Advertisement
E-Paper

‘শিল্পীরা একই সঙ্গে কৃষ্ণ ও নিজ়ামউদ্দিনের সাধক, যা খুশি গাইবেন’, লগ্নজিতার ঘটনায় কী মত বাংলার শিল্পীদের?

প্রশ্ন উঠছে, শিল্পীরা কি আদৌ নিরাপদ? খোলা মঞ্চে এমন ঘটনা কি কল্পনা করা যায়? আরও একটি প্রশ্ন উঠছে, শিল্পের মঞ্চেও কি এ বার ভেদাভেদ শুরু হল?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৩
লগ্নজিতার ঘটনায় স্তম্ভিত লোপামুদ্রা, রূপঙ্কর ও পৌষালী।

লগ্নজিতার ঘটনায় স্তম্ভিত লোপামুদ্রা, রূপঙ্কর ও পৌষালী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার লগ্নজিতা চক্রবর্তী। এমনকি, শারীরিক হেনস্থার চেষ্টাও হয়েছিল বলে গায়িকার অভিযোগ। ঘটনায় অভিযুক্ত মেহবুব মল্লিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শিল্পীরা কি আদৌ নিরাপদ? খোলা মঞ্চে এমন ঘটনা কি কল্পনা করা যায়? ‘জাগো মা’ গানটি গাইতে যাওয়া নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত। অভিযুক্ত মন্তব্য করেছিলেন, “অনেক জাগো মা হয়েছে, এ বার একটু সেকুলার গা।” এই ঘটনায় আরও একটি প্রশ্ন উঠছে, শিল্পের মঞ্চেও কি এ বার ভেদাভেদ এসে পড়ল?

ঘটনায় হতবাক লোপামুদ্রা মিত্র। এমন ঘটনাও যে পশ্চিমবঙ্গে ঘটতে পারে, তা কল্পনা করতে পারছেন না গায়িকা। লোপামুদ্রা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “গোটা বিশ্বে ধর্ম নিয়ে যা চলছে, তা যেন কখনও আমার দেশ বা রাজ্যে না হয়। এটাই চাইব। একজন শিল্পী নিজের ইচ্ছামতো গান গাইবেন। গানের আবার ধর্ম কী! গান নিজেই একটা ধর্ম। আমি এই ঘটনা জানতে পেরে অত্যন্ত লজ্জিত।”

লগ্নজিতার মতো এমন অভিজ্ঞতা কখনও নিজের হয়নি লোপামুদ্রার। তবে গানের অনুরোধে গা-জোয়ারি দেখেছেন। নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “মানুষ এখন বদলে গিয়েছে। সমাজমাধ্যম আসার পর থেকে মানবিকতাবোধ কমে গিয়েছে। আগে আমার কাছেও গানের অনুরোধ আসা নিয়ে রাগারাগি হয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতি ঠান্ডা মাথায় সামলাই। কিন্তু এমন ঘটনা কল্পনাই করা যায় না।”

ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, আবার এমন ঘটবে কারও সঙ্গে। কিন্তু আর মানিয়ে নেওয়া যাবে না। রুখে দাঁড়াতে হবে। ক্ষোভ উগরে দিয়ে পৌষালী বলেন, “একজন শিল্পীর নিজের পছন্দমতো গান গাওয়ার অধিকার রয়েছে। মদ্যপ হয়ে এই অসভ্যতা করার অধিকার কে বা কারা দেয়, সেটা জানতে ইচ্ছ করছে। লগ্লজিতাদির সাহস আছে, তাই এফআইআর করেছে। কিন্তু এত দিন এই বিষয়গুলোকে বাদ দিতে দিতে এই জায়গায় পৌঁছেছে। এরা সবাই এখন ঘাড়ের উপর উঠে নাচছে।”

সেলেব্রিটি মানেই ‘সফ্‌ট টার্গেট’। তাঁদের যে কোনও সময়ে বাজে কথা বলা যায়। কিন্তু আর এগুলো ছেড়ে দেওয়া যাবে না। স্পষ্ট কথা পৌষালীর। গায়িকা বলেন, “শিল্পীদের কোনও জাত ও ধর্ম হয় না। এটা তো আব্দুল করিমের কথা। এক শিল্পী একদিকে কৃষ্ণসাধক, আর এক দিকে নিজ়ামুদ্দিন আউলিয়ার সাধক। এক শিল্পীর কাজই হল, তিনি গান গাইবেন, মনোরঞ্জন করবেন এবং পারিশ্রমিক নিয়ে আসবেন। এটুকুই। কিন্তু আমি জানি, এই প্রতিকূলতা আবার আসবে। তখন যেন আমরা বিরোধিতা করতে পারি। ‘জাগো মা’, ‘দে দে পাল তুলে দে’, এক শিল্পীই গাইতে পারেন।”

মঞ্চে উঠে অভ্যবতার অভিজ্ঞতা নিজেরও হয়েছে পৌষালীর। ঘটনা স্মরণ করে গায়িকা বলেন, “বহু বার এমন ঘটেছে। স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, এই গান শুনব না। কিন্তু অন্যরা সব সময়ে বলেছে, মানিয়ে নাও। আজ লগ্নজিতাদি নামী শিল্পী বলে বিষয়টা আরও সামনে এসেছে। বহু অনামী শিল্পীরা গাইতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়। আমি বিএসপিজি-এর (বেঙ্গলস স্টেজ পারফরম্যান্স গিল্ড) সঙ্গে জড়িত বলে এমন বহু ঘটনা জানতে পারি। তাই এ বার থেকে প্রতিবাদ করতেই হবে।”

ঘটনা জানতে পেরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন রূপঙ্কর বাগচীও। তাঁর কথায়, “খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গে এমন হওয়ার কথা নয়। মানুষের সংবেদনশীলতা কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে। যে কোনও মানুষই এর ফলে বিপদে পড়তে পারে। লগ্নজিতার জন্য খুব খারাপ লাগছে। অত্যন্ত গুণী শিল্পী। আমি সহানুভূতি জানাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, এটাই খুব দুঃখের।”

তবে শ্রোতাদের গা-জোয়ারি নতুন কিছু নয়। একাধিক বার সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে রূপঙ্করের। সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রসঙ্গে গায়কের স্বীকারোক্তি, “আসলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনও উপায় থাকেই না। আমাদের মাথা নিচু করে শুনতে হয়। কারণ, যাঁরা আমাদের নিয়ে গিয়েছেন গান গাইতে, তাঁদের জায়গা সেটা। সেখানে আমি কিছু বললে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারব না। দু’-একবার প্রতিবাদ করেছি, তার ফলও পেয়েছি। লোকজন গালাগাল করেছে। তাই এখন আর কিছু বলি না। ভয় পাই এখন।”

শিল্পীরা আসলে কোনও কালেই নিরাপদ ছিলেন না, মত রূপঙ্করের। তাঁর আফসোস, “আরও অদ্ভুত বিষয়, নিরাপদহীন একটা গোষ্ঠী কখনও একতাবদ্ধও হতে পারল না। এটাই সবচেয়ে দুঃখের।”

Lagnajita Chakraborty Lopamudra Mitra Rupankar Bagchi Pousali Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy