Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের উপর চড়াও শান্তিপুরে, হার উধাও ওসির

একাধিক মামলায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতীকে ধরতে গিয়ে মহিলাদের হাতে আক্রান্ত হলেন শান্তিপুর থানার ওসি-সহ চার পুলিশকর্মী। বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিপুরের তোপখানা-রাজপুতপাড়া লেন এলাকায়। আহতদের শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত ওসি পার্থপ্রতিম রায়ের গলার সোনার হারও খোওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

একাধিক মামলায় অভিযুক্ত দুষ্কৃতীকে ধরতে গিয়ে মহিলাদের হাতে আক্রান্ত হলেন শান্তিপুর থানার ওসি-সহ চার পুলিশকর্মী।

বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিপুরের তোপখানা-রাজপুতপাড়া লেন এলাকায়। আহতদের শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত ওসি পার্থপ্রতিম রায়ের গলার সোনার হারও খোওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

নদিয়ার জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘একটা নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এক অভিযুক্তকে ধরতে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বিরদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন আসামীর পরিবারের লোকজন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় শান্তিপুর থানার পুলিশ সাদা পোশাকে গিয়েছিল তোপখানা পাড়া এলাকায়। ডাকাতি ও খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগে বিটন বিশ্বাস নামে এক জনকে ধরার কথা ছিল। এর আগেও পুলিশ তাকে ধরতে গিয়ে পায়নি।

এ দিন পুলিশের কাছে খবর আসে, বাড়ি ফিরেছে বিটন। সেই মতো পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশ কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ধরেও ফেলেছিলেন বিটনকে। কিন্তু তার পরিবারের লোকজনের চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশী-আত্মীয়রা। মহিলারা এগিয়ে এসে পুলিশকে ঘিরে ধরে। বিটনকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য শুরু হয় টানাটানি।

আহত এক পুলিশ কর্মী জানান, মহিলারা বিটনকে ছিনিয়ে নিতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তখনই পুলিশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে মহিলারা কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এরই মধ্যে এক মহিলা কাঠ নিয়ে এসে পুলিশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুরুষরা অবশ্য সে সময় দূরে দাঁড়িয়ে ছিল বলে পুলিশ কর্মীরাই জানিয়েছেন।

মহিলাদের ক্রমণে ওসি পার্থবাবুর জামা ছিঁড়ে যায়। তাঁর হাতে, বুকে, ঘাড়ে চোট লেগেছে বলে পুলিশের দাবি। চোট পান আরও তিন জন। এরই মধ্যে পুলিশের হাত থেকে বিটনকে ছিনিয়ে নেয় মহিলারা। রণে ভঙ্গ দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসতে বাধ্য হয় পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ পাল্টা মারধর করেছে বলে অভিযোগ বিটনের পরিবারের। তার মা রিনা বলেন, “পুলিশকে ছেলেকে ধরতে এসেছিল। ওয়ারেন্ট আছে কিনা, জানতে চেয়েছিলাম। তাতে ওরা আমাকেই মারধর করতে শুরু করে। তা দেখে খেপে গিয়ে পাড়া-পড়শি, আত্মীয়েরা প্রতিবাদ করেছে।” তাঁর আরও দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসে ছেলেকে ধরতে এসেছিল পুলিশ। তখনও রিনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে পুলিশ। সে কথা জানিয়ে আদালতে মামলা করেছেন ওই মহিলা।

এলাকার বাসিন্দা তথা শান্তিপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের নরেশলাল সরকার বলেন, ‘‘পুলিশ এক আসামীকে ধরতে এলে তার পরিবার ও প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন মহিলারা পুলিশের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করে সেই আসামীকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। পুলিশকর্মীরা আহত হয়েছেন বলেও জানতে পেরেছি। শুনেছি এর আগে ওই যুবকের মা পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেছে।’’ সিপিএমের শান্তিপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তী আবার বলেন, ‘‘বিটন বিশ্বাস নামে ওই দুষ্কৃতী তৃণমূল-আশ্রিত। নেতাদের সঙ্গে তার গণ্ডগোলের জন্যই পুলিশ তাকে ধরতে সক্রিয় হয়েছে।’’

যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে শান্তিপুরের পুরপ্রধান ও স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের অজয় দে বলেন, ‘‘ওই আসামীর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও দিন কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমরা চাই পুলিশ সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আর পুলিশের উপরে চড়াও হয়ে তাকে যারা পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিক পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

attack on police shantipur officer in charge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE