তখন বরণ চলছে। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ছাত্রপরিষদের ডাকা কর্মিসভায় প্রকাশ্যে এল ‘গোষ্ঠীকোন্দল’। বুধবার দুপুরে বহরপুর ঋত্বিক সদনে অনুষ্ঠিত ওই কর্মিসভায় প্রদেশ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অশোক রুদ্রের উপস্থিতিতেই জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দু’টি গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। এতে কিছুটা হলেও ‘বিব্রত’ হয়ে পড়েন ওই রাজ্য নেতা। বিষয়টি জানতে পেরে তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, “দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা কোনও ভাবে মেনে নেওয়া হবে না। অবিলম্বে ওই ছাত্র নেতাকে শো-কজ করার নির্দেশ দিয়েছি। উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পারলে দল থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হবে।”
এ দিন সকাল থেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি গোষ্ঠী ঋত্বিক সদনের সামনে রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে কর্মিসভা যাতে সফল না হয় তার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সদস্যরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন কর্মী-সমর্থকদের ফোন করে সভায় হাজির না হওয়ার অনুরোধ জানান। এমনকী সভায় হাজির সদস্যদের ফোন করে কর্মিসভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন। এ নিয়ে দুটি গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। ওই বিবাদের জেরে নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে কর্মিসভা শুরু হয়।
সভা চলাকালীন দুপুর ১টা নাগাদ প্রদেশ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অশোক রুদ্র ঋত্বিক সদনে পৌঁছতেই ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী তাঁর সামনেই বর্তমান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। স্লোগান শুনে হতচকিত হয়ে পড়েন ওই রাজ্য নেতা। শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়ে গম্ভীর মুখে গিয়ে তিনি মঞ্চে গিয়ে বসেন। কিন্তু তাঁর জন্য তখনও চমক অপেক্ষা করছিল।
তখনও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বরণপর্ব শুরু হয়নি। অশোকবাবু ছাড়াও মঞ্চে তখন জেলা তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব মান্নান হোসেন-সহ সাগির হোসেন, ফুরকান শেখ, অশেষ ঘোষ, সৌমিক হোসেন বসে রয়েছেন। ওই নেতৃবর্গকে বরণের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা মঞ্চের ডান দিকে ফুলের তোড়া ও উত্তরীয় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
ঠিক সেই সময়ে সকলকে অবাক করে দিয়ে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর এক নেতা সোমনাথ প্রামাণিক মঞ্চে উঠে রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা-সহ বাকিদের হাতে ফুলের তোড়া দেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বর্তমান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাজা ঘোষের। বরণপর্ব সেরে ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পরে জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ফের এক প্রস্থ বরণপর্ব শুরু হয়।
নিজেকে ‘দলের অনুগত সৈনিক’ আখ্যা দিয়ে রাজা ঘোষ বলেন, “যে ঘটনা ঘটেছে, তা জেলা নেতৃত্বের সামনেই হয়েছে। দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমি যা বলার জেলা নেতৃত্বকে জানাবো।”
‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর ওই নেতা সোমনাথ প্রামাণিক নিজেকে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লক তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সভাপতি দাবি করে বলেন, “আমি দলীয় বিষয় নিয়ে রাজ্য নেতার সঙ্গে কথা বলছিলাম। সেই সময়ে আমার অনুগামীরা ওই স্লোগান দেয়। তবে আমি ওই নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।”
এ দিকে, নকিবুর রহমান নামে এক ছাত্রনেতা নিজেকে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি হিসেবে পাল্টা দাবি করে বলেন, “আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সোমনাথকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে লালবাগ সুভাষচন্দ্র বোস সেন্টেনারি কলেজে ভর্তি করে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।”
এ দিন মান্নান হোসেন বলেন, “কোনও নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ পেলে পুলিশকে খবর দেওয়ার আগে গণধোলাই দিন। যা হবে আমি বুঝে নেব। আমি যত দিন তৃণমূলের দায়িত্বে আছি, কিছুতেই দলকে কালিমালিপ্ত করতে দেব না।” সেই সঙ্গে দলের বিশৃঙ্খলাকারীদের হুমকি দিয়ে বলেন, “জীবন বাজি রেখে একটি গোষ্ঠী দল করবে, অন্য একটি গোষ্ঠী দল ভাঙার চেষ্টা করবে। তা কিছুতেই বরদাস্ত করব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy