বাক্স-বন্দি হচ্ছে কলা। টিকটিকিপাড়ায় বিশ্বজিত্ রাউতের তোলা ছবি।
কলা দেখালে কে না চটে যায়? কিন্তু মুর্শিদাবাদের মানুষ কলা দিয়ে গোটা রাজ্যকে দেখিয়েছেন, বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। বুধবার যখন রানিনগরের টিকটিকিপাড়ার কলাবাগান থেকে ৩০০ কাঁদি কলা নিয়ে রওনা হয়ে গেল এক বেসরকারি সংস্থার দুটো ট্রাক, অদ্ভুত তৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ল চোখেমুখে।
পড়বেই তো। এক বছরে ব্যবসা প্রায় ডবল, এমন ক’জন ব্যবসায়ীর হয়? সেই অসাধ্যই সাধন করেছেন এখানকার চাষিরা। গত বছরই উদ্যান পালন দফতরের উদ্যোগে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি চাষি কলা বাগান তৈরি করেন ১২টি ব্লকে। প্রত্যেকের বাগানে কমবেশি ১০০ কলাগাছ। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে তৈরি ‘গ্র্যান্ড নাইন’ প্রজাতির কলা। উন্নত সেই কলা কিনতে এগিয়ে আসে এক বেসরকারি সংস্থা। এক বছর ধরে প্রতিদিন ১৪০-১৫০ টাকা কাঁদি দরে কলা বিক্রি করেছেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু ওই সংস্থা দিনে ১২-১৮ টনের বেশি কলা নিতে পারছিল না। ফলে উত্পাদন ছাড়িয়ে গেল বিপণনকে। দ্বিতীয় বছর কলার চাষ শুরু করলেন আরও পাঁচ হাজার চাষি। যারা আগে চাষ শুরু করেছিলেন, দ্বিতীয় বছর তাদের গাছে কলাও এল বেশি। প্রথম বছর যেখানে কাঁদিতে গড়ে ১০ ছড়া কলা ফলছিল, সেখানে দ্বিতীয় বছর ফলেছে গড়ে ১৫ ছড়া। বাড়তি কলা বাধ্য হয়েই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছিল। রাহেমা বিবি বললেন, “আমাদের থেকে ব্যবসায়ীরা কলা কিনছে ৭০-৮০ টাকা কাঁদি দরে, তাও ধারে। খুচরো বাজারে কিলোগ্রাম হিসেবে বিক্রি করছে চড়া দামে।”
এই অবস্থায় আবার এগিয়ে আসে উদ্যান পালন দফতর। রাজ্যের একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে দফতরের কর্তারা কথা বলেন। গত কয়েক দিন ধরে ওই বেসরকারি সংস্থার অফিসারেরা জিয়াগঞ্জ, নওদা, হরিহরপাড়া-সহ নানা এলাকা ঘুরে কলার ফলন দেখেন। বেসরকারি সংস্থার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সারদাপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, “আমরা এত দিন নদিয়া থেকে কলা নিয়েছি। মুর্শিদাবাদ উদ্যান পালন দফতর প্রস্তাব দেয়, ওই জেলা থেকে কলা কেনার জন্য। কলার মান ও ফলন দেখে আমরা সন্তুষ্ট।” তাঁরা যে দাম দিচ্ছেন, তাতে স্থানীয় বাজারের থেকে কাঁদিতে ৩০/৪০ টাকা বেশি দাম মিলছে চাষিদের। ফড়ে নেই, বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ নেই। সহ-উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ বলেন, “ওই সংস্থা কলা চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে চাষিকে।”
ওই বিপনন সংস্থার সিইও দেবর্ষি দে বলেন, “বুধবার থেকেই কলা কেনা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনই রানিনগর ১ ব্লকের টিকটিকিপাড়া গ্রামের কলা বাগান থেকে প্রায় ৩০০ কাঁদি কলা কেটে লরিতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি মাসে ৯০-১০০ টন কলা কেনা হবে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে।” তিনি জানান, একাধিক সংস্থাকে জেলায় ডেকে এনে কলা বিপণনের বাজার বাড়াতে চাইছে উদ্যানপালন বিভাগ। বারাসতে সংস্থার ৪০ টন ক্ষমতার ৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম রয়েছে। প্রতিদিন ১৮ টন কলা কেনার ব্যবস্থাও আছে। বিপণন অফিসার বলরাম নন্দী জানান, গুদামে কার্বাইড ব্যবহার না করে কলা পাকানো হয়। তা কলকাতার নামী সংস্থার রিটেল দোকান হাসপাতালে পাঠানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy