Advertisement
E-Paper

নদিয়ায় শৌচাগারের হিসেবে বিস্তর জল

কথা ছিল, ২০১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নদিয়ার সব ব্লক “নির্মল” বলে ঘোষণা করা হবে। জানুয়ারির গোড়ায় দেখা যাচ্ছে, এখনও দেড় লক্ষ পরিবার পায়নি শৌচাগার। ‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্পের এই ব্যর্থতার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিস্ময়। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুসারে, অক্টোবর ২০১৩ থেকে জানুয়ারি ২০১৪, মাত্র এই চার মাসে জেলায় তৈরি হয়ে গিয়েছিল ১ লক্ষ ৩২ হাজার শৌচাগার। অথচ পরবর্তী ১১ মাস, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে মাত্র হাজার দশেক শৌচাগার।

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৮

কথা ছিল, ২০১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নদিয়ার সব ব্লক “নির্মল” বলে ঘোষণা করা হবে। জানুয়ারির গোড়ায় দেখা যাচ্ছে, এখনও দেড় লক্ষ পরিবার পায়নি শৌচাগার।

‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্পের এই ব্যর্থতার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিস্ময়। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুসারে, অক্টোবর ২০১৩ থেকে জানুয়ারি ২০১৪, মাত্র এই চার মাসে জেলায় তৈরি হয়ে গিয়েছিল ১ লক্ষ ৩২ হাজার শৌচাগার। অথচ পরবর্তী ১১ মাস, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে মাত্র হাজার দশেক শৌচাগার।

এই দুটি হিসেবই কিন্তু জেলা প্রশাসনেরই। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর নদিয়া জেলা প্রশাসন জেলার সমস্ত পরিবারেই শৌচাগার তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে জেলার ১৭টি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত এক লক্ষ শৌচাগার নির্মাণ করা হবে। নদিয়া জেলা পরিষদের সচিব অভিরূপ বসুর দাবি, ‘‘ওই সময়কালে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে, ১ লক্ষ ৩২ হাজার শৌচাগার তৈরি হয়েছিল।’’

অথচ মাস দু’য়েক আগে জেলা প্রশাসন ১৮৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে শৌচাগার নির্মাণের কাজ তদারকির জন্য চুক্তি ভিত্তিতে একজন করে কর্মী নিয়োগ করে। সেই কর্মীরা সম্পূর্ণ তৈরি-হওয়া শৌচাগারের তালিকা কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করছেন। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসেবে দেখা যাচ্ছে, নদিয়া জেলায় নথিভুক্ত সম্পূর্ণ শৌচাগারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৬০টি। অর্থাৎ জেলা প্রশাসনের রিপোর্টই বলছে, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের শেষ দিন অবধি দশ হাজার শৌচাগার তৈরি হয়েছে।

তাহলে কি প্রথম চার মাসের কাজের হিসেবে জল মেশানো ছিল? নাকি পরবর্তী নয় মাসের কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে চলেছে?

সাক্ষ্য মিলছে দুই সম্ভাবনার পক্ষেই। নিয়মানুযায়ী, নির্মাণ একশো শতাংশ শেষ হওয়ার পরেই শৌচাগারকে হিসেবে উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যাচাই না করেই পঞ্চায়েত স্তরের অস্থায়ী কর্মীরা ওয়েবসাইটে অসম্পূর্ণ শৌচাগারকে সাফল্যের তালিকাভুক্ত করেছেন। জেলার এক বিডিও বলছেন, ‘‘জেলাশাসক কাগুজে রিপোর্টে বিশ্বাস করেন। তাই আদৌ স্যানিটারি মার্ট শৌচাগার তৈরি করল কি না তা যাচাইয়ের আগেই তড়িঘড়ি আমরা সাফল্যের তালিকা নথিভুক্ত করেছি।’’

যাচাই করতে গেলেই অনেক ক্ষেত্রেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ছে। যেমন নাকাশিপাড়া ব্লকের অধীন নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, দাবি করা ৯০টি শৌচাগার ঠিক ভাবে নির্মাণ হয়নি। ফলে সাফল্যের তালিকা থেকে সেগুলিকে তড়িঘড়ি বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু জেলার বহু গ্রাম পঞ্চায়েতে এখনও যাচাইয়ের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। অনেক বিডিও বলছেন, তখন হিসেবে আরও জল ধরা পড়তে পারে।

আবার প্রকল্পের গতি শ্লথ হওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকে। শৌচাগার নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও বিভিন্ন ব্লকের বিডিও-রা জানাচ্ছেন, শৌচাগার তৈরির বরাত পেয়েছে বিভিন্ন ছোট ছোট সংস্থা, মহিলা-পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এমনকী পাড়ার কিছু কিছু ক্লাবও। এরা কেউই পেশাদার ঠিকাদার নয়। এই ক্ষুদ্র সংস্থাদের হাতে বেশি পুঁজি নেই। শৌচাগার নির্মাণকে আংশিকভাবে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অধীনে আনায় এরা বিপাকে পড়েছেন। এক দিকে, নদিয়া জেলায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ফলে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পের টাকাও বাকি রয়েছে। অন্য দিকে, নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও সব শর্ত পূরণ করে টাকা হাতে আসার প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই কাজ শেষ করতে হিমশিম এই সংস্থারা।

নবদ্বীপ ব্লকের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্তা স্পষ্টই বললেন, ‘‘প্রচুর টাকা বকেয়া রয়েছে বলে কাজ করতে পারিনি। অনেক ক্ষেত্রে কাজ না হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি, কাজ হয়েছে।’’

মাস দু’য়েক আগে জেলায় ইউনিসেফের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আসে। সূত্রের খবর, ওই কর্তারা জেলা প্রশাসনকে প্রস্তাব দেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যাতে শৌচাগার নির্মাণকারী সংস্থাদের ঋণ দেয় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে। প্রয়োজনে ব্লক বা জেলা প্রশাসনকে এ ক্ষেত্রে জামিনদারের ভূমিকা নিতে বলে ইউনিসেফ। কিন্তু সে প্রস্তাবে সায় দেয়নি প্রশাসন।

প্রশাসনের ‘ধীরে চলো’ নীতিতে বিরক্ত হয়ে অনেক শৌচাগারবিহীন দরিদ্র পরিবার নিজেদের অর্থে কষ্টেসৃষ্টে শৌচাগার তৈরি করেছেন। অভিরূপবাবুর কথায়, ‘‘জেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার নিজেদের উদ্যোগে শৌচাগার তৈরি করেছেন।’’ বিভিন্ন ব্লকে এই সব পরিবারের সংখ্যা তৈরি করা হচ্ছে, এবং সেই সংখ্যা ওয়েবসাইটে সরকারের ‘সাফল্যের’ তালিকায় নথিভুক্তও করা হচ্ছে। যার অর্থ, ওয়েবসাইটে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৬০টি শৌচাগারের মধ্যে অনেকগুলিই বস্তুত বাসিন্দাদের নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করা।

নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম অবশ্য সাফল্যকেই বড় করে তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, “আমরা ২ লক্ষ ৪০ হাজার শৌচাগার তৈরি করে ফেলেছি। চলতি বছরে মার্চের মাঝামাঝি গোটা জেলাকেই নির্মল জেলা ঘোষণা করা হবে।’’

latrine toilet nadia monirul monirul shaikh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy