Advertisement
E-Paper

দলের নির্দেশ উড়িয়ে বাজেটে তৃণমূলের পাশে, শাস্তির মুখে কংগ্রেস সদস্যরা

দলীয় কোন্দলে কিছুতেই বাজেট পাশ করাতে পারছিল না তৃণমূলের দখলে থাকা সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতি। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার কংগ্রেস ও সিপিএম পাশে দাঁড়ানোয় পাশ হল পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তবে ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ দলীয় হুইপ অগ্রাহ্য করে তৃণমূলের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন কংগ্রেসের সদস্যরা। তিন পঞ্চায়েত প্রধান-সহ পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় ১২ জন সদস্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০০:১৪

দলীয় কোন্দলে কিছুতেই বাজেট পাশ করাতে পারছিল না তৃণমূলের দখলে থাকা সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতি। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার কংগ্রেস ও সিপিএম পাশে দাঁড়ানোয় পাশ হল পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তবে ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ দলীয় হুইপ অগ্রাহ্য করে তৃণমূলের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়লেন কংগ্রেসের সদস্যরা। তিন পঞ্চায়েত প্রধান-সহ পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় ১২ জন সদস্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিল মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস। একই ‘অপরাধে’ সিপিএমও দলীয় এক সদস্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতিতে বার্ষিক বাজেট পাশ না হওয়ায় কার্যত অচলাবস্থা চলছিল। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আকলেমা বিবি বলেন, “৪৯ জন সাধারণ সদস্যের মধ্যে মঙ্গলবার ২৭ জন হাজির হয়ে বাজেট প্রস্তাবকে সমর্থন করায় ২৯ কোটি ২৯ লক্ষ ৯১ হাজার টাকার পুর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাব পাশ হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এই টাকা খরচ করতে না পারায় সাগরদিঘির উন্নয়ন থমকে রয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে যাঁরা বাজেট প্রস্তাব পাশ করতে সহায়তা করেছেন তাঁদের ধন্যবাদ।”

গত বছর মোট নির্বাচিত ৩৩ জন সদস্যের মধ্যে ১৭ জনের সমর্থন নিয়ে সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গড়ে তৃণমূল। কিন্তু তারপর থেকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মহম্মদ আলির নেতৃত্বে দলেরই আট পঞ্চায়েত সদস্য ও দুই প্রধান সরাসরি প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত সাহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এরপর প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও আর্থিক বাজেট পাশ করাতে পারছিল না ওই পঞ্চায়েত সমিতি। সাংসদ, বিধায়ক, প্রধান-সহ পঞ্চায়েত সমিতির সাধারণ সদস্য সংখ্যা ৪৯। এর আগে দু’বার বাজেট সভা ডাকা হলেও অর্ধেকের বেশি সদস্যের সমর্থন না পাওয়ায় পাশ করানো যায়নি খসড়া বাজেট। ১০ জুন সুব্রত সাহার অনুগামী ১৫ জন দলীয় সদস্যের উপস্থিতিতে কংগ্রেসের ১০ জন সদস্যের সাহায্য নিয়ে মোট ২৫ জন সদস্যের সমর্থনে খসড়া বাজেট পাশ করানো হয়। সেই খসড়া বাজেট সভায় উপস্থিত থেকে তৃণমূলকে সমর্থনের জন্য জেলা কংগ্রেস থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সাগরদিঘির কংগ্রেস সদস্যদের।

মঙ্গলবার ছিল পুর্ণাঙ্গ বাজেট সভা। এদিন আবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জেলা কংগ্রেস জানিয়ে দেয়, বাজেট পাশ করাতে আর সমর্থন করা যাবে না তৃণমূলকে। জেলা কংগ্রেস থেকে সেই মতো সাগরদিঘি ব্লকের দুই ব্লক সভাপতির কাছে লিখিত নির্দেশও পাঠানো হয়। ব্লক কংগ্রেসের দুই সভাপতি দলের সেই নির্দেশের কথা লিখিত ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির ৮ জন সদস্য, ৩ জন প্রধান ও জেলা পরিষদের এক সদস্যকে জানিয়ে দেন। কিন্তু দলের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে মঙ্গলবারের বাজেট সভায় হাজির হন তিন প্রধান-সহ ১২ জন কংগ্রেস সদস্য। কংগ্রেসের সাগরদিঘি ১ জোনের সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলীয় নির্দেশ না মেনে যাঁরা সভায় গিয়েছেন দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” সাগরদিঘি ২ জোনের সভাপতি নিরঞ্জন সিংহ বলেন, “দলের নির্দেশ পেয়েও তা না মানার জন্য শাস্তি পেতে হবে ওই সদস্যদের।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল রাজনীতি করার জন্য সাগরদিঘি নিয়ে নোংরা খেলা খেলছে। ওদের নিজেদের দলের কোন্দলে ঠেলায় পড়ে উন্নয়নের কথা বলে সাগরদিঘিতে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে পেতে চাইথে। দিল্লি থেকে দলীয় সদস্যদের বাজেট সভায় না যাওয়ার নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন প্রদেশ সভাপতি। সেই নির্দেশ জানার পরেও তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করে দল বিরোধী কাজ করেছেন। এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের দাউদ মণ্ডল বলেন, ‘‘এদিনের বাজেট সভায় হাজির থেকে বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করেছি। সভায় দলের ১২ জন সদস্য উপস্থিত ছিলাম। এর বাইরে আর কোনও মন্তব্য করব না।” বাজেট সভায় উপস্থিত ছিলেন মণিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের দেবাশিস সরকার। তিনি বলেন, “এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এদিনের সভায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার বাজেট পাশ হয়েছে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এই বাজেটের খুব দরকার ছিল।”

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজেট সভায় গিয়ে তৃণমূলকে সমর্থন করায় হারুণ অল রসিদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।” আর সাগরদিঘি ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি মহম্মদ রেজাউল্লা বলেন, ‘‘তৃণমূলের দু’জন প্রধান সহ মোট ১০ জন সদস্য বাজেটের সভায় যোগ দেননি। ভবিষ্যতেও দেবেন না। কারণ পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না।”

cpm tmc panchayat samiti sagardighi punishment congress members face punishment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy