পর্যন্ত আদালতে থাকতেই হচ্ছে। রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে আইনজীবীরা কার্যত ফাঁকা জায়গায় বসে কাজ করেন। সোমবার আদালতের এক আইনজীবী কাজ করার সময়ে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানির বিষয়ে বার অ্যাসোসিয়শনের সম্পাদক অলোককুমার নন্দী জানান, তাঁরা ইতিমধ্যেই তাঁদের মক্কেলদের ফোনে যোগাযোগ করে কর্মবিরতির বিষয়টি জানিয়ে দিচ্ছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE