সবচেয়ে বেশি বিধিভঙ্গের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কিন্তু তদন্ত করে প্রশাসন যখন মামলা করল, দেখা গেল শীর্ষে রয়েছে শাসকদল তৃণমূল। রাজ্যের অন্য জেলাগুলোর মতো মুর্শিদাবাদেও নির্বাচনী বিধিভঙ্গে এগিয়ে রইল তৃণমূল।
এই ফারাক কেন? প্রশাসনের বক্তব্য, কারও বিরুদ্ধে বিধি ভঙ্গ করে হোর্ডিং, পোস্টার বা দেওয়াল লিখনের অভিযোগ এলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা হয়। ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলগুলি ব্যবস্থা না নিলে মামলা করা হচ্ছে। তৃণমূল নির্দেশ অগ্রাহ্য করছে বলেই তার বিরুদ্ধে মামলা বেশি। মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতা মহম্মদ আলি অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, “আমরা যেখানে যেমন বলা হচ্ছে, তেমনই করছি। অভিযোগ আর মামলার এই ছবি থেকেই পরিষ্কার নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে।”
নির্বাচনী বিধিরক্ষার নজরদারিতে মুর্শিদাবাদ চষে বেড়াচ্ছে ‘ফ্লাইং স্কোয়াড টিম’। মুর্শিদাবাদ জেলা নির্বাচন দফতর থেকে ২৬টি ব্লকের ২৬টি ফ্লাইং স্কোয়াড দলকে ২৬টি অ্যানড্রয়েড ফোন দেওয়া হয়েছে। ওই ফোনগুলিতে জিপিএস সফটওয়্যার ডাউনলোড করে তাদের দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ফ্লাইং স্কোয়াড টিম কোথায় যাচ্ছে, সেই জায়গায় কতক্ষণ থাকছে যেমন জানা যাচ্ছে, তেমনই নির্বাচনের কাজে গিয়ে তাঁরা কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন দ্রুত পৌঁছতে পারছে। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “ঘটনাস্থলের ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে ওরা। তথ্যভাণ্ডার হিসেবে আমরা তা রেখে দিচ্ছি।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে মুর্শিদাবাদে এখনও পর্যন্ত টেলিফোন ও বিদ্যুতের খুঁটিতে ৯৬৬টি পোস্টার, ৭৩০টি ব্যানার লাগানোর অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সরকারি দেওয়াল লিখনের অভিযোগ জমা পড়েছে ১৭০০টি। এছাড়াও লিফলেট লাগানোর জন্য ৪৪৬৯টি অভিযোগ হয়েছে। পোস্টার, ব্যানার, দেওয়াল লিখন-সহ মোট ৭৮৬৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই অভিযোগ সরেজমিনে খতিয়ে দেখে এখনও পর্যন্ত ৭৮২৩টি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ৭৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ৪৭টি, সিপিএমের বিরুদ্ধে ৪১টি, বিজেপির বিরুদ্ধে ১৮টি, আরএসপির বিরুদ্ধে ১টি এবং অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা নির্বাচন দফতরে। ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিধিভঙ্গের দায়ে জেলা নির্বাচন দফতর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তিনটে, সিপিএম এবং অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা হয়েছে।
অনুমতি ছাড়াই বাড়ির দেওয়াল লিখনের অভিযোগ জমা পড়েছে ৪৩টি। তার মধ্যে ৪০টি অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটে ক্ষেত্রে তদন্ত করে দেখছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক বলেন, “ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তার মধ্যে ১১০০ বোমা, ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২ কিলো বোমার মশলা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৬৭ জন। সেই সঙ্গে ৮৪ লক্ষ ১ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy