মৃতের পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
মন্দির কমিটি গঠন নিয়ে বড়দের গোলমাল, অনুষ্ঠানে নাচানাচি নিয়ে ছোটদের গোলমাল। বিবাদ, পাল্টা বিবাদ থেকে মারপিট থেকে প্রাণহানিও হল সামান্য সেই গোলমালকে ঘিরে।
মঙ্গলবার ভোরে মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার চোঁয়াপাড়া রাজাবাটি গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক তৃণমূলকর্মীর। মৃত কানাইলাল মণ্ডলের (৪৭) বাড়ি ওই গ্রামেই। আহত হয়েছেন আরও ছ’জন। তৃণমূলের দাবি, হতাহত সকলে তাদের কর্মী-সমর্থক।
বালিগ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে চোঁয়াপাড়া রাজাবাটি গ্রাম। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বালিগ্রামে ২২টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ১১টি, কংগ্রেস ১০টি এবং তৃণমূল একটি আসন পায়। গ্রামে যারা আগে কংগ্রেস করত, পঞ্চায়েত ভোটের পরে তারা তৃণমূলে চলে গেলে গত ৩৪ বছরের মধ্যে এই প্রথম চোঁয়াপাড়া আসনটি সিপিএমের হাতছাড়া হয়। ওই আসনটি তৃণমূল দখল করে। এরপরেই চোঁয়াপাড়া গ্রামে প্রায় ১১০ বছরের পুরনো একটি মন্দির কমিটি গঠন নিয়ে সিপিএম ও তৃণমূলের লোকেরা ভাগ হয়ে যায়। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা গত ৫ জুন ওই মন্দির লাগোয়া জায়গায় অস্থায়ী ম্যারাপ বেঁধে গণেশ পুজোর আয়োজন করে। মন্দির থেকে ১৫০ মিটার দূরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাও পৃথক ভাবে ১২ জুন গণেশ পুজো করেন।
ওই পুজো উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাউল গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা নিয়ে স্থানীয় সরলপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির দুই ছাত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে মারপিট হয়। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হলে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মুর্শিদাবাদের সাংসদ সিপিএমের বদরুদ্দোজা খান বলেন, “সিপিএমের বাড়ির কিশোরীকে কটাক্ষ করে তৃণমূল বাড়ির কিশোরী। সেই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল বেধে যায়।” ওই ঘটনায় তৃণমূলের এক জন সমর্থক জখম হন। তিনি লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পরে দু’পক্ষই রানিতলা থানায় অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ দু’পক্ষের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। মঙ্গলবার ভোরে ফের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ওই সংঘর্ষে মারা যান কানাইলাল মণ্ডল। আহত বিধান মণ্ডল, বৈদ্যনাথ মণ্ডল, মন্টু মণ্ডল ও রাধাশ্যাম মণ্ডল লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে এবং বলরাম মণ্ডল ও জিতেন মণ্ডল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, “বিবাদকে সামনে রেখে পরিকল্পনামাফিক হামলা চালিয়েছে সিপিএম। সিপিএমের ২৮ জন কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে রানিতলা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।” ওই ঘটনায় অবশ্য কেউ গ্রেফতার হয়নি এখনও।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে কন্নন বলেন, “মন্দির পরিচালন কমিটি গঠন নিয়ে গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সাময়িক ভাবে মিটে গেলেও সম্প্রতি ওই দু’পক্ষ পৃথক দিনে পুজোর আয়োজন করে। এই উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছোটদের গোলমালে ফের জড়িয়ে পড়ে বড়রা।” এলাকায় পুলিশি পিকেট চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy