Advertisement
E-Paper

জাতীয় সড়কে ‘টোল’ দিয়েও যানজট দুর্ভোগ

পর পর দু’জায়গায় টোল ট্যাক্স আদায় করা হলেও বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ফোর লেন তৈরির কাজই শেষ করতে পারেনি হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকসন কোম্পানি। ২০১৩ সালের অগস্ট মাসের মধ্যে বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার কথা ছিল তাদের। কিন্তু এ পর্যন্ত ৭৮.৯ শতাংশ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৮

পর পর দু’জায়গায় টোল ট্যাক্স আদায় করা হলেও বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ফোর লেন তৈরির কাজই শেষ করতে পারেনি হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকসন কোম্পানি। ২০১৩ সালের অগস্ট মাসের মধ্যে বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার কথা ছিল তাদের। কিন্তু এ পর্যন্ত ৭৮.৯ শতাংশ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে।

বাকি অংশের কাজ শেষ না হওয়ায় বল্লালপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত এবং গোপগ্রাম থেকে বহরমপুর পর্যন্ত বেহাল সড়কে চূড়ান্ত যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। বহরমপুরে অবশ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার বাইপাস তৈরি হবে। ফলে পুরনো জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা। বর্তমানে রেলের উড়ালপুল, ভাগীরথীর উপর সেতু, আন্ডারপাস, কালভার্ট ও অন্যান্য সেতু তৈরির কাজও কার্যত আটকে। তাই বহু জায়গাতেই টোল ট্যাক্স দিয়েও ফোর লেনের সুবিধা পাচ্ছে না কোনও যানবাহনই।

শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান বলছে এর ফলে ওই পথে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। এ বছর জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছ’মাসে ১১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের, আহত হয়েছেন ২২৭ জন। এই সব দুর্ঘটনার ৭২টিই ঘটেছে উচ্চগতির জন্য। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৫৮টি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী লরি চালকেরাই। ২৯টি দুর্ঘটনা মুখোমুখি সংঘর্ষে। তবে মৃত্যুর ঘটনা সবথেকে বেশি ঘটেছে আন্ডারপাস তৈরি না হওয়ার কারণে রাস্তা পার হতে গিয়ে।

জাতীয় সড়ক তৈরির কাজে এই ঢিলেমি নিয়ে ইতিমধ্যেই দু’দফা চিঠি পাঠিয়েছে নজরদারিতে থাকা সংস্থা। ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ চিঠিতে নজরদারি সংস্থার কর্তা শ্যামতনু দত্ত ফোর লেনের নির্মাণকারী সংস্থাকে জানিয়েছেন, “কাজের অগ্রগতির ঘাটতি নিয়ে বার বার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কাজের গতি ফেরেনি। তাই নয়, ওই জাতীয় সড়ক এলাকায় কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে। অথচ সড়ক নির্মাণের কাজের এটাই উপযুক্ত সময়। গত দু’মাস কাজ করার সময় পেয়েও তা করা হয়নি।”

প্রকল্প অধিকর্তার কাছে পাঠানো চিঠিতে বহরমপুরে ভাগীরথীতে সেতু, খাগড়া মোরগ্রাম, আহিরণ, বল্লালপুরে রেল উড়ালপুল-সহ সাতটি জায়গার উল্লেখ করে সেগুলিতে অবিলম্বে থমকে পড়া কাজ শুরুর জন্য বলা হয়েছে। বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত এই সড়ক পথে ২৭৪টি কালভার্টের মধ্যে ২৪৪টির কাজ শেষ। ১৮টি আন্ডারপাসের মধ্যে কাজে হাতই পড়েনি দশটিতে। তবে সেতু ও রেল উড়ালপুলের কাজের অগ্রগতি প্রায় শূন্যই।

নির্মাণকারী সংস্থার এক কর্তা অবশ্য জাতীয় সড়ক নির্মাণে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে জমি অধিগ্রহণ সমস্যা নিয়ে জটের বিড়ম্বনাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদে জমি নিয়ে জট মিটলেও ৫টি মামলা চলছে সড়ক নিয়ে।” এই পাঁচটি মামলার মধ্যে সুতির পারুলিয়া গ্রামের স্বপন দাস, হারাধন দাস ও নিখিল দাস ছাড়াও রমনা শেখদিঘির গফ্ফর বিশ্বাস মামলা করেছেন জমির বর্ধিত মূল্য দাবি করেন। বহরমপুর পুরসভার তরফেও একটি মামলা রুজু হয়েছে জাতীয় সড়কের উপর পুরসভা নিজেরাই টোল ট্যাক্স আদায় করায় তাতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। প্রশাসন সেই ট্যাক্স আদায় বন্ধের নির্দেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করলে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। ওই জমাকৃত টাকা একটি নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা থাকবে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এর ফলেই ওই সড়ক পথে যান জট বাড়ছে।”

বহরমপুর থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণকারী সংস্থা হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশনস কোম্পানির প্রকল্প আধিকারিক সঞ্জীব কুমার শর্মা বলেন, “এমনিতেই কাজ শুরুতে কিছুটা সমস্যা ছিল। এখনও প্রয়োজনীয় মালপত্রের জোগান পেতে সমস্যা হচ্ছে। তাই কোথাও কোথাও কাজ বন্ধ রয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে তা সমাধানের। তবে দুর্ঘটনার জন্য মূলত ফোর লেনে যান বাহনের গতি বৃদ্ধিই কারণ। আন্ডারপাসগুলির কাজ শেষ হলে সড়ক পথ পারাপার বন্ধ হবে, তখন দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।”

তবে হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশনস-এর সাফাই, শুধু বহরমপুর ফরাক্কাই নয়, একই ভাবে আটকে রয়েছে ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটার রাস্তাও বহমপুরের মত সেখানেও কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এ পর্যন্ত সেখানে কাজ হয়েছে ৭১ শতাংশ। সেখানে নভেম্বর পর্যন্ত ১৪৭টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের। আহতের সংখ্যা ২৭২। রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৫০ কিলমিটার পর্যন্ত কাজ অবশ্য কিছুই এগোয়নি। সেখানে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ। অবশ্য ৩টি এলাকাতেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের নির্মাণকারী সংস্থা হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকসন কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কাজই শেষ হয়ে যাবে।

toll tax farakka berhampore four lanes national highway
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy