Advertisement
E-Paper

বাইরের লড়াই জিততে মাঠে মরিয়া মেয়েরা

কেউ কাপড়ের দোকনে কাজ করেন। কেউ বা হাটে হাটে পান বিক্রি করে সংসার চালান। আবার কাউকে সংসার চালানোর জন্য বাড়ির বাইরে পা না রাখতে হলেও সমাজের,পরিবারের বাধা টপকে মাঠে পা রাখতে হয়। তবুও হাল ছাড়েনি ওরা। কেউ সরাসরি ব্যাট-বল নিয়ে, কেউ বা বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছে বলে বাড়ি ছেড়েছেন। তাঁদের সেই নানা প্রতিকূলতা থেকে উঠে আসার কাহিনী ক’দিন ধরে লোকমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে কৃষ্ণনগর জেলা স্টেডিয়ামে। বোঝা যায় মাঠের ভিতরে মরণপণ লড়াইটা আসলে মাঠের বাইরের লড়াইটা জেতার জন্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৮
রবিবার বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের খেলা। নিজস্ব চিত্র।

রবিবার বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের খেলা। নিজস্ব চিত্র।

কেউ কাপড়ের দোকনে কাজ করেন। কেউ বা হাটে হাটে পান বিক্রি করে সংসার চালান। আবার কাউকে সংসার চালানোর জন্য বাড়ির বাইরে পা না রাখতে হলেও সমাজের,পরিবারের বাধা টপকে মাঠে পা রাখতে হয়। তবুও হাল ছাড়েনি ওরা। কেউ সরাসরি ব্যাট-বল নিয়ে, কেউ বা বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছে বলে বাড়ি ছেড়েছেন। তাঁদের সেই নানা প্রতিকূলতা থেকে উঠে আসার কাহিনী ক’দিন ধরে লোকমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে কৃষ্ণনগর জেলা স্টেডিয়ামে। বোঝা যায় মাঠের ভিতরে মরণপণ লড়াইটা আসলে মাঠের বাইরের লড়াইটা জেতার জন্য। বোঝা যায় কখনও সমাজ, কখনও পরিবার, কখনও বা চরম দ্রারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করা এই মেয়েরা খেলার মাঠেই তাঁদের সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিতে চান।

২৫ ডিসেম্বর থেকে কৃষ্ণনগর জেলা স্টেডিয়ামের মাঠে শুরু হয়েছে সিএবি জেলা মহিলা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। আজ সেই টুর্নামেন্টের শেষদিন। সারা রাজ্যে চারটি জায়গায় এই টুর্নামেন্ট চলছে। তার মধ্যে কৃষ্ণনগরে খেলছে নদিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান। হুগলিতে খেলছে মেদিনীপুর, হুগলি, চন্দননগর ও কলকাতার ক্রিকেট ডেভলপমেন্ট স্কোয়াড। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে খেলছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও যে জেলা টিম দিতে পারেনি তাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে তৈরি একাদশ। আর জলপাইগুড়িতে খেলছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ও মালদহ জেলা। এই চার জায়গার চ্যাম্পিয়ন টিমগুলির মধ্যে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলা হবে। প্রথম দিন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার খেলায় জয়ী হয়েছে নদিয়া। দ্বিতীয় দিনে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে খেলায় জয়ী হয়েছে মুর্শিদাবাদ। আবার শনিবারে নদিয়া ও বর্ধমানের মধ্যে খেলায় জয়ী হয়েছে নদিয়া।

নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত চক্রবর্ত্তী বলেন, “মাঠের ভিতরে যে খেলাটা দেখছেন সেটাই কিন্তু শেষ নয়। প্রতিদিন এই মেয়েগুলোকে মাঠের বাইরে কী চরম প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছেন তা আমরা কল্পনা করতে পারব না। খেলার মাঠে ওদের মরিয়া হয়ে খেলতে দেখে মনে হয় ওরা বুঝি মাঠের বাইরের লড়াইটা জেতার জন্যই মাঠের ভিতরে এভাবে লড়াই চালাচ্ছে।” যেমন বাড়িতে না বলেই খেলতে এসেছে মুর্শিদাবাদ দলের ক্যাপ্টেন। বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি বলে তিনি সোজা টিমের সঙ্গে কৃষ্ণনগরে চলে এসেছেন। নেট প্রাকটিসের ফাঁকে তিনি জানান, “ তা না করলে বাড়ির লোকজন এখানে আসতে দিতেন না। আসলে গ্রামের অনেকেই চান না যে আমি মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলি। পরিবারও চায় না। কিন্তু কি করব। ক্রিকেট ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতেই পারি না।”

মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে খেলতে আসা কয়েকজন খেলোয়াড়ের আবার উপযুক্ত জুতো নেই। তাঁদের কেউ কেউ কোচের জুতো পড়ে খেলতে নামছেন। কেউ বা অন্যের জুতো ও পোশাক ধার করে। তবু তাঁরা মাঠের ভিতরে লড়াইয়ের সময় এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন। মুর্শিদাবাদ দলের কোচ ইলা দাস বলেন, “সমাজ আর দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে এদের মাঠে নামতে হয়। কাজটা মোটেও সহজ নয়। সব সময় মাঠের ভিতরে না জিতলেও ওরা কিন্তু প্রতিদিন অন্য একটা লড়াইয়ে জিতে চলেছে।”

cricket women cricket krishnanagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy