হতাশা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগেছেন বলে মন্তব্য করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বহরমপুরের ঋত্বিক সদনে মঙ্গলবার এক কর্মিসভার আয়োজন করে বহরমপুর যুব কংগ্রেস কমিটি। ভিড়ে ঠাসা সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে আগাগোড়া অধীরের মুখে ছিল তৃণমূল নেত্রীর সমালোচনা। অধীরবাবু বলেন, “তৃণমূল নতুন ইস্যু চায়। নির্বাচন কমিশনের ওই নির্দেশ ভোটের বাজারে তাদের কাছে নতুন ইস্যু। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচনী ইস্যু। আমি কেন্দ্রকেই মানি নাএই রকম একটা বিদ্রোহিনী ভাবমূর্তি তৈরি করে ভোটের বাজারে পণ্য হিসেবে নিজেকে বেচতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আইনশৃঙ্খলা সব কিছুতেই সরকার ব্যর্থ। তখন নির্বাচন কমিশনের ওই নির্দেশ তাঁর কাছে পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো। তাই সামান্য একটা ঘটনায় তিনি এমন অসামান্য আচরণ করছেন।”
তৃণমূল নেত্রীর ওই আচরণকে ‘দ্বিচারিতা’র আখ্যা দেন অধীর চৌধুরী। তাঁর কথায়, “এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম আমলে নির্বাচন কমিশনের তারিফ করেছেন। মেদিনীপুরে অলোক রাজের প্রশংসা শোনা গিয়েছে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের মুখে। জ্যোতি বসু যখন তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টিএন শেষণের বিরোধিতা করেছিলেন তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এখন তিনি যা করছেন তা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছুই নয়।”
গত তিন বছরে রাজ্যে কোনও নতুন শিল্প গড়ে ওঠেনি বলেও তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, “চিমনি দিয়ে ধোঁওয়া বের হবে, এমন শিল্প দিদির পছন্দ নয়। তাঁর মাথায় নিত্য-নতুন ভাবনা কাজ করে। তাঁর কাছে যাত্রা একটা শিল্প। তাঁর কাছে নাটক একটা শিল্প। আর কিছু দিন গেলেই তৃণমূল দলে কোনও রাজনীতিবিদ খুঁজে পাওয়া যাবে না। নায়ক-নায়িকা আর গায়ক-গায়িকাতে ভরে যাবে।”
তৃণমূল নেত্রী সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের লালবাগে সভা করে যান। সেই সভায় কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ করেন তিনি। পাল্টা অধীর এদিন বলেন, “নিজেদের অপদার্থতা ও অদক্ষতা ঢাকতে কেন্দ্রের উপরে দোষ চাপানো হচ্ছে। এদিকে ১০০ শতাংশের মধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ তিনি করে ফেলেছেন। দিদি আপনি কি জাদু জানেন! আপনি কি জাদুকর! দিদির জিন পোষা আছে। তারা সব কাজ করে দিচ্ছে।”
অধীর চৌধুরীকে জেতানোর জন্য পুলিশ সুপারকে সরানো হচ্ছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে অধীর বলেন, “আমি তিন বারের সাংসদ। বাম আমলে তিন বার জিতেছি। সেই সময়ে পুলিশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও সিপিএমের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেই আমি জিতেছি। মুখ্যমন্ত্রীর ওই কথায় প্রমাণিততাহলে তিনি আমাকে হারানোর জন্যই ওই পুলিশ সুপারকে নিয়ে এসেছিলেন।”
সভায় উপস্থিত যুবকর্মীদের উদ্দেশ্যে অধীরবাবু বলেন, “প্রতি গ্রামে, প্রতিটি পাড়ায় গিয়ে বলুনছিল তিন, থাকবে তিন, বাকি যা আছে গঙ্গায় বিসর্জন দিন। বাম আমলে তিন বার সাংসদ হয়েছি। পরিবর্তনের রাজ্যেও সাংসদ হওয়ার স্বাদ ও শখ আমার প্রবল। জয়ের ব্যবধানও বাড়াতে হবেএটাই লক্ষ্য।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রেজিনগর থানার রামপাড়ার চড়কতলা মাঠে আর একটি কর্মিসভা করেন অধীর। তখন সন্ধ্যা নামছে সবে। দলের স্থানীয় নেতৃত্ব মাইকে আলো জ্বালানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু অধীর মাইক কেড়ে নিয়ে আলো জ্বালাতে বারণ করেন। তিনি বলেন, “যা গরম পড়েছে, তাতে আলো জ্বালালে আরও অস্বস্তি বাড়বে।” এরপর আধো-আঁধারেই আধ ঘণ্টার বেশি বক্তব্য রাখেন অধীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy