ঘূর্ণির মাটির পুতুল (বাঁ দিকে)। সরভাজা-সরপুরিয়া (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বের বাজারে ঘূর্ণির সুনাম আজকের নয়। ১৮৫১ সালে এখানকার বিখ্যাত শিল্পী শ্রীরাম পালের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়েছিল লন্ডনে। কিন্ত সেখানেই থেমে থাকেনি ঘূর্ণি। একের পর এক কৃতী শিল্পীর সৌজন্যে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে ঘূর্ণির নাম। প্রান্তিক এই জনপদের একাধিক শিল্পী রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। কারও শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন মিশেল ওবামাও। তবে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এই শহরের শিল্পীদের খ্যাতির মতো সমৃদ্ধি কিন্তু বাড়েনি। উল্টে অভাবই যেন শিল্পীদের জাপটে ধরেছে বারবার। কারণ সুনাম থাকলেও তেমন বিক্রি নেই এই শিল্পকর্মের। এর অন্যতম কারণ হিসাবে স্থানীয় শিল্পীরা প্রচারের পাশাপাশি ঘূর্ণির ভৌগলিক অবস্থানকেও অনেকাংশে দায়ী করেছেন। কলকাতার সঙ্গে দূরত্বের ফলে ঘূর্ণির শিল্পকর্ম বিশ্বের মানুষের কাছে সহজে পৌঁছয় না। এখানকার বিখ্যাত মাটির পুতুল কিনতে হলে ক্রেতাদের দীর্ঘ পথ উজিয়ে আসতে হবে কৃষ্ণনগরেই। নদিয়া জেলা প্রশাসন এবার সেই মুশকিল আসান করে দিচ্ছে। রাজারহাটে ইকোপার্কে রাজ্য সরকার যে বিশ্ব বাংলা হাট তৈরি করছে, সেখানকার একটি স্টলে থাকবে ঘূর্ণির মাটির পুতুল, কৃষ্ণনগরের সরভাজা ও সরপুরিয়া এবম শান্তিপুর ও ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “বিশ্ব বাংলার স্টলে আমাদের জেলার এমন তিনটি সামগ্রীকে তুলে ধরতে চাইছি, বিশ্বের বাজারে যার একটা পরিচিতি আছে। বিখ্যাত ওই সামগ্রীগুলো যাতে সহজেই মানুষ পেতে পারেন তার জন্যই এমন উদ্যোগ।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজারহাটে ইকোপার্কের বিশ্ব বাংলা হাটে নদিয়া ও বর্ধমান জেলার জন্য বরাদ্দ হয়েছে দু’টি স্টল। প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও ঘূণির্র মৃত্শিল্পী মৃগাঙ্ক পাল বলছেন, “আশা করছি যে, ওই স্টল থেকে আমাদের তৈরি কিছু শিল্প সামগ্রী বিক্রি হবে। কিন্ত সেটা যে বিশাল পরিমানে কিছু হবে, এমন আশা আমরা করছি না। তবে এর ফলে প্রচারটা কিন্তু আগের থেকে অনেক বাড়বে।” একই মত শান্তিপুর-ফুলিয়ার তাঁত কাপড়ের ব্যবসায়ীদের। শান্তিপুর তাঁত ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক দাস বলেন, “বিশ্ব বাংলা হাটে স্টলে শান্তিপুর-ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি বিক্রি হলে ব্যবসায় তেমন প্রভাব না পড়লেও প্রচার বাড়বে। সেটা কিন্তু কম পাওয়া নয়।” তবে প্রশাসনের এই উদ্যোগে বেজায় খুশি শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, এত দিন সরপুরিয়া ও সরভাজা খেতে হলে সবাইকে কৃষ্ণনগরে আসতে হত। অথচ এখানকার সরপুরিয়া-সরভাজার চাহিদা রয়েছে সর্বত্র। ফলে এমন ব্যবস্থা চালু হলে প্রচার ও বিক্রি দুই-ই বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy