প্যাকেটের ভিতরে বিড়ির টুকরো।—নিজস্ব চিত্র।
প্যাকেটের মধ্যে চানাচুরের সঙ্গে মিশে রয়েছে আধখাওয়া পোড়া বিড়ির টুকরো। চানাচুরের প্যাকেট খুলতে গিয়েই তা দেখে তাজ্জব বনে যান বহরমপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা আইনজীবী সুধাংশু বিশ্বাস। এর পরেই তিনি ওই প্যাকেট হাতে করে সটান চলে যান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানাতে। অভিযোগ পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক গোটা বিষয়টি তদন্ত করে অবিলম্বে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ফুড সেফটি অফিসারকে নির্দেশ দেন।
তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ করেই থেমে থাকতে রাজি নন বর্ষীয়ান ওই আইনজীবী। তিনি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুধাংশুবাবু বলেন, “বিষয়টি প্রশাসনের যাদের দেখা দরকার, তারা সব জেগে ঘুমিয়ে আছে। ফলে সুবিচার পেতে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হব।”
গত শুক্রবার সিজেএম আদালত চত্বরের একটি দোকান থেকে ওই চানাচুর প্যাকেট কেনেন সুধাংশুবাবু। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরোধিতা করে ওই দিন মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন কয়েক হাজার বিজেপি সমর্থক। ওই সমর্থকরা পরে আদালতে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাঁদের খাওয়ানোর জন্য তখন চানাচুরের প্যাকেট কিনে আসি। কিন্তু প্যাকেট খুলতে গিয়েই আমার চক্ষু চড়কগাছ!”
এর পরেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ হন বর্ষীয়ান ওই আইনজীবী। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমন্ত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “গোটা বিষয়টি ফুড সেফটি অফিসার অলোককুমার মল্লিককে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্যাকেট বন্দি ওই খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে কলকাতায় সরকারি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার পরে ‘ফুড অ্যানালিস্ট’ যে লিখিত রিপোর্ট দেবেন, তার ভিত্তিতে ‘অ্যাডজুডিকেটিং অফিসার’ হিসেবে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট ২০০৬ অনুযায়ী শাস্তির বিধান দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথাও ওই আইনে বলা হয়েছে।আইনজীবীর পাশাপাশি সুধাংশুবাবু স্বেচ্ছাসেবী ক্রেতা সুরক্ষা সংগঠন মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যও বটে। তিনি বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতর এ সব ক্ষেত্রে ফুড লাইসেন্স দিয়ে থাকে। কিন্তু প্যাকেটের মোড়কে কোনও লাইসেন্স নম্বরের উল্লেখ নেই। এমনকী কত দিনের মধ্যে ওই খাবার খাওয়া যেতে পারে তারও উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও ওই ধরণের চানাচুর বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আমরাও কিনে খাচ্ছি। তবে প্রশাসনের উচিত গোটা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা। সেই সঙ্গে এই ধরণের খাবার আগামী দিন বাজারে যাতে বিক্রি না হয়, সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি চালানো উচিত।”
এ প্রসঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট কনজিউমার্স প্রোটেকশন কাউন্সিলের সদস্য অরিন্দম দত্ত বলেন, “আমাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এমনকী চানাচুর-বিস্কুট কেনার পরে আমরা দোকান মালিকের কাছ থেকে কোনও রসিদও নিই না। কিন্তু আইনের দ্বারস্থ হয়ে সুবিচার পেতে সমস্ত কিছু কেনাকাটার উপরে রসিদ নেওয়া উচিত।” তিনি জানান, খাদ্যের মোড়কে জিনিষের দাম, ওই খাবারের খাদ্যগুণ, ওই খাবার কি কি দিয়ে তৈরি হয়েছে, ব্যাচ নম্বর, লাইসেন্স নম্বর, সর্বাধিক খুচরো মূল্য, উৎপাদকের নাম-ঠিকানা-উৎপাদন কেন্দ্র এবং প্রস্তুতকারী কেন্দ্রের নাম ও ঠিকানা, আমদানি করা হলে আমদানিকারকের নাম ও ঠিকানা, খাবারের পরিমাণ বা ওজন এবং কত দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবেতা বড় বড় হরফে খাবারের মোড়কের গায়ে লেখা আবশ্যক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওজন ও দাম ছাড়া কোনওটিই মানা হয়নি।
‘সিদ্ধিদাতা’ নামে ওই চানাচুর প্যাকেটের মোড়কে ঠিকানা হিসেবে ‘খাগড়া, বহরমপুর’ বলে উল্লেখ আছে। ওই মোড়কে যে ফোন নম্বর রয়েছে, সেই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এক মহিলা ফোন ধরেন। সংবাদমাধ্যমের কথা জানতে পেরে ফোন কেটে দেন। পরে ওই নম্বরে ফোন করা হলে কোনও উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy