তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৃণমূল। ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অনাস্থা এল সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতিতে। সভাপতি আকলেমা বিবির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন ১১ জন দলীয় সদস্য।
দলীয় বিধায়ক সুব্রত সাহা গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ আকলেমা সম্পর্কে শুরু থেকেই ক্ষোভ ছিল দলের অন্দরে। ৩৩ সদস্যের ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা ১৬। কংগ্রেসের ৯, ফরওয়ার্ড ব্লকের ১ এবং সিপিএম-র ৭ জন সদস্য ছিলেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের ১ সদস্যের সমর্থনে তৃণমুল পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে সাগরদিঘিতে। সভাপতি হন সুব্রত সাহার অনুগত আকলেমা বিবি। তারপর থেকেই ব্লক তৃণমুল কমিটি বিদ্রোহ করে তত্কালীন মন্ত্রী সুব্রত সাহার বিরুদ্ধে। দলের ৭ পঞ্চায়েত সদস্য সমর্থন করে ব্লক সভাপতিকে মহম্মদ আলি মধুকে। সুব্রত সাহার দিকে যান ৯ জন। তৃণমুল সরাসরি দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এরপর থেকে সেই দলীয় কোন্দল বেড়েছে ক্রমশই। গত দু’বছরে বার্ষিক বাজেট পাশ করাতে পারেনি তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতি। চলতি বছরের ৮ জুলাই কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে বার্ষিক বাজেট পাশ করাতে হয়।
সোমবার জঙ্গিপুর মহকুমাশাসকের কাছে অনাস্থা জমা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্যরা। এই অনাস্থায় সামিল হয়েছেন সুব্রত অনুগামী আরও চার পঞ্চায়েত সদস্য। নিয়ম মতো পাঁচ দিনের মধ্যে অনাস্থা সভার দিন ঠিক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে মহকুমাশাসককে। মহকুমাশাসক প্রিয়াঙ্কা শিঙলা বলেন, “অনাস্থার দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। বিডিও-র সঙ্গে কথা বলে দিন ঘোষণা হবে।”
বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্যদের অন্যতম পঞ্চায়েত সমিতির দলনেতা কিনার শেখ বলেন, “সুব্রতবাবু বকলমে পঞ্চায়েত সমিতি চালাচ্ছিলেন তাঁর অনুগত বহিরাগতদের দিয়ে। সমস্ত উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিয়ে কার্যত হরিলুঠ চলছিল সেখানে। সদস্যদের মান সম্মান বাঁচাতেই এই অনাস্থা আনতে বাধ্য হয়েছি আমরা।” তৃণমুলের ব্লক সভাপতি মহম্মদ আলি মধু বলেন, ‘‘সাগরদিঘিতে দলের ব্লক কমিটির কোনও মর্যাদা দিতেন না সুব্রতবাবু। বহরমপুর থেকে সাগরদিঘিকে চালানো হচ্ছিল। গত তিন বছরে ব্লক কমিটির কোনও সভায় হাজির হননি তিনি। বরং একটা সমান্তরাল সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। তাই এই অনাস্থা কার্যত সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধেই।” সুব্রত সাহা অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করা হবে এই অনাস্থা। যাঁরা অনাস্থা এনেছেন তাঁরা দলের ক্ষতি করছেন, মানুষের রায়কেও অসম্মান করছেন। যে করেই হোক এই অনাস্থা রুখব। মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন।”
এ দিকে দলীয় এই কোন্দলে রীতিমত ক্ষুব্ধ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন। তিনি বলেন, “দলের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে আমি যখন সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি তখন দলের কেউ কেউ তা ভেস্তে দিতে চাইছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া হবে না। কেউই দলের ঊর্ধ্বে নয়। নিজের এলাকায় নিচুতলার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই চলতে হবে সমস্ত নেতাকে।”
অন্যদিকে মঙ্গলবার বড়ঞা থানার বড়ঞা ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩টি আসনের মধ্যে সিপিএম চারটি, আরএসপি চারটি ও কংগ্রেস পাঁচটি আসনে জয়ী হয় বামফ্রন্ট। গত ১৫অক্টোবর কংগ্রেস ওই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে। এদিনের ভোটাভুটিতে ছয় বাম সদস্য যোগ দেননি। সিপিএমের সামসুদ্দিন শেখ ও ফজলুন খাতুন কংগ্রেসের ওই অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। কংগ্রেসের কৃষ্ণেন্দু দাস বলেন, “বেশ কিছু সদস্যের নিজস্ব এলাকা ছাড়া গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও উন্নয়নের হচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে আমরা অনাস্থা এনেছিলাম। সিপিএমের দু’জন আমাদের সমর্থন করেন। সিপিএমের বড়ঞা লোকাল কমিটির সম্পাদক মির্জা কাম্বার আলি বলেন, “আমরা অনাস্থা বলে মানতে পারছি না। কারণ আমাদের একজন সদস্য ওই অনাস্থার কোন চিঠি পাইনি আর যারা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য গিয়েছে মানুষ আমাদের চেয়েছিল বলে আমরা পঞ্চায়েতে এসেছিলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy