Advertisement
E-Paper

ভাঙছে নদীপাড়, আতঙ্কে চর রাজানগর

পাড়ে পাথর পড়তেই আশাই বুক বেঁধেছিলেন রানিনগরের চর-রাজানগর এলাকার বাসিন্দারা। অনেক টালবাহানা পর বর্ষার আগে বাঁধানো পাড় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বুধবার সন্ধের পর ঘুম ছুটে গিয়েছে তাঁদের। পদ্মার জলের তোড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধানো নদীপাড়ের প্রায় ৩০০ মিটার ভেঙে পড়েছে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের কর্তারও।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৬
শুরু হয়েছে ভাঙন। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রাউত।

শুরু হয়েছে ভাঙন। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রাউত।

পাড়ে পাথর পড়তেই আশাই বুক বেঁধেছিলেন রানিনগরের চর-রাজানগর এলাকার বাসিন্দারা। অনেক টালবাহানা পর বর্ষার আগে বাঁধানো পাড় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বুধবার সন্ধের পর ঘুম ছুটে গিয়েছে তাঁদের। পদ্মার জলের তোড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধানো নদীপাড়ের প্রায় ৩০০ মিটার ভেঙে পড়েছে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের কর্তারও। অন্য দিকে, ঘটনার পর ওই কাজের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে বাঁধানো হয়েছে ওই বাঁধ। বাঁধ তৈরির সময় তা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও গ্রামবসীদের দাবি মানতে নারাজ মুর্শিদাবাদের ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত দাস। তিনি বলেন, “কাজের মান নিয়ে কোনও ক্ষোভ থাকতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “হঠাৎ পদ্মা ডানদিকে গতি বাড়িয়ে প্রবেশ করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। নাইলনের বস্তা দিয়ে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমাদের অফিসারেরা সারাদিনই পদ্মাপাড়ে ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রামবাসীরা তাঁদের সহযোগিতা করেছেন।”

পদ্মাপাড়ে চর-রাজানগর গ্রামে প্রায় হাজার দশেক মানুষের বসবাস। ভাঙন এদের কাছে নতুন কিছু নয়। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে কেউ ৪ বা ৫ বার ভাঙন দেখেছেন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে নিজের হাতে ৪ বার বাড়ি স্থানান্তরিত করেছেন প্রফুল্ল মণ্ডল। তাঁর কথায়, “আমরা ভাঙনকে বার বার ছেড়ে এলেও ভাঙন আমাদের পিছু ছাড়েনি। এই বয়সে ৪ বার ঘর ভেঙেছি। ভেবেছিলাম জীবনের শেষ সময়টা হয়তো আর পদ্মার সঙ্গে লড়তে হবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শেষ দেখার এখনও কিছু বাকি আছে।” তিনি আরও বলেন, “এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব কিছুই জানি না। এক টুকরো জমি বেঁচে নেই যে নতুন করে ভিটে গড়ব।” একই আক্ষেপ শোনা গেল স্থানীয় বাসিন্দা বীরেণ মণ্ডল, উত্তম কুমার মণ্ডলদের গলাও। এক সময় বীরেণ বাবুদের প্রচুর জমিজমা থাকলেও এখন সম্বল বলতে বিঘে দুই জমি। সবই তলিয়ে গিয়েছে পদ্মায়। বীরেণ বাবুর কথায়, “পদ্মা কেবল পাড়ই ভাঙেনি, আমাদের বাঁচার রসদটুকুও কেড়ে নিয়েছে। সব হারিয়ে কেউ কেউ তাই পাড়ি দিয়েছে ভিন রাজ্যে। কেউ বা পলিথিন, টিন ইত্যাদীর চালা করে রাত কাটাচ্ছেন।” উত্তম বাবু বলেন “পাথর দিয়ে বাঁধানো পাড় দেখে সকলে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ভেবছিলাম এবার থেকে আর হয়তো পদ্মার কোপে পড়তে হবে না। কিন্তু নিম্ন মানের কাজ গোটা গ্রামটাকে আবার অনিশ্চয়তার খাদের দিকে ঠেলে দিল।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, ভাঙনের জায়গা থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে রয়েছে এলাকার একমাত্র চর মুন্সিপাড়া হাইস্কুল। পঠন-পাঠনের পাশাপাশি বন্যার সময় ওই স্কুলটি হয়ে ওঠে বাসিন্দাদের এক মাত্র ভরসা-স্থল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “সকলেই ভেবেছিলাম আর হয়তো ভাঙনের মুখোমুখি হতে হবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছ ১৪০০ ছাত্র-ছাত্রী সঙ্গে নিজেও ভিটে হারা হব।” তিনি আরও বলেন, “বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতে কিছু হবে না বলে মনে হয় না।” রানিনগরের বিডিও সুব্রত মজুমদার বলেন, “গোটা বিষয়টির উপর আমরা নজর রাখছি। ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের কর্তারা এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন। তারাই ভাল বলতে পারবেন কেন এমন হল।”

erosion river banks rajanagar sujauddin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy