লোকসভা নির্বাচনের পরে বামেরা দুর্বল হয়ে পড়ায় রাজ্যে উত্থান হয়েছে বিজেপির। দক্ষিণবঙ্গে আড়েবহরে ক্রমেই বাড়ছে তাদের প্রতিপত্তি। সেই ছায়া যে মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু প্রভাবিত জেলাতেও প্রসারিত হয়েছে, ধুলিয়ানের পরে সোমবার, সাগরদিঘির সভাতেও তা টের পাওয়া গেল।
এ দিন, সাগরদিঘির স্কুলমাঠে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সভায় ফের সিপিএম ও তৃণমূল থেকে বেশ কিছু নেতা-কর্মী যোগ দিলেন বিজেপি’তে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও গ্রামীণ সংখ্যালঘু শ্রেণি ভরিয়ে রাখলেন ওই স্কুল মাঠ। অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, “রাজ্যের ফাঁকা আশ্বাসে ভরসা রাখা যাচ্ছে না।” ক’মাস আগেও যে জেলায় পায়ের তলায় মাটি খুঁজত বিজেপি, সেখানে আজ সংখ্যালঘুদের আলোচনায় শোনা গিয়েছে, মোদীর ‘স্বচ্ছ ভাবমূূর্তি’তে ভরসা রাখতে চান তাঁরা।
সভায় ভিড় দেখে রাহুল বলছেন, “সংখ্যালঘু মানুষ বুঝতে পারছেন এত দিন আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয়েছে। সংখ্যালঘু মানুষের এই ভরসাই আমাদের শক্তি।”
রাজ্যে পালাবদলের পরে পঞ্চায়েত, পুরসভা কিংবা লোকসভা--কোনও নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলায় সংখ্যালঘুদের মন পায়নি বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের গড়ে কার্যত দাঁত ফোটাতে পারেনি তারা। ছবিটা বদলে যেতে শুরু করে বিজেপি-র দিল্লি দখলের পরে। গত কয়েক মাসে এই পরিবর্তন কেন?
বিজেপি-র মুর্শিদাবাদ (উত্তর) জেলা সভপতি ষষ্ঠীচরণ ঘোষের ব্যাখ্যা, “বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মুসলিমদের কাছে। তৃণমূলের ফাঁকা প্রতিশ্রুতির শাসনও তারা দেখছে। তার উপর সারদা কাণ্ডে দলীয় নেতা-মন্ত্রীদের ক্রমান্বয়ে জড়িয়ে পড়া দেখে তাদের উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না সংখ্যালঘুরা।” তাই সমশেরগঞ্জ, সাগরদিঘি, জিয়াগঞ্জ, জলঙ্গি, হরিহরপাড়ার মতো সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকা থেকেও বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে বলে তাঁর দাবি।
জেলার বিশিষ্ট গবেষক খাজিম আহমেদ বলেন, “নরেন্দ্র মোদী বাঙালি মুসলিমদের ভরসা জোগাতে পেরেছেন। নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাঁর আমন্ত্রণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের অংশগ্রহণ মুসলিম মানসে দাগ কেটেছে।” তাঁর দাবি, অদূর ভবিষ্যতে কংগ্রেস বা বামেরা কেন্দ্র বা রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরবে, এ সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এই অবস্থায় বিজেপি-ই একমাত্র বিকল্প বলে মনে করছেন তাঁরা।
জেলা বিজেপি-র এক নেতা অবশ্য বলেন, “ক্ষমতা হারানোর পরে বামেরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁদে অনেকে তাই বিজেপি-র দিকে পা বাড়িয়ে আছেন। তুলনায় অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস সমর্থকরা নিজেদের নিরাপদ মনে করেন। তাই এই বাজারেও কংগ্রেসের ঘর ভাঙার সম্ভাবনা কম।”
দলের বিরুদ্ধেই ‘নীতিহীন’ রাজনীতির অভিযোগ তুলে বিজেপির পতাকা ধরেছেন সিপিএমের পরিচিত কর্মী সামায়ুন বিশ্বাস। বামপন্থী আইনজীবী রাজিবুল হুদার কথায়, “বিজেপির উপরে সংখ্যালঘুরা ভরসা করছেন প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে।” তবে জেলা কংগ্রেসের এক সংখ্যালঘু নেতা মনে করেন, সংখ্যালঘুরা বেশির ভাগ সময় ‘ক্ষমতাসীনের’ সঙ্গে থাকতে চান। “তাই এত বিজেপি বন্দনা!”
রাহুলের অবশ্য দাবি, “আমরা কোনও বিশেষ সম্প্রদায়কে বন্দনা করি না, তোষণও করি না। তবে এ দেশ যতটা হিন্দুদের, ততটা মুসলিমদেরও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy