Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়

ফল প্রকাশের পরেও অব্যাহত চাপানউতোর

নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজের ছাত্র ভর্তি ঘিরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, পার্ট-১ পরীক্ষার ‘অসম্পূর্ণ’ ফল প্রকাশ সেই বিশৃঙ্খলারই শেষ সংযোজন। এমনটাই বক্তব্য নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সিংহভাগ কলেজ কর্তৃপক্ষের।

শুভাশিস সৈয়দ ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
বহরমপুর ও নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজের ছাত্র ভর্তি ঘিরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, পার্ট-১ পরীক্ষার ‘অসম্পূর্ণ’ ফল প্রকাশ সেই বিশৃঙ্খলারই শেষ সংযোজন। এমনটাই বক্তব্য নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সিংহভাগ কলেজ কর্তৃপক্ষের।

ভক্তবালা কাণ্ডের পর তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ামক বিমলেন্দু বিশ্বাসকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার বদলে যে দু’জনকে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক ও উপ-পরীক্ষা নিয়ামক পদে বসানো হয়েছে তাঁরা শাসক দলের ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কাজ করার ‘অভিজ্ঞতা’ ওই দু’জনের না থাকার কারণেই প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ বলেও অভিযোগ তুলেছেন কলেজ শিক্ষকদের একাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট-১ পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত ১৩ অগস্ট। পূর্বতন পরীক্ষা নিয়ামক ৫ অগস্ট থেকে ‘ছুটিতে’ রয়েছেন। ফলে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় দায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামকের উপরেই বর্তায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক পার্থসারথী দে বলেন, “গত নভেম্বরে আমাকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে। তার আগে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমনকী নিয়োগ হওয়ার আগেই পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়ে খাতা বিতরণ কেন্দ্রে চলে গিয়েছিল।”

পার্থসারথীবাবু বলেন, “ভক্তবালা বিএড কলেজের ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আচমকা সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই পরিস্থিতিতে আমাকে অনুরোধ করা হয় পরীক্ষা নিয়ামক দফতর সামলানোর। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অসহযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। যাঁরা আমার সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন, তাঁদের হয়তো আমি পছন্দের লোক নই। তবে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে খাতা দেখে সময়ের মধ্যে নম্বর জমা দেওয়ার পরেই আমার বিরুদ্ধে অধ্যাপক বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও অভিযোগ থাকলে তা লিখিত ভাবে জমা দিতে পারতেন। তাহলে ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হত না বলেও তিনি জানান।”

এ দিকে পার্ট-১ পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাড়ে ছ’ মাস পরে অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাপান-উতোর চলছে। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার ৪৮টি কলেজের এক লক্ষ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার পরীক্ষার্থীর ফল অসম্পূর্ণ। শতাংশের হিসেবে প্রায় ১২ শতাংশ! এই বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশ হওয়ায় এক দিকে ছাত্রছাত্রীরা হতাশ, অন্য দিকে উদ্বিগ্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ। যদিও শিক্ষকদের উপরে দায় চাপিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা অবশ্য দুষছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দফতরকেই। যাঁরা দুষছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য করে পার্থসারথীবাবু যা বলেছেন, তাতে প্রচ্ছন্ন হুমকিও রয়েছে। তাঁর কথায়, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে কোন অধ্যাপক কবে খাতা নিয়েছেন এবং খাতা দেখে কবে জমা দিয়েছেন আর কারা খাতা দেখেননি, সমস্ত তথ্য রয়েছে। প্রয়োজনে ওয়েবসাইটে দিয়েও দিতে পারি।”

তবে এক শ্রেণির পরীক্ষকদের খাতা না দেখা এবং বিলম্ব করে খাতা দেখে জমা দেওয়ার কারণ হিসেবে ‘ওয়েবকুটার’ সঙ্গে ওয়েবকুপার’ রাজনৈতিক সমীকরণকেও দায়ী করেছে পরীক্ষা নিয়ামক দফতর। ওয়াবকুপার মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার সভাপতি সুকুমার মাল বলেন, “এমন অভিযোগের কোনও মানেই হয় না।”

বুধবার নদিয়ার কলেজের এক পরীক্ষকের কাছ থেকে ৬৮টি ভূগোল জেনারেল কোর্সের খাতার নম্বর সংগ্রহ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে সাড়ে চার মাস বহরমপুর স্টেশনের আরএমএস ডাকঘরে পড়ে থাকা ৬৭টি রসায়নের জেনারেল কোর্সের খাতা এ দিন জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিংহ কলেজের রসায়নের অধ্যাপক সুকুমার মাল দুজন সহকর্মীকে নিয়ে খাতা দেখেছেন।

তবে পার্ট-১ পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, নদিয়ার বগুলা কলেজের শারীরশিক্ষা বিষয়ের ৪০০ জন ছাত্রছাত্রীর ফলই অসম্পূর্ণ। এ দিন ছাত্র-বিক্ষোভের মুখে পড়ে ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ। কাঁচরাপাড়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছন্দা শুক্লা হাজরা বলেন, “গত ১০ বছরের মধ্যে এই রকম অসম্পূর্ণ ফলপ্রকাশ এবার প্রথম। ছাত্রছাত্রীরা কার্যত হতাশ। এত দিন ধরে দেখে আসছি, ফল প্রকাশের আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হত। সেই সঙ্গে ফোন করে অধ্যক্ষদের জানানোরও রেওয়াজ ছিল। এ বারই তার ব্যতিক্রম ঘটল।” তিনি জানান, “ফলে ছাত্রছাত্রীরা অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশের বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইলে নীরব থাকতে হচ্ছে। ওই বিষয়ে কোনও উত্তর আমাদের জানা নেই।”

নদিয়া দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কলেজের অধ্যক্ষ শেখ শাহজাহান আলি বলেন, “পরীক্ষকদের যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল, দেখা গিয়েছে তা ভুলে ভরা। ওই তালিকায় কলেজ ছেড়ে চলে যাওয়া, অবসর নিয়েছেন, এমনকী তালিকায় এমন পরীক্ষকের নামও রয়েছেন যিনি মারা গিয়েছেন। ফলে যত খাতা তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক পরীক্ষক শেষ পর্যন্ত খাতা দেখার কাজ করেছেন।”

বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডল বলেন, “অসম্পূর্ণ ফল প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই দায়ী। রাজনৈতিক কারণে সিনিয়র শিক্ষকদের বঞ্চিত করে এমন অধ্যাপকদের প্রধান পরীক্ষক করা হয়েছে, যাঁদের অভিজ্ঞতা কম। রাজনীতির রং দেখে নিয়োগ পদ্ধতি বাম আমলেও হয়েছে। এই আমলেও তার পরিবর্তন হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE