শোকার্ত পরিবার।
মাত্র মিনিট কুড়ির ব্যবধানে নদিয়ার তেহট্টে থানারপাড়ায় শুক্রবার বিকেলে পরপর দু’জনকে খুন করা হল। প্রথমে খুন করা হয় আনিসুর রহমান বিশ্বাস (৬০) নামে তৃণমূলের এক নেতাকে। আনিসুর খুনে অভিযোগের আঙুল উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এক কিলোমিটার মতো দূরে নারায়ণপুর ১ পঞ্চায়েত দফতরে ঢুকে গুলি করে খুন করা হয় সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য আব্দুল হক শেখকে (৬৫)। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, আনিসুর খুনের বদলা হিসেবেই আব্দুল হককে খুন করা হয়েছে। সিপিএমও আব্দুল হককে খুনের ঘটনায় তৃণমূল দায়ী বলে অভিযোগ করেছে। আনিসুর ও আব্দুল হক দু’জনেই মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা বলে পরিচিত ফাজিলনগরের বাসিন্দা।
আনিসুরও দু’টি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন। ২০০৫ সালে সিপিএম কর্মী আব্দুল লতিফ মণ্ডল খুন হন। তার পরের বছর লতিফের দাদা আব্দুল গনি মণ্ডলকে খুন করা হয়। এই দু’টি খুনে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত আনিসুর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আব্দুল লতিফকে খুনের ঘটনায় আনিসুরের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল তেহট্ট ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে। তবে মাস সাতেক আগে তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে বাড়ি ফেরেন। এ দিন কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে আব্দুল গনিকে খুনের মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পরে
নারায়ণপুরে সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে চা খান আনিসুর। তারপরে বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ একা একা সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
তখনই স্থানীয় লালমাঠ এলাকায় আচমকা কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর উপরে চড়াও হয়। সুনসান এলাকায় দু’পাশে মাঠ, মাঝখানে ইটের সরু রাস্তা। সেখানেই হাঁসুয়া দিয়ে তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। পরিবারের লোকজনের দাবি, তাঁকে গুলিও করা হয়েছে। ঘটনাস্থলেই মারা যান আনিসুর। পুলিশও চলে আসে দ্রুত। আনিসুর আগে কংগ্রেসে ছিলেন। সে সময়ে তিনি নারায়ণপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে পরপর তিনবার প্রধান হন। করিমপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও ছিলেন এক দফায়। এলাকায় আনিসুর দাপুটে নেতা হিসেবেই পরিচিত। তাঁর বৌমাও এখন পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁর মৃত্যুর খবর তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। চাপা উত্তেজনাও টের পাওয়া যাচ্ছিল এলাকায়।
পঞ্চায়েত দফতরে তখন একশো দিনের কাজের ব্যাঙ্ক আমানত তৈরির কাজ চলছিল। সেই কাজের তদারকি করছিলেন আব্দুল হক। ভিড়ের মধ্যেই বেলা পৌনে চারটেরও আগে জনা কয়েক দুষ্কৃতী সেখানে ঢুকে তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর পাঁচটি গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন আব্দুল হক। আতঙ্কে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায় পঞ্চায়েত দফতরের ভিতরে। বন্ধ হয়ে যায় এলাকার দোকানপাট। রাস্তাঘাটও সুনসান হয়ে যায়। বিরাট পুলিশ বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকা ঘিরে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসেন জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র সহ পুলিশের বড় কর্তারাও। পুলিশ সুপার বলেন, “এই দু’টি খুনের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”
তৃণমূলের জেলার কার্যকরী সভাপতি অজয় দে-র দাবি, আনিসুরকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “আনিসুরের জনপ্রিয়তার দাপটে বিরোধীরা জমি হারাচ্ছিল। তাই তিনি জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে সিপিএমের লোকজন তাঁকে খুন করেছে।” আব্দুল হকের খুনে অজয়বাবুর ব্যাখ্যা, তিনি জনরোষের শিকার হয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদি-র অবশ্য পাল্টা দাবি, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাওবাদী ও তৃণমূল খুনের রাজনীতি করে আসছে। তৃণমূলই আব্দুল হককে খুন করেছে। আনিসুরকে খুনের প্রসঙ্গে সাদি-র দাবি, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা।”
এই পঞ্চায়েতের মোট সদস্য ১৫ জন। প্রথমে সিপিএমের ছিল ৮টি আসন। ৭টি ছিল তৃণমূলের। মাস কয়েক আগে এক সিপিএম সদস্য মারা যান, তাঁকে খুনের অভিযোগও তখন উঠেছিল। মাস খানেক আগে আত্মঘাতী হন তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যা। তাই আব্দুল হক মারা যাওয়ায় এখন এই পঞ্চায়েতে দু’পক্ষেরই আসন সংখ্যা ৬।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy