মাপজোক: মাঠে নেমেছে পুলিশ। চলছে কাজ। নিজস্ব চিত্র
ঘটনাটা সাকুল্যে দুই বিঘা জমিকে ঘিরে। আর তা নিয়েই সোমবার তপ্ত হল নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ।
দিন কয়েক আগে, নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির আবেদনে সাড়া দিয়ে স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের গাদিগাছা মৌজায় বিঘা দুয়েক জমিতে একটি বাস টার্মিনাস গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা পরিষদ। বরাদ্দও হয়েছে, এক কোটি সাতষট্টি লক্ষ টাকা। সোমবার সকালে ওই জমির সীমানা নির্ধারণ করতে গেলেই বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
ডজন তিনেক পুলিশ কর্মী নবদ্বীপের ভূমি সংস্কার দপ্তরের কর্মীরা জমি মাপার কাজে হাত দিয়েও চরস্বরূপগঞ্জ জনকল্যাণ সমিতির চাপে প্রথমে পিছিয়েই আসেন।
ওই জমিতে বাসস্ট্যান্ড গড়া নিয়ে আপত্তিটা জনকল্যাণ সমিতির নতুন নয়। সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়ের দাবী, “যে মাঠে বাসস্ট্যান্ড গড়ার পরিকল্পনা, সেটি বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জনকল্যাণ সমিতির খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।” নবদ্বীপের বিডিও মধুমালা নন্দী ক্লাবের দাবী অবশ্য মানছেন না। বলছেন, “গাদিগাছা মৌজার ১৫৫৩ নম্বর প্লটের ওই জমিটি নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির। সরকারি তথ্য তাই বলছে। সেখানে বাসস্ট্যান্ডের দাবি দীর্ঘ দিনের। কোনও বাধাই মানা সম্ভব নয়।’’
ওই মাঠে বাসস্ট্যান্ড গড়া নিয়ে তাঁদের আপত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন কান না দেওয়ায় ক্লাবের পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষরিত আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। ক্লাবের সম্পাদক সুভাষ সরকার জানান “ওই মাঠে খেলাধূলার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নানা মেলা,যাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। গায়ের জোরে বাসস্ট্যান্ড করলেই হল!’’
এই প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ তথা স্বরূপগঞ্জের বাসিন্দা হরিদাস দেবনাথ জানান, “ সরকারি জমি পড়ে থাকলে স্থানীয় মানুষ ব্যবহার করেন সর্বত্র। তার মানে তো এই নয় যে জমিটা কোন সংস্থা বা ব্যক্তির হয়ে গেল।” নবদ্বীপ ব্লক তৃণমূল সভাপতি হরিদাসবাবুর সাফ কথা, “সকলের প্রয়োজনে ওই বাসস্ট্যান্ড গড়া হচ্ছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে সেই কাজে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা সফল হবে না।”
উত্তেজনায় থাকায় এদিন সকালেই ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় লাঠি, ঢাল, কাঁদানে গ্যাসের সেল নিয়ে প্রস্তুত ছিল পুলিশ। প্রাথমিক বাধায় কাজ আটকে গেলেও, পরে অবশ্য নির্বিঘ্নেই মাপজোকের কাজ হয়েছে।
স্বরূপগঞ্জ নবদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ। নবদ্বীপের সঙ্গে জেলা সদর এবং কলকাতার যোগাযোগের অন্যতম পথ নবদ্বীপঘাট-কৃষ্ণনগর রোড। কিন্তু এখনও স্বরূপগঞ্জে গড়ে ওঠেনি কোন বাসস্ট্যান্ড। গঙ্গার ঘাট লাগোয়া ওই ঘিঞ্জি ব্যস্ত এলাকায় বাস, অটো, ট্রেকার কিম্বা টোটোয় যাত্রীদের ওঠানামা থেকে শুরু করে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা সবই রাস্তার উপরে হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ভোর পাঁচটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত নবদ্বীপঘাট থেকে কৃষ্ণনগর রুটে চলাচল করে তেইশটি বাস এবং প্রায় দুশো অটো। এহেন ব্যস্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘদিন ধরেই একটি পূর্ণাঙ্গ বাস টার্মিনাসের দাবী রয়েছে। তবে, মাঠ না টার্মিনাস তা নিয়ে তা নিয়ে ধন্দটা কাটেনি স্বরূপগঞ্জের। তা নিয়ে একটা চাপা দ্বৈরথ চলছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy