Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্যানসারে আক্রান্ত ছাত্র, দেড় লক্ষ সংগ্রহ স্কুলে

ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ছাত্রের চিকিত্‌সায় এগিয়ে এল স্কুল। কোনও নির্দেশিকা নয়, বাধ্যবাধকতা নয়, কেবল মাত্র একটা নোটিস টাঙিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর অ্যাকাডেমির কর্তৃপক্ষ। তাতেই উঠে এল দেড় লক্ষ টাকা। কৃষ্ণনগর অ্যাকাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র সরোজ গোমসের দিকে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন সহপাঠী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৬
Share: Save:

ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ছাত্রের চিকিত্‌সায় এগিয়ে এল স্কুল। কোনও নির্দেশিকা নয়, বাধ্যবাধকতা নয়, কেবল মাত্র একটা নোটিস টাঙিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর অ্যাকাডেমির কর্তৃপক্ষ। তাতেই উঠে এল দেড় লক্ষ টাকা। কৃষ্ণনগর অ্যাকাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র সরোজ গোমসের দিকে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন সহপাঠী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা।

বুধবার সেই টাকা সরোজের মায়ের হাতে তুলে দিলেন কৃষ্ণনগরের এই ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি হরপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। চেক হাতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সরোজের মা সাধনাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘চিকিত্‌সকরা জানিয়েছেন পনেরো লক্ষ টাকা খরচ করতে পারলেই আমার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবে। আমার যা কিছু ছিল তা বিক্রি করে, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে এত দিন চিকিত্‌সার খরচ চালিয়েছি। প্রায় চার লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ওই হাসপাতালের চিকিত্‌সকরাই দিয়েছেন এক লক্ষ টাকা। এখন স্কুল থেকে দিল দেড় লক্ষ টাকা। জানি না বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে। তবে আমার ছেলের সহপাঠীদের এভাবে পাশে দাঁড়াতে দেখে মনে যেন জোর পাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেমন করেই হোক টাকাটা ঠিক জোগাড় করতে পারব।’’

সরোজের বাবা হৃদরোগে মারা গিয়েছেন প্রায় ন’বছর আগে। বাড়িতে মা ও দিদি। দিদি সঞ্চিতা গৃহশিক্ষকতা করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন। এই চরম দারিদ্রের মধ্যেও ছেলে সরোজকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে কৃষ্ণনগরে ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে পড়াচ্ছেন সাধনাদেবী। তাহেরপুরের খ্রিস্টানপাড়া থেকে প্রতিদিন স্কুলে আসত সে। একদিন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সুখের দিন ফিরিয়ে আনবে, এমনটাই স্বপ্ন দেখেছিল তার পরিবার।

আচমকা নেমে এল বিপর্যয়। এই বছর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরোজের দাঁতের মাড়িতে ব্যাথা শুরু হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগরের দাঁতের চিকিত্‌সকের কাছে। কিন্তু কোনও ওষুধেই কাজ হচ্ছিল না। সন্দেহ হওয়ায় আর এক চিকিত্‌সক সরোজকে কলকাতার এক ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে জানা যায় যে ব্লাড ক্যানসারে আক্রাম্ত সরোজ। সাধনাদেবী বলেন, ‘‘ছেলেকে সারিয়ে তোলার জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি। শুধু একটু সাহায্য চাই সকলের কাছ থেকে।’’

সাহায্য মিলেছে কিছু। সরোজের নিজের স্কুলে যেমন সহপাঠী-শিক্ষকরা সাধ্যমতো সাহায্য করছেন। স্কুলের এক শিক্ষক সায়ন চট্টোপাধ্যায় তাঁর এক মাসের বেতনের টাকা তুলে দিয়েছেন সাহায্য খাতে। এগিয়ে এসেছেন প্রাক্তন ছাত্ররাও। তাঁদের সংগঠনের তরফেও তুলে দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে পনেরো হাজার টাকা। স্কুলের অধ্যক্ষ সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জানি যে বিশাল পরিমাণ টাকা সরোজের চিকিত্‌সার জন্য প্রয়োজন তার তুলনায় এই টাকার পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু যে আবেগ আর স্বতঃস্ফুর্ততার সঙ্গে আমাদের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে এসেছে তা প্রশংসনীয়। আমাদের প্রাক্তন ছাত্ররা আরও কী কী ভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।’

দ্রুত আরোগ্য কামনা করে সরোজকে চিঠি দিয়েছে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

krishnanagar blood cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE