Advertisement
০২ মে ২০২৪

ছাত্র সংঘর্ষের দায়ে ধৃত, জামিনে মুক্ত নেত্রী

ছাত্র সংঘর্ষের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে জেলা পরিষদ সদস্য তথা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সম্পাদিকা শাহানাজ বেগমকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মহিলা কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মৌসুমী বেগম ও শাহানাজ বেগমের নেতৃত্বে বহিরাগতরা গত ৮ ডিসেম্বর বহরমপুর কলেজের ভিতরে ঢুকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের বেধড়ক মারধর করে বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এফআইআর করা হয়। সোমবার বহরমপুরের জমিদারি এলাকার বাড়ি থেকে শাহনাজকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

আদালত চত্বরে কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে শাহানাজ। নিজস্ব চিত্র

আদালত চত্বরে কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে শাহানাজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

ছাত্র সংঘর্ষের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে জেলা পরিষদ সদস্য তথা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সম্পাদিকা শাহানাজ বেগমকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মহিলা কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মৌসুমী বেগম ও শাহানাজ বেগমের নেতৃত্বে বহিরাগতরা গত ৮ ডিসেম্বর বহরমপুর কলেজের ভিতরে ঢুকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের বেধড়ক মারধর করে বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এফআইআর করা হয়। সোমবার বহরমপুরের জমিদারি এলাকার বাড়ি থেকে শাহনাজকে পুলিশ গ্রেফতার করে। শাহানাজ গত ১৮ বছর ধরে বহরমপুর কলেজের সরকার অনুমোদিত আংশিক সময়ের শিক্ষিকা ও স্থানীয় একটি সাময়িক পত্রিকার সম্পাদিকা।

এ দিন তাঁকে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ জেলার সিজেএম অলি বিশ্বাসের আদালতে হাজির করানো হয়। অভিযুক্ত পক্ষের দুই আইনজীবী শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত ও জয়া সরকার বলেন, “উভয় পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে বিচারক শর্তাধীনে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। বহরমপর কলেজের ওই ঘটনায় শাহনাজের ভূমিকা নিয়ে তদন্তকারী অফিসারে কাছে বিচারক তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছেন। আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে ওই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর শাহনাজের জামিন বহাল থাকবে, নাকি বাতিল হবে সেই বিষয়ে বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন।”

ছাত্র সংঘর্ষের জেরে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বহরমপুর কলেজ ও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনাথ কলেজের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। বহরমপুর কলেজ সূত্রের খবর, কয়েক দিন ধরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে বহিরাগতরা ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের এক তরফা মারধর করে। তার বদলা হিসাবে গত ৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নেতৃত্বে একদল বহিরাগত বহরমপুর কলেজের ভিতরে ঢুকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের বেধড়ক মারধর করে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আহত চার জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে হয়। ওই ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের মৌসুমী বেগম, শাহানাজ বেগম, বহরমপুর পুরসভার দুই কাউন্সিলর-সহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষে থেকে এফআইআর করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র রাখা ও খুনের উদ্দেশে আক্রমণ করা-সহ মোট ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করা হয়। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “শাহানাজ বেগমকে ছাড়াও ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও চার জনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “ধৃত ওই চার জনের মধ্যে রয়েছে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রও। রয়েছেন ঘটনার সঙ্গে সম্পর্ক রহিত কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক। শাহনাজ বেগমও ওই ঘটনার সময় কলেজে ছিলেন না। কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে চলেছে আগামী জানুয়ারি মাসে। তার আগে কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে জেলে পুরতে চাইছে তৃণমূল।”

তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলেন, “ভিডিও ক্যামেরার ছবিতেই প্রমাণ রয়েছে কংগ্রেসের ওই নেত্রীরা সেদিন ঘটনাস্থলে থেকে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বেকায়দার পড়ে এখন মিথ্যা কথা বলছেন।”

শাহানাজ বলেন, “ওই দিন আমি সকাল ১১টায় কলেজে যাই। অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ১২টায় কলেজ ছাড়ি। তারপর আমার পত্রিকা প্রকাশনার কাজে বহরমপুর শহরেরই একটি ছাপাখানায় ব্যস্ত ছিলাম। অথচ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ছাত্রদের মারধর করার মতো ঘৃণ্য অপরাধে আমাকে জড়িয়ে দেওয়া হল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে।”

এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটে শাহনাজের সততা ও সাংঠনিক শক্তির কাছে ধুলিসাত্‌ হয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। হুমায়ুন কবীরের এলাকা থেকে শাহনাজ জেলা পরিষদে জিতেছেন। সেই জ্বালা মেটাতে বহরমপুর কলেজের ঘটনায় শাহানাজের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “মানুষ ভোট দিয়েছেন তাই শাহানাজ জিতেছেন। সেই ভোটের সঙ্গে বহরমপুর কলেজের ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করার কোনও সর্ম্পক নেই। কলেজের ঘটনায় তিনি প্রকৃতই জড়িত কি না তা আমার জানা নেই।”

এই ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বহরমপুর গির্জার মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে কংগ্রেস। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধের পরে শাহনাজ বেগমের জামিন পাওয়ার খবর শুনে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE