Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অধীরের গাড়ি আটকাল তৃণমূল, মারধরের অভিযোগ ইন্দ্রনীলের

ভোটের আগে যেন তপ্ত কড়াইয়ে ফুটছে বহরমপুর। রবিবার সকালে বেলডাঙায় তৃণমূলের অবরোধের মুখে পড়লেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিকেলে ভরতপুরে আবার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুললেন ইন্দ্রনীল সেন। এ ছাড়াও দিনভর অবরোধ, অবস্থান-বিক্ষোভ করল দুই দল। পরস্পরের বিরুদ্ধে জমা হল রাশি-রাশি অভিযোগ। এমনকী রেলের গাড়ি ও নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাতে কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারে’র অভিযোগ করলেন বহরমপুরের পুলিশ পর্যবেক্ষক কুমার ইন্দুভূষণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর ও শক্তিপুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

ভোটের আগে যেন তপ্ত কড়াইয়ে ফুটছে বহরমপুর।

রবিবার সকালে বেলডাঙায় তৃণমূলের অবরোধের মুখে পড়লেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিকেলে ভরতপুরে আবার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুললেন ইন্দ্রনীল সেন। এ ছাড়াও দিনভর অবরোধ, অবস্থান-বিক্ষোভ করল দুই দল। পরস্পরের বিরুদ্ধে জমা হল রাশি-রাশি অভিযোগ। এমনকী রেলের গাড়ি ও নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাতে কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারে’র অভিযোগ করলেন বহরমপুরের পুলিশ পর্যবেক্ষক কুমার ইন্দুভূষণ।

গোলমালের সূত্রপাত শনিবার রাতে। তিনটে মোটরবাইকে ন’জন যুবক মুখে কালো কাপড় বেঁধে বেলডাঙা-২ ব্লকের সোমপাড়া-১ বাজার মোড়ে পৌঁছয়। অভিযোগ, তৃণমূলকে সমর্থন করার জন্য এলাকার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের তারা হুমকি দেয়। প্রতিবাদ জানালে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তাদের বিবাদ বাধে ও হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরদিন, রবিবার, তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে আবার একদল লোক এসে সোমপাড়ায় কংগ্রেস, আরএসপি, বিজেপি-সহ বিরোধী দলের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ।

সেই খবর পেয়ে সকালেই গঙ্গা পেরিয়ে সোমপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেন অধীর। তিনি বলেন, “শনিবার রাত থেকে শক্তিপুর এলাকায় সন্ত্রাস চলছে। দোকান ভাঙচুর চলছে। কংগ্রেস কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। রবিবার সকালেও ওই এলাকার তৃণমূলের মস্তানবাহিনী একই ভাবে এলাকায়-এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। আমি ওই এলাকার প্রার্থী। কোথাও কোনও গণ্ডগোল বা কোনও সন্ত্রাসের খবর পেলে আমাকে তো যেতে হবে। তাই আমি গিয়েছি।”

মানিক্যহার মোড়ে বিক্ষোভ হুমায়ুনের নেতৃত্বে। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

কিন্তু পথে মানিক্যহার মোড়ে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুনের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে তাঁর গাড়ি ঘিরে ফেলেন তৃণমূলের ছেলেরা। হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক সেখানে অবরোধ করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সোমপাড়ায় অধীর গেলে গণ্ডগোল আরও বাড়বে। ঘণ্টা দু’য়েক বহরমপুর-রামনগর রাজ্য সড়কের উপরেই আটকে ছিল অধীরের গাড়ি। তবে, অধীর গাড়ি থেকে নামেননি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ পর্যবেক্ষক কুমার ইন্দুভূষণ। তাঁর সঙ্গে অধীরবাবু বচসা বেধে যায়। অধীরবাবুর কথায়, “পুলিশ ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। পুলিশ পর্যবেক্ষক ঠুঁটো জগন্নাথের মত দাঁড়িয়ে থাকল। আমাকে ওরা অনুরোধ করে ফিরে যেতে। আমিও ওদের জানিয়ে দিই যেখানে যেতে চাইছি, সেখানে আমি যাবই।”

এদিকে অধীর চৌধুরীর পথ আটকানোর খবর জানাজানি হতেই বহরমপুর প্রশাসনিক ভবনে জড়ো হয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন কংগ্রেসের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। ছিলেন বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীও। কংগ্রেসের অবস্থান-বিক্ষোভের মাঝেই তৃণমূলের একটা প্রতিনিধিদল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে অধীরবাবুর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি উৎপল পাল বলেন, “বহরমপুরের সাংসদ ৪-৫টি গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করে এলাকায় প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। তাই অভিযোগ জানিয়ে গেলাম।”

দুপুর দেড়টা নাগাদ জেলাশাসকের অনুরোধে মানিক্যহার মোড়ে তৃণমূলের অবরোধ উঠে গেলে প্রশাসনিক ভবনে কংগ্রেসের অবস্থান-বিক্ষোভও তুলে নেওয়া হয়। অধীরবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট তুষার মজুমদার নির্বাচন কমিশনের কাছে হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।

গাড়িতে আটকে অধীর। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।

আবার বিকেলের দিকে বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করেন, ভরতপুর এলাকায় কংগ্রেসের লোকজন তাঁকে মারধর করেছে। তিনি বলেন, “আমি এলাকার কর্মীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কান্দি-বড়ঞা-ভরতপুর হয়ে সালার যাচ্ছিলাম। সেই সময়ে মোড়ে ১০-১৫ জন যুবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাত বাড়াই। ওরা আমার জামার কলার ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার বাঁ হাত ধরে গাড়ির বাইরে বের করার জন্য টানা-হ্যাঁচড়া শুরু করে।”

অভিযোগ উড়িয়ে অধীরবাবু পাল্টা বলেন, “ভোটের দিন বুথ পিছু দলীয় কর্মীদের ৬ হাজার করে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তৃণমূল। এদিন মাত্র বারোশো টাকা দিতে গেলে কর্মীরাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ঘটনা ঘটায়। যদি গণ্ডগোল কিছু হয়ে থাকে, তা হলে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ঘটেছে।”

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc adhir chowdhury indraneel roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE