যাকে খুনের অভিযোগ নিয়ে এক মাস তোলপাড় এলাকা, জেল হাজতে দিন গুনছে পাশের গ্রামেরই এক যুবক, স্বয়ং পুলিশ সুপার দু’দুবার এলাকায় সভা করে আশ্বস্ত করে গিয়েছেন গ্রামবাসীদের, লালগোলার জনার্দনপুরের সেই কিশোরী বুধবার ফিরে এল নিজের বাড়িতে। তাকে দেখে শুধু বাড়ির লোকই নয়, চমকে উঠলেন পাড়া-পড়শিরাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আই সি আর হাইমাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বছর চোদ্দোর ওই কিশোরী গত ২৬ জুন দুপুরে স্কুল থেকে সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন লালগোলা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। চার দিন পর বাড়ি থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে শীতেসনগরের কাছে ভাগীরথীর পাড়ে এক কিশোরীর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। তাই শুনে নিখোঁজ কিশোরীর বাড়ির লোকজন মৃতদেহটি দেখতে যান এবং শনাক্ত করেন। পাশের গ্রামের এক যুবকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও করেন তাঁরা। মৃতদেহের ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। সেই থেকে জেল হাজতেই রয়েছেন ওই যুবক।
বুধবার তখন দুপুর তিনটে হবে। বাড়ির উঠোনে বসে বিড়ি বাঁধছিলেন ওই কিশোরীর দিদি। মা-বাবা বাড়িতে ছিলেন না। দাদা, ভাইরা রাজমিস্ত্রির কাজে রয়েছেন বাঁকুড়া ও ওড়িশায়। দিদির কথায়, “বোনেরা মিলে সবাই গল্প করছি। হঠাৎ ভূত দেখার মতো চমকে উঠি আমরা। সামনেই দাঁড়িয়ে বোন। লাল টকটকে শাড়ি, গলায় মালা। জিরিয়ে একটু গল্প করার আগেই তাকে লালগোলা থানায় নিয়ে চলে গেল পুলিশ।” বিকেলে বাড়ি ফিরে এসে সমস্ত ঘটনা শুনে হতবাক মা-ও। তিনি বলেন, “ছেলেরা গিয়ে বোনের দেহ শনাক্ত করেছিল। পরে ওই মৃতদেহের ছবি দেখলেও আমি ঠিক চিনতে পারিনি। যা-ই হোক ও ফিরে আসায় আমরা খুব খুশি।” ‘পুলিশের খাতায় মৃত’ কিশোরী নিজে কী বলছে? পুলিশকে কিশোরী জানিয়েছে, কলেজ পড়ুয়া প্রেমিকের সঙ্গে ট্রেনে প্রথমে ওড়িশা ও পরে চেন্নাইতে চলে গিয়েছিল সে। সেখানেই টেলিফোনে জানতে পারে গ্রামের সকলে ভাবছে মৃত। তখন বাড়িতে ফোন করলেও পরিবারের সদস্যরা কেউ বিভ্রান্ত করতে চাইছে ভেবে উড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি সুবিধার নয় বুঝে মঙ্গলবার চেন্নাই থেকে বাড়িতে ফিরে আসে সে। কিশোরী অবশ্য নাবালিকা বিয়ের ঝামেলায় পড়তে পারে ভেবে প্রেমিকের নামটা কিছুতেই প্রকাশ করেনি।
এ দিকে, শীতেসনগরে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহটি তা হলে কারতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বাড়ির লোকজন যদি মৃতদেহ চিনতে এই ভাবে ভুল করে তবে পুলিশের কি-ই বা করার আছে?” লালবাগ আদালতে ওই কিশোরীর জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আপাতত আবেদন করবে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy