দলেরই কর্মীদের ‘অন্যায়’ কাজের বিরুদ্ধে সরব হলেন তৃণমূূলের নেতা! শুধু তাই নয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যাতে আইন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার জন্য পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিলেন তিনি।
মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয় দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। ঘটনায় দুই পক্ষের মোট ৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। উত্তেজনা থাকায় কার্যালয়ে বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। ওই ঘটনায় সুতির তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জঙ্গিপুর লোকসভা এলাকার সভাপতি ইমানি বিশ্বাস কংগ্রেসকে দায়ি করলেও সুতি-২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মাসুদ রানা সাফ বলেন, “দলীয় কর্মীরা যেভাবে এ দিন কংগ্রেস কার্যালয় দখল করতে গিয়েছে তা অন্যায়। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস তা কখনই সমর্থন করে না।” তিনি আরও বলেন, “দলের যেসব নেতারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তাঁরা ঠিক করেননি। তাঁদের জন্য বদনাম হচ্ছে দলের। এভাবে কার্যালয় জবর দখলের চেষ্টা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকর। পুলিশের উচিত অভিযুক্তদের তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে আইন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়া।”
১৯৯০ সালে সুতি থানার অরঙ্গাবাদের নেতাজি মোড়ে দলীয় কার্যালয়টি তৈরি করেছিলেন কংগ্রসের কিছু নেতা। সেই থেকে সুতি-২ ব্লক কংগ্রেস কার্যালয় হিসেবে কার্যালয়টি ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে কংগ্রেসের দাবি। অভিযোগ, এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ সবে কার্যালয়টি খুলেছেন কংগ্রেসের এক কর্মী হঠাত্ স্থানীয় তৃণমূল নেতা ওবাইদুর রহমানের নেতৃত্বে জনা ত্রিশের একটি দল কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। কার্যালয়ের ভেতরে দলীয় পতাকা ও ব্যানার টাঙিয়ে দেন। কার্যালয়ে রাখা চেয়ারে বসে স্লোগানও দিতে শুরু করেন। অন্য দিকে, কার্যালয় দখলের খবর পেয়ে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে জনা চল্লিশ দলীয় সমর্থক রে রে করে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি গুরুতর বুঝে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বাইরে স্লোগান দিতে শুরু করেন তৃণমূলের নেতারা। কংগ্রেসের সমর্থকরা কার্যালয়ে পৌঁছুতেই শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের বচসা। মুহূর্তে বচসা গড়ায় মারামারিতে। লাঠি, বাঁশ নিয়ে চড়াও হন একে অন্যের উপর। সংঘর্ষে কংগ্রেসের ৩ জন ও তৃণমূলের ২ জন নেতা আহত হন। আহতদের মধ্যে যুব কংগ্রেসের সুতি-২ ব্লক সভাপতি ইকবাল চৌধুরী ও ছাত্র পরিষদের ব্লক সভাপতি মতিউর রহমানও রয়েছেন। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের লাগানো তালা ভেঙে দলীয় কার্যালয়টি দখল নেয় কংগ্রেস।
খবর পেয়ে কার্যালয়ে পৌঁছান কংগ্রেসের বিধায়ক ও মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি আখরুজ্জামান। তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেসের সমর্থকরা সুতি থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় সাত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। দুপুরে তৃণমূলের অভিযুক্ত নেতাদের গ্রেফতারের দাবিতে বের হয় প্রতিবাদ মিছিল। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘ ২৪ বছর অরঙ্গাবাদ নেতাজি মোড়ের ওই দলীয় কার্যালয়টি ব্লক কংগ্রেস দখলে রয়েছে। নিয়মিত ভাবে দলের কর্মীরা এখানে আসেন। ক্ষমতার জোর দেখিয়ে সেই কার্যালয় দখল করতে চাইছেন তৃণমূলের নেতারা। অফিসে ঢুকে দলের পতাকা, পোষ্টার, ফেস্টুন নষ্ট করেছেন তাঁরা।” অভিযুক্ত তৃণমুল নেতা ওবাইদুর রহমান বলেন, “আমি যখন যুব কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি ছিলাম তখন বহু ঘামরক্ত ঝরিয়ে কার্যালয়টি তৈরি করেছিলাম। দল কোনও পয়সা দেয়নি। সকলেই জানে এই কার্যালয়টি আমার অফিস হিসেবে। কংগ্রেস ছেড়ে আমরা এখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। এখন কার্যালয়টি দখল করতে চাইলে বাধা দিচ্ছে কংগ্রেস।” কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জামানের বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করলে পথে নামবে কংগ্রেস কর্মীরা। দরকার পড়লে ঘেরাও করা হবে সুতি থানা।”
তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “একসময় কংগ্রেস করতাম। দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে এই কার্যালয় গড়েছিলাম আমরাই। আজ কংগ্রেসের উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতারা সে কার্যালয় জোর করে দখলে রাখতে চাইলে আমরা তা মানব কেন?” পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “দু’দলের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পরিস্থিতি সামলাতে ওই এলাকায় পুলিশ রয়েছে।”