ধৃত সুরজিৎ মণ্ডল। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
আর পাঁচটা দিনের মতোই রবিবার খাওয়া-দাওয়া করে শুতে গিয়েছিল ছেলে। কিন্তু ছটফট করে মাঝরাতে উঠে যায়। বাবাকে ডেকে যা বলে সে, তাতে কিছুক্ষণের জন্য হৃৎস্পন্দন যেন থমকে গিয়েছিল বহরমপুর ইন্দ্রপ্রস্থের পিন্টু মণ্ডলের। সোমবার সকাল হতেই তিনি ছোটেন থানায়। কিন্তু ঢুকতে পারেননি। সারা দিনে বারকয়েক থানার কাছে গিয়েও ফিরে আসেন। প্রায় মাঝরাতে শেষ অবধি ঢুকে পড়েন। জানান, তাঁর ১৯ বছরের ছেলে সুরজিৎ একটি মেয়েকে খুন করেছে।
রাতেই পুলিশ এসে গ্রেফতার করে পিন্টুবাবুর ছেলে সুরজিৎ ও তার বন্ধু দেবজ্যোতি সরকার ওরফে বাবাইকে। মঙ্গলবার সকালে সুরজিৎকে নিয়ে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার ফুলকুমারীর মাঠ থেকে মাটি খুঁড়ে বার হয় সুপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায়ের (১৮) দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ছুরি মেরে, জলে ডুবিয়ে তাকে খুন করে সুরজিৎ।
পুলিশকে সুরজিৎ জানিয়েছে, বছরখানেক ধরেই সুপর্ণার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। মাধ্যমিক-পাশ প্রেমিকাকে মোবাইলও কিনে দিয়েছিল সে। পরে জানতে পারে, কান্দির একটি ছেলের সঙ্গে সুপর্ণার সম্পর্ক রয়েছে। ওই মোবাইলে ছেলেটির ফোন আসতেও দেখে সে। বৃহস্পতিবার সুপর্ণাকে ডেকেছিল সুরজিৎ। বাড়ি থেকে ছুরি নিয়ে প্রস্তুত হয়েই গিয়েছিল সে। সুপর্ণার সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর ছুরি দিয়ে আঘাত করে, জলে ডুবিয়ে সে খুন করে তাকে। এরপরে দেবজ্যোতিকে ডেকে আনে সুরজিৎ। তার সাহায্যে মৃতদেহ জল থেকে টেনে তুলে নিজের বাড়ির পিছনের জমিতে পুঁতে দেয়।
সুপর্ণার মা সুদেবী রান্নার কাজ করে ও এক বৃদ্ধার দেখাশোনা করে সংসার চালান। সুদেবী এ দিন থানায় বসে বলেন, “মেয়ের সঙ্গে ওই ছেলেটির আগে সম্পর্ক ছিল। সুরজিৎ বারবার ফোন করে সুপর্ণাকে বিরক্ত করত।” তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সারারাত মেয়ে বাড়ি ফেরেনি। মোবাইলটিও সারারাত বন্ধ ছিল। তাঁর সন্দেহ হয় মেয়ে হয়তো কারও সঙ্গে পালিয়েছে। লোক জানাজানির ভয়ে পুলিশের কাছে যাননি তিনি। মঙ্গলবার সকালে খবর পান, মেয়ে খুন হয়েছে।
সুরজিৎ জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ন কবীর বলেন, “দ্রুত চার্জশিট গঠন করে দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করব।”
নির্মম ভাবে খুন, আবার তারপর অনুতপ্ত হয়ে তা স্বীকার করা, মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম একে ‘স্বাভাবিক’ বলেই মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, “উত্তেজনার বশে ছেলেটি খুনের মতো জঘন্য কাজ করে ফেলে। তারপরেই তার মধ্যে অনুতাপ এসেছে। তাই স্বীকার করেছে। সে স্বীকার না-ও করতে পারত।”
অনুতপ্ত না-হওয়া, অপরাধবোধ প্রকাশ না করাই অস্বাভাবিক হত, মনে করছেন তিনি। তবে মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল জানান, আজকের তরুণরা প্রায়ই আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। “যা চায়, তা না পেলেই আত্মসম্মানে ঘা লেগেছে মনে করে যা কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে,” বলেন তিনি।
সুরজিতের বাবা পিন্টুবাবু অবশ্য ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে অনুতপ্ত নন। তিনি এ দিন বলেন, “ছেলে যা করেছে তার ক্ষমা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy