Advertisement
E-Paper

জ্বরে কাঁপছে আষাঢ়ের বিকেল

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। সদ্য সাঙ্গ হল ইদ-উল-ফিতর, রথযাত্রা। দুর্গা পুজো, ইদুজ্জোহার এখনও ঢের দেরি। তাহলে এই সময়ে কী হবে? সীমান্তের প্রত্যন্ত গাঁ থেকে জেলার সদর শহর সমস্বরে গর্জে উঠল— কেন, ফুটবল! ফুটবলের সেই উৎসবের খোঁজ নিতে মাঠে নামল আনন্দবাজার। ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে নির্বিকার মুখে সেই ছাত্রের জবাব ছিল, ‘‘স্যার অঙ্ক পরীক্ষা তো পরের বার আবার দিতে পারব। কিন্তু আজকের সেমি ফাইনালটা এখন না গেলে আর দেখতে পাব না।’’

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৯
করিমপুরে। আন্তঃস্কুল ফুটবল। ফাইল চিত্র।

করিমপুরে। আন্তঃস্কুল ফুটবল। ফাইল চিত্র।

নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলে হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষা চলছে। সে দিন ছিল অঙ্ক। পরীক্ষা অর্ধেকও গড়ায়নি। আচমকা খাতা জমা দেওয়ার জন্য ক্লাস এইটের এক পড়ুয়ার ব্যস্ততা দেখে মাস্টারমশাই অবাক। কিঞ্চিৎ বিরক্তও। উত্তরপত্র উল্টেপাল্টে দেখে শিক্ষক পড়ুয়াকে সাবধান করেন, ‘‘এই অবস্থায় খাতা দিলে কিন্তু অঙ্কে ফেল করা কেউ রুখতে পারবে না।’’

ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে নির্বিকার মুখে সেই ছাত্রের জবাব ছিল, ‘‘স্যার অঙ্ক পরীক্ষা তো পরের বার আবার দিতে পারব। কিন্তু আজকের সেমি ফাইনালটা এখন না গেলে আর দেখতে পাব না।’’ শিক্ষক কিছু বলার আগে সেই পড়ুয়া এক ছুটে স্কুল মাঠ পার। তার কানে বাজছে রেফারির বাঁশি।

এ গল্প ১৯৫২ সালের। সে দিন ছিল ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল টুর্নামেন্টে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সেমি ফাইনাল। ফুটবল পাগল সেই ছাত্র পরবর্তী কালের অর্থনীতির ডাকসাইটে অধ্যাপক ও গবেষক প্রদ্যোতকুমার গোস্বামী। আটাত্তর বছর পেরিয়ে ফুটবল নিয়ে সমান উৎসাহী প্রদ্যোতবাবু বলছেন, ‘‘আমার কাছে আজও সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম ফুটবল। নইলে অঙ্কে ফেল করব জেনে কেউ পরীক্ষা ফেলে মাঠে যায়!’’

সে দিন নদিয়া ২- ১ গোলে জয়ী হয়েছিল। এগারো জনের মধ্যে ন’জনই ছিল নবদ্বীপের। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রদ্যোতবাবুর আজও মনে আছে, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নাম। ভোলেননি অঙ্কে পাওয়া সাকুল্যে আঠাশ নম্বরের কথাও!

ফুটবল নিয়ে এমন উন্মাদনার ধরন হয়তো বদলেছে। তবু ফুটবল আছে ফুটবলেই। রথ আর ইদের পিঠোপিঠি পরব শেষ হতে না হতে নদিয়া মুর্শিদাবাদের ফুটবল ব্যস্ততা তেমনটাই জানান দিচ্ছে। মুচমুচে পাঁপ়ড়ভাজা, জিলিপি আর বিরিয়ানির স্বাদ এখনও জিভে লেগে। দুর্গাপুজো আসতে এখনও বাকি মাস তিনেক। দেরি আছে ইদুজ্জোহারও। এ লগনে ফুটবল বিনে গীত নেই।

নবদ্বীপ থেকে নওদা কিংবা করিমপুর থেকে কল্যাণী, বহরমপুর থেকে বাহাদুরপুর, জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর কিংবা ডোমকল থেকে দত্তপুলিয়া— বিকেল হলেই ভিড় উপচে পড়ছে ফুটবল মাঠে। স্থানীয় লিগ, নৈশ ফুটবল, নক আউট-সহ ছোট-বড় টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ফুটবল ক্যালেন্ডারে যেন আর কোনও দিন ফাঁকা নেই। দিকে দিকে সেই উৎসবেরই আয়োজন চলছে জোর কদমে।

নদিয়ার নবদ্বীপ, নাকাশিপাড়া, শান্তিপুরে ইতিমধ্যেই স্থানীয় লিগের খেলা জমে উঠেছে। কৃষ্ণনগর, রানাঘাটে দু’ একদিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে। ডোমকল, জঙ্গিপুর, লালবাগ, কান্দি, বেলডাঙার মাঠে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। টিম তৈরির কাজটা দু’জেলাতেই প্রায় শেষ। মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাব জুনিয়র লিগ শুরু হয়ে গিয়েছে ১৩টি দলকে নিয়ে। জেলার স্কুলগুলি নিয়ে শুরু হচ্ছে আন্তঃস্কুল ফুটবল। অন্য খেলা রাতে হবে না দিনে, এলাকার খেলোয়াড় নিয়ে খেলা হবে নাকি বিদেশি খেলোয়াড়দের আনা হবে তা নিয়েও ক্লাবকর্তাদের মধ্যে চলছে টানাপড়েন।

ডোমকলের কুপিলা সম্মিলনী সংঘের সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বাছাই করা আটটি দল নিয়ে বড় মাপের টুর্নামেন্টের আয়োজন করছি। কয়েক দিনের মধ্যেই গোটা এলাকায় ফুটবল শুরু হয়ে যাবে। তখন ডেট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’’ বৃষ্টির সৌজন্যে রুখু মাঠে ফের সবুজের ছোঁয়া লাগতেই ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত সীমান্ত ঘেঁষা তেহট্ট, করিমপুর, পলাশি পাড়াও। সীমান্তের দিঘলকান্দি কিশোর সঙ্ঘের সদস্যদের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। সমীর স্মৃতি কাপে নৈশ ফুটবল তো নয়, যেন নৈশ উৎসব। মাঠে খেলা, বাইরে মেলা আর থিকথিকে কালো মাথার ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয় উৎসবের ষোলো আনা।

ভেজা মাঠ। পায়ে পায়ে বল। গর্জে উঠেছে গোটা মাঠ— গো...ও...ও...ল!

(চলবে)

(সহ প্রতিবেদন— কল্লোল প্রামাণিক)

monsoon Football নবদ্বীপ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy