এঁটো থালা ধুতে রাজি না হওয়ায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।
দিন কয়েক আগের ওই ঘটনার আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ওই ছাত্রী। রবিবার সকালে বিএসএফের সদর কার্যালয় লালবাগের রওসনবাগের বাড়িতে বসে সেদিনের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলছে সে। তার বাবা বিএসএফ ব্যাটেলিয়নের এএসআই। তিনি বলেন, “শিক্ষিকার ওই আচরণে মেয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। ট্রমার মধ্যে রয়েছে। ঘুমের মধ্যেও কেঁদে উঠছে। জড়িয়ে ধরে থাকলেও ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।”
গোটা ঘটনা জানিয়ে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন বলে বাবার অভিযোগ। এ দিন লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কল্যাণ করের কাছে ওই ছাত্রীকে দেখানো হয়। ওই চিকিৎসক বলেন, “মারধর করার ফলেই মাথায়, হাতে ও কোমরে ব্যথা রয়েছে। ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়েছে।” হাসপাতালে ভর্তি করে এক্স-রে করার কথাও ওই চিকিৎসক বলেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হতে রাজি হয়নি ওই ছাত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি থেকে ওই ছাত্রী পড়াশোনা করছে। গত ৭-১৩ অগস্ট পর্যন্ত সংস্কৃত সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বহরমপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ৬ অগস্ট ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় হিন্দি গল্প বলার বিভাগে ওই ছাত্রী এবং সংস্কৃত শ্লোক আবৃত্তি বিভাগে আর এক জন প্রথম হয়ে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।
গত ৮ অগস্ট কলকাতার ফোর্ট উইনিয়ম স্কুলে রাজ্য স্তরের ওই প্রতিযোগিতা হয়। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অষ্টম শ্রেণির ওই দু’জন ছাত্রীকে নিয়ে গত ৭ অগস্ট অভিযুক্ত শিক্ষিকা কলকাতায় যান। সেখানে তিনি দমদম এয়ারপোর্টের কাছে তাঁর নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন। পরদিন ৮ অগস্ট প্রতিযোগিতা শেষে ফের তিনি নিজের ফ্ল্যাটে তাদের নিয়ে আসেন। ওই রাতে খাওয়ার জন্য বাইরে থেকে খাবার আনা হয়। প্রহৃত ছাত্রীর কথায়, “আমার পেট ব্যথা করছিল বলে আমি খেতে পারিনি। কিন্তু ম্যাডাম খাওয়ার জন্য জোর করেন। তখন অল্প একটু খাবার খাই। এর পরেই এঁটো থালা ধুতে বলেন। আমি রাজি হইনি। তখন তিনি আমাকে ও আমার বাবা-মা সম্বন্ধে আজেবাজে কথা বলেন।”
৯ অগস্ট সকালে বহরমপুর ফেরার আগে আচমকাই ওই শিক্ষিকা ছাত্রীকে মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। অন্য ছাত্রীটি বলে, “ম্যাডাম এমন ভাবে ওকে মারছিল যে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমিও ভয়ে কাঁপছিলাম। কোনও কারণ ছাড়াই ম্যাডাম আচমকা মারতে থাকে। বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারত বলে কিছু বলতে পারিনি।”
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই শিক্ষিকার সাফাই, “এঁটো থালা ধুতে চায়নি বলে রাতে বকাঝকা করেছিলাম। রাতে না ঘুমিয়ে ওই ছাত্রী ডাইনিং টেবিলের কাচ সরানোর চেষ্টা করেছে, জানালার কাচ ফাঁক করে দিয়েছে যাতে আটকানো যাচ্ছে না, কানের দুল আটকানোর প্যাঁচ জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। ফলে ভীষণ রেগে গিয়ে আমি ওর পিঠের মধ্যে মেরেছি।”
ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, “কলকাতায় ফোন করে শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ঘরের সামগ্রী নষ্ট করার জন্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিতে বলেন। ওই টাকা না দিলে মেয়েকে ফিরে পাব না বলেও হুমকি দেন তিনি।” শিক্ষিকার জবাব, “রেগে গিয়ে ওই টাকা চেয়েছিলাম। বলেছিলাম সাড়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে বহরমপুর স্টেশনে দেখা করে মেয়েকে নিয়ে যাবেন।” প্রহৃত ছাত্রীর মায়ের আরও অভিযোগ, “আমাদের মেয়েদের অটোতে রেখে ওই শিক্ষিকা অন্য একটি ফ্ল্যাটে তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে শুনছি। ওই কথা শুনে আমি শিউরে উঠেছিলাম।” ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা সোমবার অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানাবেন। অধ্যক্ষ সি ঠাকুরতা বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy