Advertisement
E-Paper

বিগ্রহ অগ্রদ্বীপে, কৃষ্ণনগরে রথ গোপীনাথের ছবি নিয়েই

প্রথমে দোলযাত্রা। এ বার রথযাত্রা। গোপীনাথ ছাড়াই কাটাল কৃষ্ণনগর। গোপীনাথকে আসতে দেওয়া হয়নি অগ্রদ্বীপ থেকে। রবিবার কৃষ্ণনগরের ‘রাজার রথ’ চলল গোপীনাথের বিগ্রহ ছাড়াই। এই রথের প্রায় দু’শো বছরের ইতিহাসে যা প্রথম। রথে রইল শুধু গোপীনাথের ছবি। ১৮ শতকের প্রথমার্ধে কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র মহারাজ গিরীশচন্দ্র এই রথযাত্রার সূচনা করেন। তার পর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে কৃষ্ণনগরের পথে চলছে নদিয়া-রাজের রথ।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০২:৪৭
এ বছর ছবি নিয়ে বেরোল রথ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

এ বছর ছবি নিয়ে বেরোল রথ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

প্রথমে দোলযাত্রা। এ বার রথযাত্রা। গোপীনাথ ছাড়াই কাটাল কৃষ্ণনগর।

গোপীনাথকে আসতে দেওয়া হয়নি অগ্রদ্বীপ থেকে। রবিবার কৃষ্ণনগরের ‘রাজার রথ’ চলল গোপীনাথের বিগ্রহ ছাড়াই। এই রথের প্রায় দু’শো বছরের ইতিহাসে যা প্রথম। রথে রইল শুধু গোপীনাথের ছবি।

১৮ শতকের প্রথমার্ধে কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র মহারাজ গিরীশচন্দ্র এই রথযাত্রার সূচনা করেন। তার পর থেকে দীর্ঘ দিন ধরে কৃষ্ণনগরের পথে চলছে নদিয়া-রাজের রথ। প্রথাগত ভাবে জগন্নাথ নন, রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপীনাথের জন্যই রথের আয়োজন। সেই রথ রইলেও গোপীনাথকে না পেয়ে হতাশ কৃষ্ণনগরবাসী। রথযাত্রার দায়িত্বে থাকা শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউয়ের রথযাত্রা অছি পরিষদের সম্পাদক জনার্দন সাহা বলেন, “প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসা ব্যতিক্রমী রথযাত্রা যে এ ভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।”

কথিত আছে, চৈতন্যদেবের নির্দেশে গোবিন্দ ঘোষ অগ্রদ্বীপে গোপীনাথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ষোড়শ শতকের শেষ ভাগে মূর্তিটি চুরি যায়। সতেরো শতকের দ্বিতীয় দশকে মূর্তিটি উদ্ধার করেন বর্ধমানের পাটুলির জমিদার। তার পর থেকে সেটি নিরাপত্তার কারণে তাঁর বাড়িতেই থাকত। কেবল চৈত্রে গোপীনাথের মেলার সময়ে বিগ্রহ ফিরতেন অগ্রদ্বীপে। এক বার গোপীনাথের মেলায় দুর্ঘটনা ঘটায় বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খান গোপীনাথের দায়িত্ব দেন নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পিতা রঘুরামের হাতে। তার পর থেকে বিগ্রহের নিরাপত্তার ভার নদিয়া রাজ পরিবারের হাতে চলে যায়। বছরের অধিকাংশ সময় রাজবাড়িতেই থাকতেন গোপীনাথ। দুর্গাপুজোর পরে শুধু যেতেন অগ্রদ্বীপে। চৈত্রের মেলার পরে ফের গোপীনাথ ফিরতেন কৃষ্ণনগরে।

কিন্তু এ বছর গোপীনাথ আর ফেরত দেয়নি অগ্রদ্বীপ। প্রথা ভাঙার পিছনে ‘ভূমিপুত্র’কে ঘিরে আবেগ ছাড়াও রয়েছে আর্থিক কারণ। সারা বছর ও মেলার সময় মন্দিরে যে পরিমাণ টাকা প্রণামী পড়ে তার একটা বড় অংশ পুরোহিতের মাধ্যমে রাজপরিবারে চলে যায়। অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ সেবা সমিতির অভিযোগ, তাদের মন্দিরটি ভেঙে পড়ছে দেখেও রাজপরিবার সংস্কারের ব্যাপারে এগিয়ে আসেননি। বিষয়টি মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। চৈত্রে বারোদোলের উৎসবও প্রথম বার গোপীনাথ বিগ্রহ ছাড়াই হয়েছে। এ বার রথযাত্রাও হল গোপীনাথের ছবি নিয়ে।

এই রথের যাত্রাপথ অবশ্য সামান্য, কয়েক’শো ফুট মাত্র। রথ থাকে নতুনবাজারের গোপীনাথ মন্দিরের পাশে। সেখান থেকে সামান্য কিছু দূরে নতুনবাজার মোড় পর্যন্ত যায় রথ। রাতে তা আবার ফিরে আসে রথতলার গোপীনাথ মন্দিরে। জনার্দনবাবু জানান, গিরীশচন্দ্রের আমলে প্রথমে একটি কাঠের রথ ছিল। সেটি নষ্ট হয়ে গেলে নতুনবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও স্থানীয় মানুষের সাহায্যে আর একটি কাঠের রথ তৈরি হয়। সেটিও নষ্ট হয়ে গেলে ১৯৯১ সালে এখনকার লোহার রথটি তৈরি করানো হয়। সাড়ে উনিশ ফুট উচ্চতার সেই রথেই রথযাত্রার দিনে সওয়ার হতেন গোপীনাথ।

এ বার মূর্তির বদলে রথে ঠাঁই পেয়েছে গোপীনাথের একটি আলোকচিত্র। সেই দৃশ্য দেখে অছি পরিষদের সভাপতি শিবু ভাদুড়ির ক্ষোভ, “ঐতিহ্য বজায় রাখতে রথযাত্রা করছি। সব আড়ম্বর বাদ দিয়ে এটা আমাদের এক ধরনের নীরব প্রতিবাদ। যাঁরা গোপীনাথকে অন্যায় ভাবে আটকে রাখলেন তাঁরা আর যাই হোক ভক্ত হতে পারেন না।” নদিয়া রাজ পরিবারের প্রধান সৌমীশচন্দ্র রায় বলেন, “গোপীনাথকে নদিয়ায় ফেরানোর লড়াই এত সহজে ছাড়ব না। এর জন্য যতদূর যেতে হয় যাব।”

অগ্রদ্বীপ অবশ্য তাদের অবস্থানে অনড়। এ দিন সেখানে গোপীনাথ মূর্তি নিয়ে রথযাত্রাও হয়েছে। এই উপলক্ষে সেখানে দিনভর নানা অনুষ্ঠানও হয়েছে।

krishnagar gopinath nabadwip rath debasish bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy