Advertisement
E-Paper

পরেও সন্ত্রাস, ভোট পড়ল ৮০ শতাংশ

ভোট মিটে যাওয়ার পরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল সৈয়দাবাদ এলাকা। অভিযোগ, তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী কংগ্রেস কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছেন। কয়েকজন কংগ্রেস কর্মীর বাড়ি ভাঙচুরও করা হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, তাঁদের রোষে পড়েছিলেন এলাকার কিছু মহিলাও। কংগ্রেসের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগও করা হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী সৈয়দাবাদ এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এদিন আমাদের কর্মী কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীকে ব্যাপক মারধর করে। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।

শুভাশিস সৈয়দ, সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় ও কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০১:২৬
বহরমপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে মারামারি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বহরমপুরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে মারামারি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

ভোট মিটে যাওয়ার পরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল সৈয়দাবাদ এলাকা। অভিযোগ, তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী কংগ্রেস কর্মীদের উপরে হামলা চালিয়েছেন। কয়েকজন কংগ্রেস কর্মীর বাড়ি ভাঙচুরও করা হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, তাঁদের রোষে পড়েছিলেন এলাকার কিছু মহিলাও। কংগ্রেসের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগও করা হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী সৈয়দাবাদ এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এদিন আমাদের কর্মী কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীকে ব্যাপক মারধর করে। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।” ওই ঘটনায় আহত হন তৃণমূলের কানাইবাবুও। দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে তৃণমূলের লোকজনের হাতে প্রহৃত হন বহরমপুর থানার এএসআই রবিউল ইসলাম। তাঁর মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়েছে।

এই এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে যে সব বাড়িতে বুথের পাশে কংগ্রেস কর্মীদের ক্যাম্প অফিস করতে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছে কংগ্রেস নেতা। অধীর বলেন, “নির্বাচনী সমাপ্তির পর থেকে নতুন করে সন্ত্রাস চলছে। চারশো-পাঁচশো সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে দাঙ্গা শুরু করে সৈয়দাবাদা এলাকায়। কংগ্রেস কর্মীদের মারধর করা থেকে তাদের বাড়ি ভাঙচুরও করা হয়েছে। বাদ যায়নি মহিলারাও। সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় দেড়শো জন আহত হয়েছে। পুলিশকেও মারধর করা হয়েছে। মাথা ফেটেছে পুলিশের। গোটা বাংলায় নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদকে এত দিন ধরে রক্ষা করে রেখেছিলাম। এখন আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যেখানে অভিযোগ, জানানোর সেখানে অভিযোগ জানিয়েছি।” তবে তৃণমূলের তাণ্ডব প্রসঙ্গে ইন্দ্রনীলবাবুর জবাব, “খাসতালুক বহরমপুরে অধীর চৌধুরী থাকতে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল তাণ্ডব চালাচ্ছে, এটা কেউ বিশ্বাস করবে!”

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তিন জন শক্তিপুর এলাকার। বাকি ৯ জন বহরমপুর এলাকার। সব মিলিয়ে এদিন রাজনৈতিক সংঘর্ষে পুলিশ-সহ মোট ১৩ জন ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে।” ওই ১২ জনের মধ্যে ৮ জন কংগ্রেসের এবং চার জন তৃণমূলের। এক জন পুলিশ কর্মী। তৃণূলের চার জনের মধ্যে দুজন কাউন্সিলরও রয়েছেন।

এ দিন সকাল থেকেই সৈয়দাবাদ এলাকা উত্তপ্ত। সোমবার দুপুরে বহরমপুরের সৈয়দাবাদ এলাকার সুদর্শন চক্র বালিকা বিদ্যালয় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে কংগ্রেস ও তৃণমূল যুযুধান দুই শিবিরের মধ্যে বাক্য বিনিময় শেষ পর্যন্ত খণ্ডযুদ্ধে পরিণত হয়। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যে কংগ্রেস কাউন্সিলর সুবল রায়ের নেতৃত্বে কয়েক জন যুবক লালদিঘি পাড় এলাকায় তৃণমূলের একটি ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। সেখানে সোমনাথ দে নামে এক জন তৃণমূল কর্মীকে বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয় বলেও তৃণমূলের অভিযোগ। আহত অবস্থায় তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

বহরমপুর পুরসভার তিন নম্বরে ওয়ার্ডের সুদর্শন চক্র বালিকা বিদ্যালয় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ১০ ও ১১ নম্বর দুটি বুথ করা হয়। বুথের বাইরে পাশাপাশি তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্প করে কংগ্রেস ও তৃণমূল। এদিন সকাল থেকেই সেখানে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হলেও বেলা বাড়তেই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রাক্তন কাউন্সিলর কংগ্রেসের হিরু হালদারের অভিযোগ, “তৃণমূলের কাউন্সিলর কানাই রায় ও তাঁর দলবল বুথ দখলের চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হই। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কানাই রায় ও তার সঙ্গীরা আমাদের উপরে চড়াও হয়।” শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কানাই রায় অবশ্য বলেন, “দীপক চট্টোপাধ্যায় ওরফে কালু তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নন অথচ কংগ্রেসের ক্যাম্পে এসে সকাল থেকে বসে রয়েছেন। আমরা তার প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথা শোনেনি।” পাল্টা হিরু বলেন, “বহরমপুর লোকসভা এলাকার বাসিন্দা হলে যে কেউ দলের যে কোনও ক্যাম্পে বসতে পারে। বিষয়টি কানাইবাবুর জানা নেই। তাই তিনি আজগুবি অভিযোগ করছেন। সেক্ষেত্রে তিনিও তো পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাহলে তিনি থাকলেন কীভাবে?” ওই চাপানউতোরের মাঝে দু’পক্ষের লোকজন হাতাহাতি শুরু করে দেয়। এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মহিলা ভোটার যারা ভোট দিতে যাচ্ছিলেন, তাঁরাও থমকে দাঁড়ান। অনেকে বাড়ি ফিরেও চলে যান। এই অবস্থায় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেয়। সেই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন, নিয়ামত শেখ ও সত্যেন চৌধুরী। ইন্দ্রনীলবাবু পুলিশের কাছে হিরুবাবুকে গ্রেফতারের দাবি জানান। ওই খবর পেয়ে আধ ঘন্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে অধীরবাবু। সব শুনে তিনি বলেন, “আমাদের ক্লান্ত করতে গিয়ে তৃণমূলের ক্লান্ত হয়ে পড়বে।” গোটা বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করার নির্দেশ দিয়ে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে ফিরে আসেন।

ওই ঘটনা মিটে যাওয়ার পরে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ লালদিঘি পাড়ের একটি তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ওই ক্যাম্প অফিসের সামনে বেশ কয়েকটি চেয়ার ভাঙা পড়ে রয়েছে। ছিঁড়ে ফেলা হয়ছে তৃণমূলের পোস্টার-ব্যানার। ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, “আমাদের এক জন কর্মী তপন দে লালদিঘি পাড়ের ক্যাম্প অফিসে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। সেই সময়ে লালদিঘি পাড়ার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সুবল রায় ও তাঁর দলবল বাঁশ দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভাঙচুর চালানো হয়েছে ক্যাম্প অফিসও। গোটা বিষয়টি জানিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও।” ওই দুটি ঘটনায় অবশ্য পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভোটগ্রহণ মিটতে না মিটতেই নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সৈয়দাবাদ এলাকা। ইন্দ্রনীল সেন অবশ্য বলেন, “বহরমপুর লোকসভার বিভিন্ন এলাকায় এদিন সকাল থেকে কংগ্রেস সন্ত্রাস চালিয়েছে। তবে তৃণমূলের কর্মী ও এলাকার ভোটাররা ওই সন্ত্রাস নিজেরা সামলে নিয়েছে। পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন হয়নি। সেই সঙ্গে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে মাঠে-রাস্তায়-বুথে-চোখের সামনে এই প্রথম বার ঘুরতে দেখলেন ভোটাররা।”

আরএসপি-র প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটেছে। বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও তার প্রভাব ভোটে পড়েনি। আজকের ভোটের পরে বলতে পারি, চতুর্মুখী লড়াইয়ে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।” মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও অবশ্য বলেন, “বহরমপুর লোকসভা আসনে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। টুকরো গণ্ডগোল ছাড়া বড় ধরণের কোনও ঘটনার খবর নেই। বেশ কয়েকটি বুথে ইভিএম গণ্ডগোলের অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। সেখানে নতুন ইভিএম দিয়ে ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয়।” ২০০৯ সালে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৮০.৭০ শতাংশ। সেখানে এ বার রাত ৯টা পর্যন্ত হিসেব ৮০.০৪ শতাংশ। মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধেও। শক্তিপুরের দু’টি বুথের বাইরে পরেশ পাল ও সত্য কুণ্ডু নামে দুই কংগ্রেস কর্মীকে রড দিয়ে মারধর করা হয়। দুপুরে ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দেচাপড়ায় কান্দি মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি আটকে ভাঙচুর করে তৃণমূল। এর জেরে উত্তেজনা ছড়ায় দেচাপড়ায়। পরে আবার কংগ্রেস ও তৃণমূলের ছেলেরা বোমা, বন্দুক নিয়ে জড়ো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এলে পালিয়ে যায় সকলে। আগ্নেয়াস্ত্রের এমনই দাপট দেখা যায় বড়ঞার চাঁদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। বুথ থেকে মেরেকেটে দু’শো মিটার দূরে শাসকদলের লোকেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের এলাকায় দেখে তারা তেড়ে আসে। ভরতপুর বিডিও অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দাসপাড়ায় কংগ্রেসের ফেস্টুন ছেঁড়া ও গোলমাল পাকানোর অভিযোগে মুক্তার শেখ নামে এক তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বেশ কিছু জায়গায় ইভিএমে গণ্ডগোল হয়। বেলডাঙার দেবকুণ্ডু জুনিয়ার মাদ্রাসায় ইভিএমে গণ্ডগোলের জন্য আধ ঘণ্টা মতো ভোট বন্ধ ছিল। বেলডাঙারই ভাবদা আজিজিয়া হাইমাদ্রাসার ১৪৮, ১৪৯, ১৫০ ও ১৫১ নম্বর বুথে অধীর চৌধুরীর নামের পাশে কোথাও নীল, কোথাও সবুজ কালিতে ‘মার্ক’ করা ছিল বলে অভিযোগ। এ দিকে, রাস্তা সারানোর দাবিতে নওদা থানার দুধসরে ৫টা বুথে ভোট বয়কট করেছিলেন গ্রামবাসী। পরে একটা বুথে একটা ভোট পড়েছে দেখে বিডিওকে চেপে ধরেন গ্রামবাসী। ওই একটা ভোট এল কী ভাবে জানতে চেয়ে রাত পর্যন্ত বিডিওকে ঘেরাও করে রাখেন গ্রামবাসী।

subhasis sayeed sebabrata mukhopadhyay kaushik saha baharampur kandi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy