প্রতিদিনই ‘দেওয়াল’ ভরে উঠছে নানা স্লোগানে।
কখনও ‘ভিক্ষা নয় অধিকার চাই, শিক্ষার সাথে রোজগার চাই।’ কিংবা ‘আর যেন হয় না ভুল/ নবদ্বীপে তোমরা সবাই এ বার ফোটাও পদ্মফুল।’ কখনও আবার সেই দেওয়ালে থাকছে আবর্জনাময় রাস্তা বা গঙ্গার ঘাটের দূষণের ছবি।
পুরভোটের এখনও ঢের দেরি। কিন্তু, এর মধ্যেই পুর-নির্বাচনকে পাখির চোখ করে পুরোদমে ‘দেওয়াল লিখন’ শুরু করে দিয়েছেন নবদ্বীপের বিজেপি কর্মীরা। তবে, এ দেওয়াল শহরের ইট-পাথরের নয়। এ হল ফেসবুকের ‘ওয়াল’। সেখানেই পরের পর স্লোগান ‘পোস্ট’ করে চলেছেন শহরের তরুণ বিজেপি কর্মীরা। পরের বছর নবদ্বীপের পুরভোটকে মাথায় রেখে ‘নবদ্বীপ মোদীসেনা’ নামে ফেসবুকে একটি নতুন পাতাও খুলে ফেলেছে দলের তরুণ বিগ্রেড। চলতি মাসের গোড়ায় শহরের এক অনুষ্ঠান হলে এই ‘পেজ’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়েছে!
‘পেজ’-এর মাথায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অটলবিহারী বাজপেয়ী ও দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবি। এক পাশে স্বামী বিবেকানন্দ, অন্য পাশে করজোড়ে নরেন্দ্র মোদী। ছবির উপরে স্বামীজীর উক্তি। ‘প্রোফাইল ফোটো’তে নবদ্বীপধাম স্টেশনের একটি ছবির উপর মোদীর মুখ। স্থানীয় সমস্যার কথা ও ছবি ওই পেজে তুলে ধরার পাশাপাশি রয়েছে মোদীর প্রতিনিধিদের ভোট দেওয়ার এবং মোদীর হাত ধরে বদলের সুফল আস্বাদনের সোজাসুজি আহ্বানও। সরাসরি যোগাযোগের জন্য দেওয়া হয়েছে ফোন নম্বর।
এখন থেকেই নবদ্বীপ পুরভোটকে নিয়ে সরাসরি প্রচারও শুরু হয়েছে। থাকছে নবদ্বীপ শহর জুড়ে বিজেপি-র মিটিং-মিছিলের ‘আপডেট’। মুখ্যমন্ত্রীর নানা কাজের প্রতি তীব্র কটাক্ষ বা ছবি নিয়মিত দেখা যাচ্ছে ওয়ালে। সেই সঙ্গে রয়েছে নবদ্বীপের গঙ্গার আবর্জনা ভরা ঘাট বা পুরসভার কোনও ওয়ার্ডের উপচে পড়া ভ্যাটের ছবি। সারদা-কাণ্ড থেকে শাহরুখ, টেট থেকে ত্রিফলা‘নবদ্বীপ মোদীসেনা’র পেজে উঠে আসছে সবই। থাকছে দলীয় নেতাদের গ্রুপ ছবির পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর দুর্লভ সাদাকালো ছবি। শতাধিক লাইক, শেয়ার ও কমেন্টে শহরের নতুন প্রজন্মের মধ্যে ‘মোদীসেনা’ প্রীতি ক্রমশ বাড়ছে বলেই দাবি বিজেপি শিবিরের। ইতিমধ্যেই ১১৫ জন পাতাটিকে ‘লাইক’ করেছেন। তবে, প্রথমেই অনুগামীদের উদ্দেশে অনুরোধ, কেউ যেন এই পাতায় ‘কু-ভাষা’ প্রয়োগ না করেন। নিষিদ্ধ এমনকী, কার্টুনও।
‘নবদ্বীপ মোদীসেনা’-র উদ্যোক্তাদের অন্যতম নবীন চক্রবর্তী বলছেন, “নবদ্বীপের বর্তমান পুরসভা পরিচালনা নিয়ে মানুষ হতাশ এবং চরম ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষোভকে প্রকাশ করার মাধ্যম হয়ে উঠছে ফেসবুকের এই পেজ।” তাঁর দাবি, এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দেখছেন নবদ্বীপে প্রথমে সিপিএম এবং পরে তৃণমূল জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। অথচ শহরটার কোনও উন্নতি হয়নি। এখানকার তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেউ কিছু করেননি। তাই তাঁদের যন্ত্রণা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠছে ফেসবুকের মোদীসেনা। নবীন প্রজন্ম নরেন্দ্র মোদীর মতো দেশনায়কের উত্থানে নতুন করে আশার আলো দেখছে।
বিজেপির নদিয়া জেলার সহ-সভাপতি জীবনকৃষ্ণ সেন বলেন, “নবদ্বীপ মোদীসেনা বিজেপির কোনও দলীয় প্রচার কর্মসূচি নয়। নবদ্বীপ পুরসভা এখন এলাকার সবচেয়ে
বড় প্রোমোটার। সেই প্রোমোটার রাজের স্বরূপ প্রকাশ করতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এখন প্রতিবাদের ভাষা এবং মাধ্যম দুইই বদলে গিয়েছে।” বিজেপি-র তরুণ তুর্কিদের এই উদ্যোগকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ নবদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক, রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। তাঁর বক্তব্য “কে কী ভাবে প্রচার করছেন, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা জানি, মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy