Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নবাবি আমের সুবাস চেনাতে ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম’

অন্ধ্রপ্রদেশে বিঘার পর বিঘা বিস্তীর্ণ আঙুর ক্ষেতকে ঘিরে পযর্টন কেন্দ্র আছে। সিমলায় আপেল নিয়ে। একই ভাবে এ বার মুর্শিদাবাদে আম বাগানকে ঘিরে পর্যটনে জোর দিচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যান পালন দফতর। নবাবি আমের সুবাস সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে মুর্শিদাবাদের লালবাগে ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম’ চালু করছে তারা।

কীটনাশকের ব্যবহার না করে এই ভাবেই মাছি ধরার ফাঁদ পাতা হয় নবাবি আম বাগানে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

কীটনাশকের ব্যবহার না করে এই ভাবেই মাছি ধরার ফাঁদ পাতা হয় নবাবি আম বাগানে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০১:০২
Share: Save:

অন্ধ্রপ্রদেশে বিঘার পর বিঘা বিস্তীর্ণ আঙুর ক্ষেতকে ঘিরে পযর্টন কেন্দ্র আছে। সিমলায় আপেল নিয়ে। একই ভাবে এ বার মুর্শিদাবাদে আম বাগানকে ঘিরে পর্যটনে জোর দিচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলা উদ্যান পালন দফতর। নবাবি আমের সুবাস সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দিতে মুর্শিদাবাদের লালবাগে ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম’ চালু করছে তারা।

মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৮৫ প্রজাতির আম পাওয়া যায়। তার মধ্যে ৩৩টি প্রজাতির আম বাণিজ্যিক ভাবে বহুল পরিচিত। জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর বাগানে আম উৎপাদন হয় প্রায় ১.৩১ লক্ষ মেট্রিক টন। সবচেয়ে বেশি আম ফলে লালগোলায়, প্রায় ২৩ হাজার টন। কিন্তু বিচিত্র প্রজাতির আম উৎপাদনে সেরা লালবাগ।

নবাবি আমলে এই লালবাগ ছিল রাজধানী। বিভিন্ন সময়ে একাধিক নবাব বিভিন্ন প্রজাতির আম লাগিয়েছেন নিজেদের বাগানে। সে সব আমের নামও দিতেন তাঁরা নিজেদের পছন্দ মতো। বিমলি, কোহিতুর, নবাবপসন্দ, কালাপাহাড়, সাদুল্লা, মোলায়েমজাম, সাফদারপসন্দ বা সারেঙ্গাবিচিত্র সব নাম। কিন্তু এখন বেশিরভাগ মানুষই সেই সব আমের নাম, গোত্র, এমনকী চেহারা বা স্বাদের সঙ্গেও পরিচিত নন। লালবাগে এসে পর্যটকরা যখন নবাবি আমের খোঁজ করেন, চারা নিয়ে যেতে যানতখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠকে যান তাঁরা। এই বাস্তব পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মুর্শিদাবাদে ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজমে’ উৎসাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উদ্যান পালন দফতর। মুর্শিদাবাদের সহকারী উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ জানান, চলতি সপ্তাহেই পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয়ে যাচ্ছে ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম’। প্রশাসন থেকে কিছু আম বাগান এবং হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ব্যাটারি চালিত রিকশা ভ্যানে করে লালবাগের বিভিন্ন হোটেল থেকে ইচ্ছুক পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হবে শহরের আশপাশের কিছু নির্দিষ্ট আমবাগানে। সেখানে পর্যটকেরা নবাবী আমলের বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ দেখতে পাবেন। শুধু তাই নয়, আম পাড়তেও পারবেন। ইচ্ছে হলে বাগানে বসে সেই আম খেতেও পারবেন। নার্সারি থেকে গাছের চারা কেনা যাবে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য প্রতিটি গাছে আমের নাম আর সেই আমের ইতিহাস লেখা থাকবে। আমবাগানে গাইড হিসেবে থাকবেন কোনও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তবে বিকিকিনির পসরা থাকবে না। নিদর্শন হিসাবে দু’একখানা আম সঙ্গে নিতে পারলেও কেনা যাবে না ফরমাইশ মতো। অবশ্য কেনা যাবে পছন্দ মতো গাছের চারা। গাছ লাগানোর পদ্ধতি ও পরিচর্যার পরামর্শও দেওয়া হবে আমবাগানে। দেখানো হবে আমের ‘প্যাকেজিং’ পদ্ধতি।

লালবাগের প্রতিষ্ঠিত আম বাগানের মালিক হায়াতুন নবি বলেন, “এলাকায় বেশ কয়েকটি বাগানে বহু প্রজাতির আম চাষ করা হয় বৈজ্ঞানিক প্রথা ও পরিবেশ মেনে। কোনও আমেই এখন আর কীটনাশক দেওয়া হয় না। মাছি ধরার জন্য কী ভাবে গাছে ফাঁদ পাতা হয় দেখে আশ্চর্য হবেন পর্যটকেরা। বাগানে ঢুকলেই আমের গন্ধে নবাবিয়ানার নাগাল পাওয়া যাবে।” ইতিমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাগানে ‘নবাবি আম’ আর বেশি দিন রাখা যাবে না। তাই এই সপ্তাহেই ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম’ শুরু করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন আম বাগানের মালিকেরা।

প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক ভিড় জমান ইতিহাসের গন্ধমাখা মুর্শিদাবাদের লালবাগে। পাশাপাশি ‘ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম’কে ঘিরে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকে পর্যটন নতুন মাত্রা পাবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। শুভদীপবাবু বলেন, “এই বছর পরীক্ষামূলক ভাবে ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম চালু হলেও পরে এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে মুর্শিদাবাদ পুরসভা ও জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mango tourism raghunathganj biman hazra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE