ভেঙে পড়া বহুতল। নিজস্ব চিত্র।
নির্মীয়মাণ একটি আবাসনের দেওয়াল ভেঙে পড়ার পরে কল্যাণীতে সমস্ত বহুতলেই আপাতত নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
রবিবার সকালে কল্যাণী বি ব্লকে একটি আবাসনের পাঁচ তলার উপরের দেওয়াল ভেঙে পড়ে পাশের বাড়ির ছাদে। কেউ জখম না হলেও ঘটনার পরেই আবাসনটির দুই প্রোমোটার অমিত দাস ও অলোক দাস ঘটনাস্থলে যান। সেখানে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কল্যাণীতে সম্প্রতি প্রচুর বহুতল তৈরি হচ্ছে। অনেকেই নিয়ম ভেঙে বেআইনি নির্মাণ করছেন বলেও অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বহুতল আবাসন তৈরির জন্য নিয়ম অনুযায়ী আবাসন দফতরের লাইসেন্স নিতে হয় প্রোমোটারকে। কিন্তু সহজে টাকা রোজগারের লোভে এই ব্যবসায় অনেকেই নেমেছেন যাঁদের ন্যূনতম বাড়ি বানানোর অভিজ্ঞতা বা আবাসন দফতরের লাইসেন্স নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স বের করে আবাসন তৈরিতে নেমে পড়েন সদ্য মাথা তোলা প্রোমোটারেরা। অমিতবাবুদেরও আদতে মিষ্টির ব্যবসা বি ব্লকের ২ নম্বর বাজারে। এই বহুতলটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। পাঁচ তলার উপরে একটি পনেরো ফুটের দেওয়াল ভেঙেই এই বিপত্তি বলে প্রোমোটারেরা জানান। অমিতবাবু বলেন, “শনিবারই দেওয়ালটি তুলেছিল রাজমিস্ত্রিরা। কিন্তু নীচে একটি লোহার রড ছিল। তার উপরেই দেওয়াল গাঁথা হয়ে গিয়েছিল। মিস্ত্রিরা খেয়াল করেনি। এ দিন সকালে ওই রডটি একজন নির্মাণকর্মী টানাটানি করতেই দেওয়ালটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে।” নির্মীয়মাণ আবাসনটির পাশেই জহর সাহার বাড়ি। জহরবাবুর বাড়ির ছাদে ভেঙে পড়ে ওই দেওয়াল। জহরবাবুর অভিযোগ, “যে সমস্ত নিয়ম মেনে বহুতল তৈরি করা উচিত, তার কোনওটিই এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এমনকী আবাসনটি তৈরির সময় ঢাকা না দেওয়ায় ধুলো-বালি, ইটের টুকরো ছড়িয়েছে। তা নিয়ে বহুবার বলা হলেও গুরুত্ব দেননি প্রোমোটার।”
বহুতলের দেওয়াল ভাঙাকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে যান কল্যাণীর পুরপ্রধান নীলিমেষ রায়চৌধুরী। ঘটনাস্থল দেখে এবং দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরেই কল্যাণীতে আপাতত আর বহুতল নির্মাণ হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। নীলিমেষবাবু বলেন, “এই মুহূর্তে কল্যাণীর সমস্ত বহুতলের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে করে একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তারা সমস্ত নির্মীয়মাণ বহুতলের ক্ষেত্রে কতটা নিয়ম কানুন মানা হয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। তারপরেই বহুতল নির্মাণে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবব।”
পুরসভার এই সিদ্ধান্তে প্রোমোটারদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ালেও অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় নির্মাণ ব্যবসায়ী কমল দে বলেন, “পুরপ্রধানের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। বহুতল মানেই নিরাপত্তার প্রশ্ন চলে আসে। কমিটি খতিয়ে দেখার পরে নির্মাণ কাজে অনুমতি পাওয়া গেলে সেটা সবার পক্ষেই মঙ্গল হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy