Advertisement
E-Paper

পর্যটন মরসুমে খুন, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

ভরা পর্যটন মরসুমে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন এক যুবক। নিহত শুভম দে (২২) নামে ওই যুবকের বাড়ি মুর্শিদাবাদ শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লিতে। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ীকে পুলিশ খুঁজছে। ওই ব্যবসায়ীর পাশেই শুভমদের হোটেল।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৬
ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে শুভমের বাবা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে শুভমের বাবা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ভরা পর্যটন মরসুমে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন এক যুবক। নিহত শুভম দে (২২) নামে ওই যুবকের বাড়ি মুর্শিদাবাদ শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লিতে। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ীকে পুলিশ খুঁজছে। ওই ব্যবসায়ীর পাশেই শুভমদের হোটেল। অভিযোগ, বুধবার রাতে হোটেল বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার সময় দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে শুভমের বাঁ কানের পাশে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই ওই যুবক লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন সত্য সরকার নামে শুভমদের হোটেলের এক কর্মীও। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল ও পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ব্যবসায় রেষারেষির জেরে ওই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। পাশাপাশি একাধিক হোটেল হওয়ার কারণে হোটেল মালিকদের মধ্যে সম্পর্কের যেমন অবনতি ঘটে, তেমনি কোনও হোটেল ভাল চলার ফলে অন্যদের আক্রোশও তৈরি হয়। ওই আক্রোশ থেকেই খুন কি না তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে ওই হোটেল ব্যবসায়ী গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত খুনের প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব নয়। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ঠিক উল্টো দিকে বহরমপুর-লালবাগ রাজ্য সড়কের পাশে শুভমের বাবা নির্মলবাবুর খাবারের হোটেল। ওই হোটেলের গা-লাগোয়া ডান দিকে আর একটি হোটেল রয়েছে যে হোটেলের ব্যবসায়ীকেই পুলিশ খুঁজছে। শুভমদের হোটেলের বাম দিকেও অন্য একটি হোটেল রয়েছে, যার মালিক শুভমদের আত্মীয় হন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই তিনটে হোটেলই বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাশাপাশি ওই তিনটে হোটেলের মধ্যে শুভমদের হোটেলটি সবচেয়ে বড় এবং ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন’ হওয়ায় সারা দিন হোটেলে ভিড় লেগেই থাকত। ফলে বাকি দুটি হোটেল মালিকের চক্ষুশূল ছিল শুভমদের হোটেল। নির্মলবাবু বলেন, “হোটেলের প্রাচীর দেওয়াকে কেন্দ্র করে পাশের ওই হোটেল মালিকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও অন্য হোটেল মালিকের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। অন্যদের থেকে আমার হোটেল ভালই চলছে। বিষয়টি অনেকেই মেনে নিতে পারে না। তার ফলেই তরতাজা ছেলেটাকে অকালে চলে যেতে হল।”

যার বিরুদ্ধে নির্মলবাবুর অভিযোগ, সেই হোটেল ব্যবসায়ীর মা বলেন, “গত ২১ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে নির্মলবাবুদের কোনও দিন গণ্ডগোল হয়নি। শুভমের সঙ্গে আমার ছেলে হাসপাতালের মাঠে একসঙ্গে ফুটবল খেলে বড় হয়ে উঠেছে। কোনও কারণ ছাড়াই আমার ছেলে কেন তাকে মারতে যাবে?” তিনি জানান, “তখন রাত ১১টা হবে। ছেলেমেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়েছি। আচমকা বাইরে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে নির্মলবাবুর গলার আওয়াজ শুনে বাইরে বের হই। দেখি শুভম রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। কি হয়েছে জানতে চাওয়া হলে ‘আমার ছেলে গুলি করেছে’ বলে নির্মলবাবু জানান। ওই কথা শুনে আমি কোনও কথা বলতে পারিনি।” তবে হোটেল নিয়ে রেষারেষির জেরে শুভমের বাবা ও তাঁদের ওই আত্মীয়ের গণ্ডগোল তো দীর্ঘ দিনের। ওই গণ্ডগোল থানা-পুলিশ পর্যন্ত হয়। ওই মামলা এখনও আদালতে চলছে। কিন্তু ওই আত্মীয়দের বিরুদ্ধে কিছু না বলে তিনি আমার ছেলের বিরুদ্ধে খুনের মিথ্যা দোষারোপ করছেন!”

নির্মলবাবু বলেন, “ভিড় থাকায় হোটেল বন্ধ করতে রাত পৌনে ১১টা বেজে যায়। হোটেল বন্ধ করে তাড়াতাড়ি শুভমকে আসার কথা বলে আমি মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ির দিকে কিছুটা এগোতেই ওর মা ফোন করে শুভমকে সঙ্গে করে নিয়ে আসার কথা বলে। তখন ফের মোটরবাইক ঘুরিয়ে হোটেলের দিকে রওনা দিই। সেই সময় আচমকা পর পর দু’বার পটকা ফাটানোর মতো আওয়াজ পাই। তখনও বুঝিনি গুলির আওয়াজ।” তাঁর কথায়, “ওই আওয়াজ শুনে হোটেলের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখি শুভম রাস্তার উপরে পড়ে রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও ছেলেটাকে বাঁচানো গেল না।”শুভমকে বাঁচাতে গিয়ে ওই হোটেলের কর্মী তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা সত্য সরকারও গুলিবিদ্ধ হন। নির্মলবাবু হোটেলের কাছাকাছি রাস্তায় পৌঁছতে তাঁকেও গুলি চালানোর চেষ্টা করা হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন নির্মলবাবু।

পর্যটন মরসুমে বাজারের মধ্যে এমন খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী মহল। লালবাগ সিটি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “মুর্শিদাবাদ বরাবরই শান্তপ্রিয় শহর। কিন্তু এ বছর পর্যটন মরসুমে একের পর এক যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে, তাতে মুর্শিদাবাদ শহর তথা লালবাগ এলাকা সম্পর্কে বহিরাগত পর্যটকদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হচ্ছে। তার প্রভাব পর্যটন শিল্পের উপরে পড়লে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। জেলার অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এ দিকে তরতাজা ওই যুবকের মৃত্যুতে যখন বিবেকানন্দ পল্লি শোকে মূহ্যমান, তখন ওই পাড়া থেকে তিনশো মিটার দূরে বান্ধব সমিতি ময়দানে পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে নক-আউট ক্রিকেট প্রতিযোগিতা সাড়ম্বরে আয়োজন করে মুর্শিদাবাদ শহর তৃণমূল কংগ্রেস। ময়নাতদন্ত শেষে শুভমের মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে আসার আগে গোটা পাড়া ভিড় করেছে ওই বাড়িতে। শেষ বারের মত শুভমকে চোখের দেখা দেখবে বলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পাড়ার সববয়সী মানুষ। তখন সোল্লাসে মাঠের মধ্যে ফাটছে তীব্র শব্দবাজি। এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছেন এলাকার মানুষ।

এ দিন অবশ্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াত পিতার স্মৃতিতে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রীক ফুটবল প্রতিযোগিতার সূচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই যুবকের মৃত্যুতে সেই খেলা স্থগিত রেখে শুক্রবার ডোমকলে কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় স্মৃতি উইনার্স কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয় আয়োজক সংস্থা। লালবাগের বাসিন্দা তথা জেলা তৃণমূলের সম্পাদক সন্দীপ রায়ের সাফাই, “আমরাও ওই খুনের ঘটনায় মর্মাহত। তবে দু’দিন ধরে চলা ওই নক আউট প্রতিযোগিতা এ দিন কোনও ভাবেই স্থগিত করা সম্ভব হয়নি।”

বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত ২৫ ডিসেম্বর মোটরবাইকে পিস্তল হাতে হাজারদুয়ারি চত্বর দাপিয়ে বেড়ায় দুষ্কৃতীরা। তারা ফাঁকা গুলি ছোড়ে, বোমাবাজিও করে। সব জেনেও পুলিশ ও প্রশাসন চুপ করে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। কেউ

মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ২৫ ডিসেম্বরের ওই ঘটনার পর থেকে লালবাগ এলাকায় পুলিশ কড়া নজর রাখছে। সেই নজর যে কতটা ‘কড়া’ তা অবশ্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বুধবার রাতের ওই খুনের ঘটনা।

subham de murder lalbag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy